'চুম্বন তো আগেও বহুবার, এবার ঠোঁটে মিলেছে আশ্রয়'
Kiss and Revolution: শুধুমাত্র প্রথা ভাঙতে চাওয়াও নয়। সমস্ত হিংসা, সমস্ত ক্লীব অসুয়ার বিরুদ্ধেও এক প্রতিবাদ এই চুম্বন।
পৃথিবীর সবচেয়ে বড়, সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের শেষটা হয়েছিল একটা চুম্বনে। ১৯৪৫ সালের ১৪ অগস্ট। আমেরিকার কাছে আত্মসমর্পণ করল অক্ষশক্তির শরিক জাপান। ৬ বছরের বহু ধ্বংস, বহু মৃত্যুর উপর ঘোষণা হল শান্তি। আনন্দে, স্বস্তিতে উল্লাস করে উঠলেন মানুষ। রাস্তায় নামল ঢল। ঠিক সে সময়ে কয়েকটা মুহূর্ত, প্রকাশ্যে মিলে গিয়েছিল দুটো ঠোঁট। সম্পূর্ণ অচেনা দু'টো ঠোঁট, যাদের আগে কখনও দেখা হয়নি, ভবিষ্যতেও হবে না। অথচ বিশ্বযুদ্ধের শেষ, যুদ্ধশান্তির স্মারক হয়ে রইল ওই মুহুরতকথা। পরের পর প্রজন্ম দেখল তাকে, চিনল তাকে। তার সামনে দাঁড়িয়ে রচনা হল আরও অনেক প্রেম, বিপ্লব। নিউ ইয়র্কের টাইমস স্কোয়ার সেই 'নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ' (আনকন্ডিশনাল সারেন্ডার) বুকে নিয়ে দাঁড়িয়ে রইল আজীবন। 'ভালোবাসা শত যুদ্ধেও জেতা যায় না', অথচ একটা যুদ্ধশান্তি ঘটিয়ে ফেলল প্রকাশ্যে চুমু।
আরও পড়ুন: পর্দায় প্রথম চুম্বনদৃশ্য, অভিনয়ে মুগ্ধ হয়েছিলেন নেহরু || আজীবন বিতর্কিত ছিলেন দেবিকা রানি
চুমু শব্দটা ভাতডাল এবং বিরিয়ানির মতোই জরুরি, অথচ বিতর্কিত। সকলেই খান, অথচ প্রকাশ্যে দেখলেই 'জাত গেল জাত গেল বলে' রে রে করে ওঠে তথাকথিত নীতিবাগিশ সমাজ। প্রকাশ্যে প্রস্রাব গর্ববর্ধক, অথচ চুমু! এমা ছিঃ ছিঃ। অমনি পর্দা ছেড়ে বেরিয়ে আসেন 'মেরা হিন্দুস্থান' বলে চোখ কপালে তোলা অমরীশ পুরী ছাপ পিতৃহৃদয়। হাতে উঠে আসে লাঠিসোঁটা। মরাল পুলিশিংয়ের নামে বসে খাপ। ফলে যেটা দাঁড়ায়, তা হল 'আশিক বনায়া আপনে'-রা হেডফোনে সুন্দর, প্রকাশ্যে 'বাবা তারকনাথ'। তবু প্রতিটা ইতিহাসেই তো 'রাজা তোর কাপড় কোথায়' বলতে পারা দু-একটা শিশু থাকে, যারা মারের মুখের উপর দিয়ে ফুল ফোটাতে চায়, ফোটাতে ভালোবাসে। তাই সমস্ত হিপোক্রেসির মুখের ঝামা ঘষে দিয়ে তারা বলে উঠতে পারে 'ঠোঁটে ঠোঁট রেখে ব্যারিকেড করো...'
ট্রেন এগোতে থাকে। স্টেশন ছাড়িয়ে যায়। অমরীশ পুরীর হাত ছাড়িয়ে একটা হাত শেষপর্যন্ত ছুঁয়েই ফেলে আরেকটা হাত। ধরে ফেলে ট্রেনটা। যে ট্রেনটা একদিন ছুঁয়ে এসেছে নিউইয়র্কের টাইমস স্কোয়ার, যে ট্রেনটা দেখেছে কীভাবে চর্যাপদের সময়ে পদকর্তা যোগিনীর চুম্বনভিক্ষা করে বলে ওঠেন-
"যৌইণি তঁই বিণু খনহি ন জীবমি।
তো মুহ চুম্বি কমলরস পীবমি।।"
যে ট্রেন শুনেছে শ্রীকৃষ্ণ-রাধিকার কথকথা, গোবিন্দদাসের পদ-
"ঘন ঘন চুম্বনে লুবধ বব্ধ দুহুঁ
বিগলিত স্বেদ-উদ-বিন্দু।"
যে ট্রেন পড়েছে কালিদাস-বঙ্কিম-রবীন্দ্রনাথ, শক্তি-সুনীল-জয়, শুনেছে কবীর সুমনের গান। অথচ সেই ট্রেনই যখন সিনেমার পর্দা ছেড়ে মেট্রোপলিটন 'আম-জিন্দেগি'-তে ঢুকে পড়ে, তখনই মুশকিলে পড়ে সংস্কারপ্রিয় নগরজীবন। মেট্রোর ভিতরে কিংবা লেকের ধারে যুগলদের কাছাকাছি আসতে দেখে মারমুখী হয়ে ওঠে আধুনিক সভ্য সমাজ। অপসংস্কৃতি বলে ঝাঁপিয়ে পড়েন। খাপ বসে টিভিতে-রেডিওতে। এ কোনও নতুন কথা নয়। প্লেটোনিক প্রেমের ধারণা তখন অল্প অল্প করে খোলস ভেঙে প্লেটে নেমে এসেছে। শুভ হোক বা অশুভ, ছাদনাতলায় প্রথম দেখা আর নয়, বরং পার্কের বেঞ্চে, বাসের ধারের জানলার সিট থেকে ছুঁড়ে দেওয়া তাকানোতেই চারি চক্ষুর মিলন সারতে শিখে গিয়েছে তৎকালীন নবপ্রজন্ম। সত্তরের দশকের সিনেমায় আমরা দেখেছি, কীভাবে সেসব দোর্দণ্ডপ্রতাপ পিতৃস্থানীয়দের ভয়ে বাঘে-ছাগলে এক পার্কে বসে প্রেম সারত। নিন্দে তখনও হত, এখনও হয়। কলঙ্ক তখনও হত, হয় এখনও।
কিছু দিন আগেই আমরা দেখেছি, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে জারি হয়েছে নয়া ফতোয়া। কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিয়েছেন, কলেজ ক্যাম্পাসে প্রেম নয়, রাজনীতি নয়, রাজনৈতিক পোস্টার নয়। যৌবনে পা দেওয়া পড়ুয়াটি যদি ভুল করেও প্রেমিক বা প্রেমিকাটিকে একটি চুমুও খেয়েছেন, তাহলেই হয়েছে। এমনকী বন্ধুত্বপূর্ণ আলিঙ্গন, সেও নৈব চ। অমনি সেই ছবিখানা ক্যামেরাবন্দি করে রাখা থাকবে কর্তৃপক্ষের কাছে। যা যাবে অভিভাবকের কাছে। অতঃপর যা হওয়ার, তাই হবে। অপমান, লোকনিন্দে ইত্যাদি প্রভৃতি! কারণ কর্পোরেট চলছে। কারণ কর্তৃপক্ষ জানেন,বেঁধে বেঁধে থাকা কঞ্চির বান্ডিলকে ভাঙা শক্ত। তাই প্রেম-প্রণয়-বন্ধুত্বের ভিতকে যতটা টলানো যায়, প্রতিবাদের স্বরকে চাপা দেওয়া ততই সহজ সেখানে। সহজ স্বৈরাচারকে আসন পেতে দেওয়ার কাজও। দেশভাগের ক্ষেত্রে ব্রিটিশ-শক্তি যে স্ট্র্যাটেজি ব্যবহার করেছিল, এ-ও অনেকটা তেমনই। যুগ যুগ ধরে চুমুকে ট্যাবু হিসেবে ব্যবহারের যত চেষ্টা করা হয়েছে, ততই প্রতিবাদের ভাষা হয়ে উঠেছে চুমু। সে ব্যবহারিক জীবনে হোক বা রূপোলি পর্দায়।
একটা সময় সিনেমার চুম্বনদৃশ্যে কোথা থেকে যেন হাজির হয়ে যেত সূর্যমুখী ফুল। তাদের পরাগমিলন দেখেই চক্ষু সার্থক হত দর্শকদের। অথচ এই চুমু, তা যে কালকের কোনও ব্যাপার, তা তো নয়। গবেষণা বলছে,রোম্যান্টিক বা যৌনগন্ধী চুম্বনের প্রথম নিদর্শন মেলে ব্রোঞ্জ যুগে। খ্রিষ্টপূর্ব ১৫০০ সালে দক্ষিণ এশিয়া (মূলত ভারত) থেকে একটি পুঁথি উদ্ধার হয়, যেখানে চুমুর উল্লেখ রয়েছে। খ্রিষ্টের জন্মের আড়াই হাজার বছর আগে প্রাচীন মিশর ও মেসোপটেমিয়া সভ্যতাতেও ওষ্ঠচুম্বন বা 'লিপকিস'-এর নজির ছিল। যৌনতা বা শারীরিক নৈকট্যের ক্ষেত্রে চুমু আদতে হরমোন ক্ষরণে সাহায্য করত। ঠিক এখনও যেমনটা করে। কিন্তু চুমু তো শুধু যৌনতা বা শারীরিক নৈকট্যের ইঙ্গিতবাহীটুকু নয়। যুগে যুগে এই চুমুর ভূমিকা সমাজে, সাহিত্যে, জীবনে ব্যাপক এবং সর্বব্যাপী।
কেবল প্রেম বা প্রণয়ের নয়, চুমু যে বিষাক্ত ও বিদ্বেষেরও হতে পারে, তা প্রমাণ করে দিয়েছিলেন জুডাস। যিশুকে হত্যার আগে তিনি তাঁর শরীরে এঁকে দিয়েছিলেন বিশ্বাসঘাতকতার চুম্বনচিহ্ন। বাইবেলের একটি অধ্যায়ে রয়েছে সেই গল্পও। রবীন্দ্রনাথ 'শেষের কবিতা' উপন্যাাসের একটি জায়গায় বলেছিলেন, ভালোবাসার উল্টো পিঠে না-ভালোবাসা নয়, বাস করে এক অন্ধ বিদ্বেষ। জুডাসের ক্ষেত্রেও তা-ই ঘটেছিল সম্ভবত। আর কে না জানে, ভালোবাসা এবং বিদ্বেষে যে সবকিছুই 'ফেয়ার', সবই সম্ভব। সাহিত্য পাঠককে যত না চুমুর কাছাকাছি নিয়ে গিয়েছে, তার চেয়েও বেশি প্রভাবশালী ছিল সিনেমা। কিন্তু রূপোলি পর্দায় দুম করে সূর্যমুখী ফুল সরিয়ে দর্শককে সোজা বেডরুমে নিয়ে যাওয়ার পথটা সহজ ছিল না মোটেই। পর্দায় প্রথম বার চুম্বন দৃশ্য রেকর্ড করা হয়েছিল ১৮৯৬ সালে। তার শুরুটা অবশ্য হয়েছিসল একটা মঞ্চ নাটকের মাধ্যমে। সেখানে অভিনয় করেছিলেন মে আরউইন ও জন সি রাইস নামে দুই শিল্পী। এরপর নিউ জার্সির টমাস এডিসনের স্টুডিওতে ওই দৃশ্যের চলচ্চিত্রায়ণ হয়।
পাশ্চাত্য যে জিনিসকে যত সহজে গ্রহণ করল, ভারতের ক্ষেত্রে তা মেনে নিতে সময় লাগল আরও কয়েক যুগ। ভিক্টোরিয়ান মরালিটিকে যতই তুলোধনা করা হোক না কেন, সনাতন ভারত বাপু আরও কঠিন ঠাঁই। সতীদাহ বন্ধ করতে যেখানে যুগ কেটে গিয়েছে, সেখানে পথেঘাটে চুম্বনকে 'সামান্য ঘটনা' করে তোলাটা সহজ কাজ ছিল না মোটেই। ইংরেজ যতই শোষন করুক না কেন, তাদের হাত ধরেই অনেক কিছুই এসেছিল ভারতে। সাহেব-মেমদের দেখে দেখেই হোক বা পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রভাবেই হোক, পাশ্চাত্য সংস্কৃতির অনেক কিছুকেই তলিয়ে দেখতে শিখেছিল তৎকালীন প্রজন্ম। সূর্যমুখী ফুল সরিয়ে ভারতীয় সিনেমা প্রথমবার পর্দায় চুম্বন দেখেছিল দেবিকা রানি ও হিমাংশু রায়ের হাত ধরে। ১৯৩৩ সালের 'কর্ম' ছবির হাত ধরে প্রথম বার প্রথা ভেঙে সাবালক হল ভারতীয় সিনেমা। শুধু প্রথম নয়, সেটা ছিল দীর্ঘতম চুম্বনদৃশ্যগুলিরও একটি। এরপর আস্তে আস্তে গুটি ভেঙে বেরিয়ে এসেছে প্রজাপতি। সাবালকত্বের সীমা পার করে বলিউড পেয়েছে ইমরান হাসমি নামক চুম্বনসিদ্ধ নায়ককে। নিন্দুকেরা অনেক সময় 'ইমরান কিসমি' বলেও গঞ্জনা করতে ছাড়েননি যাঁকে। 'ফায়ার' ছবিতে দুই নারীর চুম্বনদৃশ্য দেখিয়ে কার্যতই সিনেমার ইতিহাসে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিলেন দীপা নায়ার। বলাই বাহুল্য, এ সমস্ত চুমুর মধ্যে শুধু প্রেম আর প্যাশনের যাতায়াতই নয়, কোথাও অন্তঃসলিলা রয়ে গিয়েছে প্রতিবাদের স্বর। প্রথা ভাঙতে চাওয়ার সীমাহীন প্রয়াস।
তবে শুধু চোরাগোপ্তা পথেই নয়। চুমু-কে হাতিয়ার করে প্রতিবাদ, আন্দোলনও কম হয়নি এ দেশে। খুব বেশিদিন আগের কথা নয়। বৃষ্টি মাথায় নিয়ে রাস্তায় নেমেছিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। স্লোগান উঠেছিল, "আমার শরীর আমার মন, দূর হটো রাজশাসন।" এক তরুণ-তরুণীর চুমু খাওয়াকে কেন্দ্র করে অশান্তি তৈরি হয়েছিল কোচিতে। ঠিক সে সময়েই আবার পোশাক নিয়ে আপত্তি থাকায় কলকাতার স্টার থিয়েটারে ঢুকতে দেওয়া হয় না এক তরুণীকে। ততদিনে সাড়া ফেলে দিয়েছে 'হোক কলরব' আন্দোলন। এই দুই ঘটনার প্রতিবাদে সেই আন্দোলনের স্রোতে এসে মিশেছিল নয়া ঢেউ। প্রকাশ্যে চুমুর অধিকার, ব্যক্তিগত রুচির পোশাক পরার অধিকারের মতো একাধিক দাবিতে চার মাথার মোড়ে একে অপরকে চুম্বন করেছিলেন পড়ুয়ারা। ছড়িয়ে পড়েছিল হোক 'চুম্বন আন্দোলন'। কেউ বলেছিলেন অশ্লীলতা, কেউ পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। সম্প্রতি পোশাকের স্বাধীনতা, নীতিপুলিশির বিরুদ্ধে ফেটে পড়েছিল ইরানের মেয়েরা। সেই আন্দোলনের পাশে দাঁড়িয়েছিল গোটা দেশ। ইতিহাস জুড়ে প্রথা ভাঙার এই বিরোধী স্বর বারবার জেগেছে। বারবার এসেছে ঝড়। সে ঝড়ে আরও একটু সাবালক হয়েছে সভ্যতা।
কিন্তু চুমু তো শুধুমাত্র একধরনের বিপ্লবই নয়। শুধুমাত্র প্রথা ভাঙতে চাওয়াও নয়। সমস্ত হিংসা, সমস্ত ক্লীব অসুয়ার বিরুদ্ধেও এক প্রতিবাদ এই চুম্বন। চারদিকে যখন রাজনীতি, ধর্ম, জাতি সমস্ত কিছুকে কেন্দ্র করে বিভাজন, হিংসার উন্মত্ততা, সেখানে কি একধরনের রেহাইও নয় এই চুমু! যা অন্যরকমের ধর্মের কথা বলে। যা মানুষের মাঝখানে বিভেদের দেওয়াল নয়, বরং এক ভরসার উঠোন গড়ে দেয়। যে ধর্মটা আসলে লালনের, যে ধর্মটা আসলে কবীরের কিংবা চৈতন্যদেবের। যে ধর্ম বলতে শেখায়, 'চুম্বন তো আগেও বহুবার এবার ঠোঁটে মিলছে আশ্রয়।'
আরও পড়ুন: জোর করে ঠোঁটে চুমু খান নায়ক, বাধ্য হতে হয় নগ্ন চরিত্রে, কানন দেবী এক অজানা ‘বনফুল’
ভারতীয় সংবিধান কিন্তু প্রকাশ্যে চুম্বন বা আলিঙ্গন অপরাধ হিসেবে গণ্য করেনি কোনওকালেই। বারবার সুপ্রিম কোর্টও জানিয়েছে সেই কথা। তবে সুপ্রিম কোর্টের কথাও কি আর সবসময় খাপ খেয়েছে তথাকথিত খাপ কিংবা রক্ষণশীল সমাজে। সমাজের লাল চোখের সামনে খোদ রবীন্দ্রনাথকে বাদ দিতে হয়েছিল মহেন্দ্রর সঙ্গে বিনোদিনীর চুম্বনদৃশ্য। এমনকী তার অনেক পরেও রবীন্দ্রনাথের চিঠি চেলে বিশ্বভারতী ফেলে দিল স্ত্রী মৃণালিনীর উদ্দেশে তাঁর লেখা 'হামি' এবং 'চুমু' শব্দ দু'টি। তবে সবকিছুর মতোই একদিন 'পাষানকারা' ভাঙে। কপিরাইট ওঠে। সেই সব শব্দরা ফিরে আসে যথাস্থানে। রক্ষণশীলতার ঘেরাটোপ ডিঙিয়ে আরও একটু সাবালক হয় সিনেমা। যেখানে বিবাহপূর্ববর্তী যৌনতার কথা বলতে আর লজ্জা লাগে না। বরং বুক ঠুকে বলা যায় ব্যক্তিগত কামনা-বাসনা বা যৌনতার চাহিদাটুকু। আর চুমু শোনায় কোনও এক বিপ্লবের কথা, কোনও এক যুদ্ধশান্তির কথাও। টাইমস স্কোয়ার জুড়ে দাঁড়িয়ে থাকা নাবিক জর্জ আর নার্স গ্রেটা বলে যায়, এক অন্য পৃথিবীর গল্প। যেখানে সমস্ত রাগ-অভিমান এমনকী যুদ্ধের পাহাড়ও ভেঙে দেয় চুমু। শেখায় 'আরও বেঁধে বেঁধে' থাকতে। 'ঠোঁটে ঠোঁট রেখে' ব্যারিকেড করতে শেখায় প্রেম, বিপ্লব আর বন্ধুত্বকে। অতিমারি পরবর্তী জীবন যা প্রায় ভুলিয়ে ছে়ড়েছে আমাদের।