গ্রেফতারি রুখতে কী করছেন সুখেন্দু? কুণালের বার্তাই বা কী?
RG Kar Incident: জানা গিয়েছে, ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৩৫/(১) ধারায় নোটিস পাঠানো হয়েছে সাংসদকে। অভিযোগ, সুখেন্দুশেখর রায় পুলিশের নামে ভুয়ো খবর রটিয়েছেন।
আরজি করে চিকিৎককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার প্রতিবাদ করছে একাধিক রাজনৈতিক, অরাজনৈতিক সংগঠন, নাগরিক সমাজ। কিন্তু এবার বাংলার শাসক দলের অন্দরেই অসন্তোষ মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ ও তৃণমূল সাংসদ সুখেন্দু্শেখর রায়ের দ্বৈরথ নিয়ে শুরু হয়েছে জোর চর্চা। তৃণমূল সাংসদের দাবি আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ এবং কলকাতা পুলিশ সুপার বিনীত গোয়েলকে জিজ্ঞাসাবাদ করুক সিবিআই। সুখেন্দুশেখরের সেই পোস্ট ঘিরে এখন তুমুল চর্চা বঙ্গ রাজনীতিতে। তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ সাংসদের পোস্টের রীতিমত সমালোচনা করেছেন। তিনি সুখেন্দুশেখরের বক্তব্যকে 'দুর্ভাগ্যজনক' বলে উল্লেখ করেন। সেই পোস্টের তেরো ঘণ্টার মধ্যেই সাংসদকে তলব করা হল লালবাজারে।
রবিবার বিকেল ৪টে নাগাদ সাংসদ সুখেন্দুশেখরকে লালবাজারে ডাকা হয়েছিল। আরজি কর কাণ্ড নিয়ে একটি পোস্ট করেছিলেন তিনি। সেখান থেকেই ঘটনার সূত্রপাত। পোস্টে তিনি কলকাতা পুলিশের কমিশনার বিনীত গোয়েল ও আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে সিবিআই হেফাজতে নেওয়ার দাবি করেন। কুণাল ঘোষও পাল্টা জবাব দিয়েছেন। শনিবার রাতে এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করে সুখেন্দুশেখর রায় লেখেন, 'সিবিআইকে স্বচ্ছভাবে তদন্ত করতে হবে। কে বা কারা আত্মহত্যা বলে চাউর করতে চেয়েছিল? তা জানাতে আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ এবং পুলিশের কমিশনারকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা উচিত। কেন সেমিনার রুমের কাছে ঘরের দেওয়াল ভেঙে ফেলা হল? কাদের প্রশ্রয়ে 'রায়' এত প্রভাবশালী? কেন ঘটনার ৩ দিন পর স্নিফার ডগ ব্যবহার করা হল? এমন একশোটা প্রশ্ন উঠে আসছে। এর উত্তর দিতে হবে ওদের।' স্বাভাবিক ভাবেই তৃণমূল সাংসদের মন্তব্যকে হাতিয়ার করেছে বিরোধী দল বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, বিজেপির সাংসদ শমীক ভট্টাচার্যরা।
আরও পড়ুন: আরজিকর কাণ্ড: কেন স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা গ্রহণ সুপ্রিম কোর্টের?
এর পর রীতিমত সমালোচনায় নামেন কুণাল ঘোষও। তাঁর দাবি, কলকাতা পুলিশ এই ঘটনায় উপযুক্ত তদন্ত করেছে। কোনো খামতি রাখেনি। পুলিশ কমিশনারও দায়িত্ব নিয়ে সচেতনতার সাথে কাজ করেছেন। ফলত সুখেন্দুশেখর রায় একজন সিনিয়র নেতা, তাঁর থেকে এমন কথা আসা করা যায় না। কুণাল ঘোষ তাঁর এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন, "আমিও আরজি কর কাণ্ডের বিচার চাই। কিন্তু কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে গ্রেফতারির দাবির তীব্র বিরোধিতা করছি। এই ঘটনায় তিনি সাধ্যমতো কাজ করার চেষ্টা করেছেন। আমার সিনিয়র নেতার থেকে এই ধরনের একটি পোস্ট দুর্ভাগ্যজনক।'
I also demand justice in RGKar case.
— Kunal Ghosh (@KunalGhoshAgain) August 18, 2024
But strongly oppose this demand regarding CP. After got information He has tried his best. Personally CP was doing his job and investigation was in a positive focus. This kind of post is unfortunate, that too from my senior leader. https://t.co/quLVsUEXCd
ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৩৫/(১) ধারায় নোটিস পাঠানো হয়েছে সাংসদকে। অভিযোগ, সুখেন্দুশেখর রায় পুলিশের নামে ভুয়ো খবর রটিয়েছেন। তাঁর পোস্টে উল্লেখিত তথ্যগুলি নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে লালাবাজার। মূলত সাংসদের পোস্টে উল্লেখিত স্নিফার ডগ নিয়ে মন্তব্য ভিত্তিহীন বলা হয়েছে। কলকাতা পুলিশের দাবি, ৯ এবং ১২ অগস্ট আরজি করের ঘটনাস্থলে স্নিফার ডগ নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সুখেন্দু্শেখর রায় প্রথম থেকেই আরজি কর কাণ্ডের বিরোধিতা করেছেন। প্রতিবাদ জানাতে গত ১৪ অগস্ট দক্ষিণ কলকাতার যোধপুর পার্কে ধর্নাতেও বসেছিলেন। মহিলাদের 'রাত দখল' কর্মসূচিকেও সমর্থন জানিয়েছিলেন। সেখানে যোগদান করার কথাও বলেন। পরে যদিও দলের নির্দেশে সেই কর্মসূচিতে যোগদান করা সম্ভব হয়নি।
আরও পড়ুন:যৌনাঙ্গে ক্ষত, শরীরের ২৪ জায়গায় চোট! নারকীয় অত্যাচারের প্রমাণ ময়নাতদন্তের রিপোর্টে
জুনিয়র ডাক্তারেরাও কলকাতা পুলিশের তদন্ত প্রক্রিয়ায় পক্ষপাত রয়েছে বলে দাবি তুলেছেন। তদন্ত প্রক্রিয়ায় সন্তুষ্ট নয় বলেই এখনও জরুরি বিভাগ বাদে কর্মবিরতিতে রয়েছেন তাঁরা। হাইকোর্ট তাঁদের কাজে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। তার পর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও হাত জোর করে চিকিৎসকদের কাজে ফিরতে অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু তাঁরা তদন্তের দাবিতে অনড়। এই মুহূর্তেই ঘটনাস্থল লাগোয়া ঘর সংস্কার করতে হচ্ছে কেন? আর এই নির্দেশই বা দিয়েছিল কে? বুধবার মহিলাদের 'রাত দখল' কর্মসূচি সময়ই কেন হামলা হল আরজি করে? এই নিয়ে তো প্রশ্ন উঠছিলই। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, কলকাতা পুলিশের তদন্ত প্রায় ৯০% হয়েই গিয়েছিল, কিন্তু আরজি করের ডাক্তারি পড়ুয়ারা কলকাতা পুলিশের উপরে ভরসা রাখতে পারেননি। এই পরিস্থিতিতে তৃণমূলের যে এখন ঘরে-বাইরে টানাপড়েন, তা একরকম বলাই যায়। পাশাপাশি প্রশ্ন উঠে গিয়েছে কলকাতা পুলিশের তদন্তের সারবত্তা নিয়েও।