আদানিকে পথে বসাচ্ছে 'নষ্টের গোড়া' বামপন্থীরাই! মোদি-ঘনিষ্ঠের পাশে দাঁড়িয়ে যা বলছে আরএসএস
Leftist Lobby aganist Adani says RSS : আদানির আসলে কোনও দোষই নেই! বামপন্থীরাই একের পর এক প্রচার চালিয়ে তাঁর ইমেজ ভেঙে দিচ্ছে!
তিনি দেশের প্রভাবশালী শিল্পপতি। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ‘কাছের মানুষ’। এই কয়েকদিন আগেও বিশ্বের তৃতীয় ধনী ব্যক্তি ছিলেন। কিন্তু মাত্র কয়েকটা দিনেই চোখের পলকে কয়েক লক্ষ টাকা ক্ষতির সামনে পড়লেন গৌতম আদানি এবং তাঁর আদানি গোষ্ঠী। কেন্দ্রীয় বাজেট পেশের পরও আদানির শেয়ার হু হু করে কমছে। আর যাবতীয় গণ্ডগোলের মূলে একটি রিপোর্ট, একটি গবেষণা। হিন্ডেনবার্গ – এই নামটি এখন আদানি গ্রুপের স্বপ্নে আসলেও আশ্চর্য হওয়ার নয়। এই একটি রিপোর্টে একেবারে মুখ থুবড়ে পড়েছে আদানির বাজার। এমন পরিস্থিতিতে আদানির হয়ে ব্যাট ধরল রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ বা আরএসএস (RSS)। তাদের মতে, আদানির আসলে কোনও দোষই নেই! বামপন্থীরাই একের পর এক প্রচার চালিয়ে তাঁর ইমেজ ভেঙে দিচ্ছে!
জানুয়ারির শেষের দিক। গোটা দেশ প্রজাতন্ত্র দিবস উদযাপনে মত্ত। তার মধ্যেই বড়সড় বোমা ফাটাল হিন্ডেনবার্গ সংস্থাটি। আমেরিকার এই গবেষণামূলক সংস্থার কাজই হল, শেয়ার বাজার ঘেঁটে যাবতীয় হিসেবনিকেশ খতিয়ে দেখা। কোথাও কোনও বিষয় নিয়ে সামান্য সন্দেহ হলেই কোমর বেঁধে নেমে পড়া। গবেষণা, তথ্য ঘেঁটে সেই বিষয়ের গভীরে ঢোকা। যদি শেয়ার বাজার সংক্রান্ত বিষয়ে কোনও কারচুপি থাকে, তবে সেটি উপযুক্ত প্রমাণ দিয়ে পেশ করেন তারা। এমনটাই দাবি হিন্ডেনবার্গ কর্তৃপক্ষের। এমন নয় যে, আদানি গোষ্ঠীই তাদের বরাবরের টার্গেট ছিল। এর আগেও বেশকিছু কোম্পানির ‘পর্দাফাঁস’ করেছে হিন্ডেনবার্গ।
আরও পড়ুন : আদানির পতনে আসলে লাভ হিন্ডেনবার্গের! কেন পশ্চিমী গবেষণাই আজও মান্যতা পায় দেশে?
তবে ২০২৩-এর শুরুতেই আদানির বিরুদ্ধে জালিয়াতি, শেয়ারের দাম নিয়ে কারচুপির অভিযোগ আনে তারা। সঙ্গে এও বলে, কর্পোরেট ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জালিয়াতি নাকি করেছেন গৌতম আদানি! সঙ্গে সঙ্গে এই রিপোর্টের প্রভাব দেখা যায় বাজারে। সেইদিন থেকে আজ অবধি আদানির যাবতীয় সংস্থার শেয়ার হু হু করে পড়ছে। বিশ্বের তৃতীয় ধনী ব্যক্তির স্থানেও আর নেই গৌতম আদানি। হিন্ডেনবার্গের রিপোর্টের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই নিজেদের মতামত জানিয়েছে আদানি গোষ্ঠী। ৪০০ পাতারও বেশি সেই মতামতে আদানিদের বক্তব্য, এটা ‘ভারতের ওপর আঘাত হানার চেষ্টা’। দেশাত্মবোধের ধোঁয়া তুলেই কি বৈতরণী পারের চেষ্টা মোদি ঘনিষ্ঠের? প্রশ্ন ভারতের বিরোধীদের।
তার মধ্যেই আসরে নামল আরএসএস। তাদের মুখপত্রে দাবি করা হয়েছে, ‘হিন্ডেনবার্গের এই রিপোর্ট আসলে ভারতের ওপরই আঘাত। অবশ্য এটাই প্রথম নয়। গৌতম আদানির বিরুদ্ধে প্রায় ৬-৭ বছর ধরেই ‘পরিকল্পনা করে আঘাত হানা হচ্ছে’। আর এর জন্য দায়ী নাকি বামপন্থীরা! আরএসএসের বক্তব্য, বামফ্রন্টের একটা লবি নাকি বারবার গৌতম আদানির বিরুদ্ধে বিষোদগার করে। ভারত তো বটেই, অস্ট্রেলিয়া থেকেও আদানির বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপপ্রচার করা হয়। তারই নতুন সংযোজন এই হিন্ডেনবার্গ রিপোর্ট।
খেয়াল করে দেখলে দেখা যাবে, গৌতম আদানি ও আদানি গোষ্ঠীর বক্তব্যের সঙ্গে আরএসএসের বক্তব্য খুব একটা আলাদা নয়। মূল কেন্দ্রবিন্দু একটাই, ‘ভারতের ওপর আক্রমণ’। সেইসঙ্গে নতুন সংযোজন এই ‘বামপন্থা তত্ত্ব’। গৌতম আদানি এবং তার আদানি গোষ্ঠী যদি জালিয়াতি ও কারচুপি না করেন, তাহলে তো কোনও কথাই নেই। হিন্ডেনবার্গের বিরুদ্ধে মামলা করতেই পারেন। কিন্তু দেশাত্মবোধের মন্ত্র তোলা, তারপর বামপন্থাকে দোষ দেওয়া কেন? এখানে আসল তথ্যপ্রমাণ কোথায়? হিন্ডেনবার্গের প্রমাণের বিরুদ্ধে পাল্টা, যুক্তিনির্ভর প্রমাণই তো হবে আসল হাতিয়ার। এই কথা তো সেখানে কাজ করবে না!
আরও পড়ুন : আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বড় জালিয়াতির অভিযোগ হিন্ডেনবার্গের, কীভাবে করা হয় এই রিসার্চ?
এদিকে আদানি গোষ্ঠীর শেয়ারে বিনিয়োগ করেছে এলআইসি, এসবিআইয়ের মতো সংস্থা। যেখানে সিংহভাগ টাকাই আসে ভারতের সাধারণ মানুষের পকেট থেকে। হঠাৎ কেন আদানির শেয়ারে বিনিয়োগ করল এই সংস্থাগুলি? আজ যখন আদানিদের শেয়ার হু হু করে পড়ছে, তখন এই সংস্থাগুলির শেয়ারও পড়তির দিকে। আর এলআইসি, এসবিআইয়ের মতো সংস্থার শেয়ার নামতে শুরু করলে কাদের গচ্ছিত টাকা বিপদের মুখে পড়বে? ভারতের কয়েক লাখ সাধারণ মানুষের রক্ত-ঘাম এক করা টাকা। আর সেখানে একবার দেশাত্মবোধ, আরেকবার বামপন্থাকে সামনে এনে আদতে কী প্রমাণ করতে চাইছে আদানি, আরএসএস?
সেইসঙ্গে আরও একটা তথ্য। হিন্ডেনবার্গ সংস্থাটি একটি আমেরিকান কোম্পানি। আমেরিকার সঙ্গে বামপন্থার লড়াইয়ের ইতিহাস নিশ্চয়ই বলে দিতে হবে না নতুন করে। ভারতের বামপন্থা সংগঠনগুলিও আমেরিকার বিভিন্ন সংস্থা, তাদের নীতির বিরোধিতা করে। তাহলে এখানে হঠাৎ করে আমেরিকা-বামপন্থা সংযোগই বা আনা হচ্ছে কেন? আরএসএসের এমন মন্তব্য রাজনীতির দিক থেকে তাৎপর্যপূর্ণ তো বটেই। এদিকে কেন্দ্রের মোদি সরকারও আদানির এই বিষয়টি নিয়ে খুব একটা কথা বলতে নারাজ। তবে সত্যিটা কী? সাধারণ মানুষের টাকা কি ফের একবার ভেসে যাবে এভাবেই এই আশঙ্কাই এখন দেশজুড়ে।