মোদি বিরোধিতাই পথ! বিরাট সিদ্ধান্ত নিল ‘ইন্ডিয়া’ জোট

INDIA BLOC: তবে শেষপর্যন্ত সরকার গড়ার পথে যাবে না জোট ইন্ডিয়া, তেমনটাই মনে করা হচ্ছে খাড়্গের বক্তব্য থেকে। বরং বিজেপি সরকারের নীতি, নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে বিরোধিতার পথেই থাকতে চায় তাঁরা।

লোকসভা ভোট শেষ। ইতিমধ্যে হয়ে গিয়েছে ফলপ্রকাশও। প্রত্যাশার চেয়ে ভালো ফল করলেও বিজেপিকে টপকে যেতে পারেনি জোট ইন্ডিয়া। কার্যত এনডিএ জোটের থেকে ৬০টি আসনে পিছিয়ে রয়েছে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়া জোট। এই লোকসভা ভোটে বিজেপি-বিরোধী এই জোট পেয়েছে ২৩২টি আসন। যেখানে একাই ২৪০টি আসন পেয়েছে বিজেপি। শরিক দলগুলিকে মিলিয়ে জোট এনডিএ পেয়েছে মোট ২৯২টি আসন। ফলে একরকম ভাবে সরকার যে গড়ছেই মোদিবাহিনী, তা পরিষ্কার। তবু তার মধ্যেই কোথাও একটু হলেও আশা রয়ে গিয়েছে জোট ইন্ডিয়ার জন্য। ভোটের ফলপ্রকাশের পরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে সেই সম্ভাবনার কথাই উস্কে দিয়েছিলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধি। বুধবার জোটের বৈঠকেই এ নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে বলেই জানিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। তবে সত্যিই কি তেমন আশাপ্রদ কিছু ঘটল ইন্ডিয়া জোটের বৈঠকে?

একদিক থেকে দেখতে গেলে মোদির তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় আসা একরকম ঠিক। ইতিমধ্যেই রাষ্ট্রপতির কাছে গিয়ে দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পদত্যাগও দিয়ে এসেছেন নরেন্দ্র মোদি। রাষ্ট্রপতি মোদিকে অনুরোধ করেছেন, আগামী কয়েকদিন দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলানোর জন্য। আগামী শনিবার নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করবেন মোদি। তবে তার আগেই কি বদলে যেতে পারে পাশা? উল্টে পাল্টে যেতে পারে ক্ষমতার সমীকরণ? অন্তত সেই আশা নিয়ে বুধবারই ফের বৈঠকে বসেছে ইন্ডিয়া জোটের নেতারা। বোঝাই যাচ্ছে, খুবই গুরুত্বপূর্ণ সময় এটা? ভোট কম হওয়া সত্ত্বেও ক্ষমতায় বসতে গেলে ইন্ডিয়া জোটের চাই সংখ্যা গরিষ্ঠতা। তার জন্য জোট তাকিয়ে রয়েছে বিহারে নীতীশ কুমারের জেডিইউ ও অন্ধ্রপ্রদেশের চন্দ্রবাবু নাইডু সরকারের দিকে। চোখ রয়েছে ওড়িশার নবীন পট্টনায়েকের দিকেও। বিহারে ১২টি আসন জিতেছে নীতিশের জনতা দল ইউনাইটেড, অন্যদিকে অন্ধ্রপ্রদেশে ১৬টি আসন রয়েছে তেলেগু দেশম পার্টির দখলে। ফলে এনডিএ থেকে গোটা চল্লিশ-পঞ্চাশেক সাংসদকে জোগার করতে পারলেই ইন্ডিয়া জোট চলে আসতে পারে সংখ্যাগরিষ্ঠতায়।

আরও পড়ুন: মোদিই প্রধানমন্ত্রী হবেন? নাকি, শেষ মুহূর্তে মোক্ষম চাল দেবেন নীতীশ-নাইডু?

কিন্তু সেই অঙ্ক যে সহজ হবে না জোট ইন্ডিয়ার জন্য, তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল আগেই। কারণ এনডিএ-র শরিকেরা সর্বসম্মত ভাবে নরেন্দ্র মোদিকেই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মেনেছেন। ইতিমধ্যেই এ নিয়ে এনডিএ শরিকদের সঙ্গে বৈঠক সেরেছে বিজেপি। কোনও রকম ঝুঁকি না নিয়ে নাইডু এবং নীতীশকে কার্যত বগলদাবা করে রেখেছে গেরুয়া শিবির। এনডিএ-র একটি সূত্রে খবর, সরকার গঠনে নীতীশ এবং চন্দ্রবাবু দু’জনেই লিখিত ভাবে সমর্থন দিয়েছেন বিজেপিকে। এনডিএ বৈঠকে সরকার গঠন নিয়ে মোদীকে নীতীশ বলেন, ‘‘তাড়াতাড়ি করুন! সরকার গঠনে দেরি করবেন না।’’ শেষ পর্যন্ত সেই সম্ভাবনাই কি সত্যি হল তাহলে।

 

এর মধ্যেই বুধবার বিকেলে ইন্ডিয়া জোটের বৈঠক বসেছিল দিল্লিতে মল্লিকার্জুন খাড়্গের বাড়িতে। বৈঠকে ছিলেন ডিএমকে নেতা এমকে স্ট্যালিন, সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদব, আপ নেতা সঞ্জয় সিং, আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব, বামনেতা সীতারাম ইয়েচুরি, ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী চম্পাই সোরেন-সহ বহু শরিক নেতাই। সেই বৈঠকে যোগ দিতে পারেননি বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার প্রতিনিধি হিসেবে দিল্লি উড়ে গিয়েছেন তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কম্যান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ইন্ডিয়া জোটের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা নিয়ে মুখ না খুলে তিনি জানান, আসলে কিংমেকার জনতা। লোকসভা ভোটে বাংলা কার্যত কেঁপেছে সবুজ ঝড়ে। তৃণমূলের ২৯টি আসনের মুখে বিজেপি ঝুলিতে পুরতে পেরেছে মাত্র ১২টি ভোট। ভোটপূর্ব সময়ে বহু বিষয়েই ইন্ডিয়া জোটের সঙ্গে মতানৈক্যে আসতে পারেননি মমতা। এমনকী গোল বেঁধেছিল আসন সমঝোতা নিয়েও। তবে ভোটের ফলপ্রকাশের পরে মমতার কথাবার্তা শুনে অনেকেই মনে করেছে, এই পরিস্থিতিতে জোটের সঙ্গেই থাকতে চান তৃণমূলনেত্রীও। তাই এতদিন জোটের বৈঠকে আমন্ত্রণ এড়ালেও এবার প্রতিনিধি পাঠাতে ভুল করেননি তৃণমূল সুপ্রিমো। শোনা গিয়েছিল, সাংসদ জোগারের ব্যাপারে জোট ইন্ডিয়া নাকি ভরসা রেখেছিল প্রবীণ এনসিপি নেতা শরদ পওয়ারের উপরেই। বিভিন্ন শরিক দলের সঙ্গে ফোনাফুনি থেকে যোগাযোগের কাজে বড় ভূমিকা নিয়েছেন তিনিই।

আরও পড়ুন: আসন ভাগ করতে চাননি রাজ্যে, এবার কি ইন্ডিয়া জোটের মাথা হতে চাইবেন মমতা?

এ দিনের বৈঠকও বসেছিল কংগ্রেস সভাপতি তথা জোটের প্রধানমন্ত্রীর মুখ মল্লিকার্জুন খাড়্গের বাড়িতেই। এদিন বৈঠকে জয়ের জন্য তৃণমূল নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদবকে উঠে দাঁড়িয়ে অভিনন্দন জানান বাকি শরিক নেতারা। এদিন বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সামনে মুখোমুখি হয়ে খাড়্গে জানান, জনগণের ইচ্ছাকে আসলে নস্যাৎ করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ মোদি। সব ঠিক থাকলে সরকার গঠনের ব্যপারে নীতীশ কুমার ও চন্দ্রশেখর নাইডুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে কিনা, তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা ছিল আজকের বৈঠকে। যদিও সাংবাদিক বৈঠকে সরাসরি সে প্রসঙ্গ এড়িয়ে খাড়্গে ভারতের জনগণকে ধন্যবাদ জানান, বিজেপির ঘৃণার রাজনীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য। তবে শেষপর্যন্ত সরকার গড়ার পথে যাবে না জোট ইন্ডিয়া, তেমনটাই মনে করা হচ্ছে খাড়্গের বক্তব্য থেকে। বরং বিজেপি সরকারের নীতি, নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে বিরোধিতার পথেই থাকতে চায় তাঁরা। তেমনটাই ইন্ডিয়া জোটের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত বলে জানান খাড়্গে।

এখন প্রশ্ন উঠেছে, এমন তীরের কাছাকাছি পৌঁছে কেন এমন সিদ্ধান্ত নিল জোট ইন্ডিয়া? নীতিশ বা নাইডু যেভাবে মোদিকে সমর্থন জানিয়েছেন, তাতে তাদের ইন্ডিয়ামুখী করা কঠিন হবে বলেই কি মনে করছে এই বিজেপি বিরোধী জোট? ভারতের রাজনীতিতে পল্টুরাম হিসেবে খ্যাত নীতীশকে কেন কাছে টানতে পারল না কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন জোট। একদিক থেকে দেখতে গেলে নীতিগত দিক থেকে বিজেপির সঙ্গে যথেষ্ট দূরত্ব রয়েছে নাইডুর। সেই পার্থক্যকে উস্কে তুলে কি মসনদে বসার পাকাপোক্ত রাস্তা করতে পারত না জোট ইন্ডিয়া! নাকি সেই অবস্থাটা তৈরি করার জায়গাতেই পৌঁছতে পারল না তাঁরা। ফলে খোলা রইল হাতে শুধু বিরোধিতার পথই।

More Articles