মানুষ কম, বিড়াল বেশি! রাস্তা, বাড়ি, অফিস সর্বত্রই এক ছবি, কোথায় রয়েছে এমন আজব দেশ?

Cyprus Cats : উৎসব অনুষ্ঠান অথবা রেস্তোরাঁ সর্বত্রই বিড়ালের ছড়াছড়ি, কথা রয়েছে ‘ম্যাও’দের দেশ?

“ছিল রুমাল, হয়ে গেল একটা বিড়াল”, সুকুমার রায়ের লেখা ‘হযবরল’ নাটকের এই বিখ্যাত সংলাপটি আজও বাঙালির কাছে একটা অন্যরকম অনুরণন তৈরি করে। গল্পে অবশ্য গরুকেও গেছে তোলা খুব সহজ, কিন্তু বাস্তবে পশু পাখিদের নিয়ে আজিব কিছু শুনলে খানিক অবাক হতেই হয়। ধরা যাক আপনি অঘোরে ঘুমাচ্ছেন, অ্যালার্মের বদলে ঘুম ভাঙলো একটা ‘মিয়াও’ শব্দে। তারপর সকালের শুরু থেকে রাতে ঘুমোতে যাওয়া পর্যন্ত সর্বক্ষণই কানে বাজছে এই একই শব্দ, ভাবুন তো একবার কেমন হবে বিষয়টি? না, এটা কোনও রেকর্ডারে বাজানো বিড়ালের ডাকের কথা বলা হচ্ছে না। এই বিশ্বেই রয়েছে এমন একটি দেশ যেখানে সব কাজই করতে হয় বিড়ালকে সাক্ষী রেখেই। শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি, সেই দেশে মানুষের থেকেও সংখ্যায় বেশি রয়েছে বিড়াল। জানেন কোথায় রয়েছে এমন আজব দেশ?

রাস্তাঘাটে চলতে ফিরতে বিড়াল দর্শন অবশ্য এ দেশেও নতুন কিছু নয়। বিড়ালকে পোষ্য হিসেবেও পালন করেন অনেকেই। আবার সংস্কারের দোহাইও যে খুব কম কিছু রয়েছে এই প্রাণীটিকে নিয়ে তাও নয়। বিড়াল রাস্তা কেটে দিলে অমঙ্গল অথবা বিড়াল কাঁদলে অমঙ্গল, এরকম বেশ কিছু কু সংস্কার শোনা যায় প্রায়শই। তবে কিনা অনুষ্ঠান বাড়ি অথবা কোনও রেস্তোরাঁয় বিড়াল ঠিক পাশের দিতেই বসে রয়েছে এমনটা হোক তো পিলে চমকে যাবেই। কিন্তু পূর্ব ভূমধ্যসাগরের একটি দেশ, নাম সাইপ্রাস। সেখানে রাস্তাঘাট, বাড়ি, উৎসব অনুষ্ঠান সবেতেই লক্ষ্য করা যায় অসংখ্য বিড়ালের উপস্থিতি।

আরও পড়ুন - গায়ের রং কালো, যে কারণে অশুভ মনে করা হয় এই ধরনের বিড়ালকে

রাস্তায় অথবা পাবলিক প্লেসে তো বটেই এমনকি অফিস কাছারিতে নাকি বিড়ালের ডাকেই অভ্যস্ত সকলে। এই ধরুন মন দিয়ে কাজ করছেন, কোনও খাবার খাচ্ছেন, অথবা খোশ গল্পে মশগুল, অমনি দুম করে কয়েক বিড়াল এসে জুটল, ওদেরকে বাদ দিয়ে কিছুই করার জো নেই সে দেশে। এটাই ওখানকার স্বাভাবিক দৃশ্য।

সাইপ্রাস দেশে বসবাসকারী মানুষের মোট জনসংখ্যা ১২ লাখের বেশি বলা হয়। আর সেখানে এই দেশে বসবাসকারী বিড়ালের সংখ্যা কত জানেন? শুনলে অবাক হবেন নিশ্চিত। সংখ্যাটা প্রায় ১.৫ মিলিয়ন।অর্থাৎ এই দেশে মানুষের চেয়ে প্রায় ১ থেকে ২ লক্ষ বেশি বিড়াল বসবাস করে। এমনকী এখানকার বাসিন্দাদের বিড়ালের উপস্থিতিতে কোনও সমস্যাও নেই। আসলে অভ্যাস এমনই জিনিস!

কিন্তু এই এত এত বিড়াল কোথা থেকে এল? কথিত আছে, রোমান রানী সেন্ট হেলেনা যখন মিশর ছেড়ে সাইপ্রাসে এসেছিলেন, তাঁর সঙ্গে করেই নাকি নিয়ে এসেছিলেন শত শত বিড়াল। তিনিই চেয়েছিলেন এই দেশে বিড়ালের আলাদা একটি বসতি গড়ে তুলতে।

এছাড়া প্রত্নতত্ত্ব নথি ঘেঁটে জানা যায়, খ্রিস্টপূর্ব ৭৫০০ অব্দে পাওয়া একটি কবরে মানুষের সঙ্গে নাকি একটু বিড়ালকেও কবর দেওয়া হয়েছিল, অর্থাৎ বিড়াল নিয়ে এই রেওয়াজ তার চল ছিল অনেক আগেই। ২০০৭ সালে আবার আরও একটি তত্ত্ব জানা যায়, যেখানে বলা হয়, বাড়িতে পোকামাকড় দূর করতে বিড়াল রাখার রেওয়াজ ছিল। যাই হোক, সব মিলিয়ে সাইপ্রাস দেশটি বর্তমানে বিড়ালদের স্বর্গরাজ্য। পর্যটক টানতেও ওস্তাদ এই বিড়ালরাই।

More Articles