মোদির জয় নিশ্চিত, প্রমাণ করতে মিথ্যে অঙ্ক কষছেন প্রশান্ত কিশোর
Prashant Kishore Poll Prediction: পিকে জোর দিচ্ছেন যে পূর্ব ও দক্ষিণ ভারতে বিজেপির আসন বাড়বে। বাস্তব বলছে, পশ্চিমবাংলায় বিজেপির আসন আগের চেয়ে কমবে
৪ জুন কী হতে চলেছে? উত্তর প্রশান্ত কিশোরের জানা। তবে প্রশান্ত কিশোর যেভাবে জানেন, যেভাবে ব্যাখ্যা করেন তার সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন আছে বৈকি! নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকার যে ফের ক্ষমতায় আসতে চলেছে তা বেশ কয়েক মাস ধরেই বলে চলেছেন ভোটকুশলী পিকে। তিনি বলছেন, বিজেপি এবং এনডিএ সরকারই ফিরবে। তবে তারা কত আসন পাবে তা নিয়ে ভিন্নমত হতেই পারে। প্রশান্ত কিশোরের দাবি, যে আসন গতবার পেয়েছে এনডিএ, অর্থাৎ ৩৫৩ টি আসন, তেমনই বা তার চেয়ে বেশি আসনই পাবে এবার। কেন এমন ভবিষ্যদ্বাণী? কতটা সত্য তাঁর দাবি? প্রশান্ত কিশোরের ফাঁপা কথায় যুক্তির অভাব দেখা যাচ্ছে বেশ।
পিকে বলছেন মোদির বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের তেমন ক্ষোভ নেই। বিপুল সংখ্যক মানুষ মোদির প্রতি বীতশ্রদ্ধ বা বিপুল সংখ্যক মানুষ চাইছেন তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিতে এমন নয়। অথচ বাস্তবে নরেন্দ্র মোদির জনপ্রিয়তা একাংশের মানুষের মধ্যে ধীরে ধীরে কমছে। সোশ্যাল মিডিয়াতেও নরেন্দ্র মোদির গ্রহণযোগ্যতা ঘাটতর দিকে। পিকে বলছেন, বিজেপির প্রতিদ্বন্দ্বীকে নিয়েও সাধারণ মানুষের তেমন আশা ভরসা নেই। রাহুল গান্ধির অনেক অনুগামী আছেন বটে কিন্তু রাহুল গান্ধি ক্ষমতায় এলে পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে বা মানুষ আগের চেয়ে ভালো থাকবে এমনটা ভোটাররা বিশ্বাস করতে পারছেন না। বাস্তব বলছে, ভারত জোড়ো যাত্রার পর রাহুল গান্ধি মানুষের অনেক কাছাকাছি এসেছেন। দীর্ঘ সময় নিয়ে নিজের রাজনীতি চর্চার বাঁক তিনি বদলাচ্ছেন যার প্রভাব পড়ছে।
আরও পড়ুন- মোদির কথা শুনতে চাইছে না মানুষ! কেন সোশ্যাল মিডিয়াতে হু হু করে কমছে মোদির ‘ভিউ’?
এনডিটিভির এক সাক্ষাৎকারে প্রশান্ত কিশোর বলছেন, পশ্চিম ও উত্তর ভারতে এনডিএর মোটামুটি ৩১৫ টি আসন রয়েছে। ২০১৪ থেকেই ভারতের এই অংশগুলি বিজেপির গড়। সেখানে এবারও ৯০% আসন ধরে রাখবে এনডিএ, দাবি পিকের। অন্যদিকে, পূর্ব ও দক্ষিণ ভারতের বিহার, বাংলা, অসম, ওড়িশা, তামিলনাড়ু, তেলঙ্গানা, কেরলে মিলিয়ে যে ২২৫ টা আসন, তাতে তেমন ভালো ফল ছিল না বিজেপির। এখনও এই অঞ্চল থেকে ৫০ টির কম আসন রয়েছে তাদের। প্রশান্ত বলছেন, পশ্চিম ও উত্তর ভারতে কোনও আসন হারাবে না বিজেপি। উল্টে পূর্বে ও দক্ষিণে আসন বাড়বে তাদের।
বাস্তব কিন্তু বলছে অন্য কথা। রাজস্থান, হরিয়ানা, দিল্লি, হিমাচলপ্রদেশের মতো উত্তর ভারতের এই রাজ্যগুলিতে বিজেপির আসন কমবে। গতবার সাতটি লোকসভা আসনের সাতটিই জিতেছিল বিজেপি। দিল্লিতে কেজরিওয়ালের গ্রেফতারির পর বিজেপির হাতে ২ টো আসনও থাকে কিনা তা নিয়ে সংশয় আছে। হরিয়ানার ১০ টি আসন পেয়েছিল বিজেপি। এবার অগ্নিবীর এবং কৃষক বিক্ষোভের জন্য অন্তত ৫ টা আসন খোয়াতে হবে তাদের। দশটি আসনই হাতে আসবে এমন নিশ্চয়তা নেই। রাজস্থান এবং হিমাচলেও আসন হারাবে বিজেপি অগ্নিবীর প্রকল্প, উন্নাও, হামিরপুর রেল প্রকল্প ইস্যুগুলি এখানে ভোটনির্ধারক।
অন্যদিকে পঞ্জাবেও বিশেষ লাভ করতে পারবে না বিজেপি। রইল পড়ে বজেপির অন্যতম ঘাঁটি উত্তরপ্রদেশ। গতবার ৬২ টি আসন পেয়েছিল বিজেপি। হয় সেই ৬২ টিই থাকবে, না হয় তার থেকে কমবে। খপদ প্রশান্ত কিশোরই আগে বলেছিলেন, রামের নামে ভোট টানা যাবে না।
আরও পড়ুন- মুখোশের আড়ালে প্রশান্ত কিশোরের আসল মুখ, উন্মোচন করলেন করণ থাপার
পিকে জোর দিচ্ছেন যে পূর্ব ও দক্ষিণ ভারতে বিজেপির আসন বাড়বে। বাস্তব বলছে, পশ্চিমবাংলায় বিজেপির আসন আগের চেয়ে কমবে কারণ এবার সিপিএমের ভোট বাড়ছে। এমনকী বিহারেও আসন হারাবে বিজেপি। বিজেপি বিহারে আগে পেয়েছিল ১৭ টি আসন, জেডিইউ পেয়েছিল ১৬ টি, এলজিপি ৬ আর কংগ্রেস ১টি। বিহারে বিজেপির ভোট কমার বেশ কয়েকটি ফ্যাক্টরের মধ্যে রয়েছে তেজস্বী যাদবের জনপ্রিয়তা এবং কাস্ট সেনসাস বা জাতিশুমারি। সেই সমীক্ষাই বলছে, বিহারের ৩০ শতাংশের বেশি ভোট আরজেডির হাতে আছে। বিহারের এই জাতিশুমারি অনুযায়ী, রাজ্যের জনসংখ্যার ৩৬ শতাংশ ইবিসি বা অর্থনৈতিক অনগ্রসর শ্রেণি। দলিত আছেন ১৪.৬ শতাংশ; যাদব ভোটার ১৪.৩ শতাংশ এবং মুসলিম আছেন ১৭ শতাংশ৷ অর্থাৎ আরজেডির হাতে মোটের উপর ৩০ শতাংশের বেশি ভোট আছে। এছাড়া সুশীল মোদি অসুস্থ, যার ফল ভুগবে বিজেপি। বিজেপির গ্রহণযোগ্যতাও বিহারে কমেছে। বাম ও কংগ্রেসের ভালো ভোট টানার সম্ভাবনা রয়েছে।
দক্ষিণ ভারতের দিকে তাকালে কর্ণাটকে এবার আসন কমবে বিজেপির। কেরল এখনও বিজেপির নাগালের বাইরে। তবে হ্যাঁ, তামিলনাড়ুতে ভোট শতাংশ বাড়তে পারে গেরুয়া দলের। তবে তা আসন বাড়াবে কিনা বলা যাচ্ছে না। বাড়লেও তাতে বিশেষ হেরফের হবে না।
প্রশান্ত কিশোর বলছেন, কোনও ভোট বিশ্লেষকই নাকি বলছেন না যে বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতার কম পাবে। কিন্তু টানা বিজেপির সঙ্কট নিয়ে কথা বলে চলেছেন পরাকলা প্রভাকর। তিনি বারবার বিজেপির সংখ্যাগরিষ্ঠতার চেয়েও কম আসন লাভের কথা বলছেন। তাই পিকে সবটাই সত্য বলছেন এমন নয়। তাঁর সমস্ত ভবিষ্যদ্বাণীই ধ্রুব সত্য এমনটাও না। তবে প্রশান্ত কিশোর একটি বিষয় তুলে ধরেছেন যা বিজেপির দুর্দান্ত কৌশল, তা স্বীকার করতেই হয়। পিকে বলছেন, যদি বিজেপি ২৭৩ টি আসন পায়, তাহলে এমন তো নয় বিজেপি সরকার গড়বে না? নিয়ম অনুযায়ী যে ২৭২-এর বেশি আসন পাবে সেই সরকার গড়বে। কিন্তু যেহেতু মোদি খোদ ৩৭০ আর ৪০০ পার বলেছেন, তাই সে নিয়েই চর্চা চলছে। মোদি সুচারু কৌশলে টার্গেট ২৭২ থেকে সরিয়ে ৩৭০ করে দিয়েছেন। আসল কথা তো হচ্ছে ২৭২-এর বেশি পেলেই কাজের কাজ হবে। বিজেপি চর্চার কেন্দ্রটা ২৭২ থেকে ৩৭০ করে দিয়েছে যাতে অনেকেই বলছেন বিজেপি ৩৭০ আসন পাবে না। বাস্তবে ৩২০ পেলেও তো সরকার মোদিই গড়বেন।