'মানুষ ভিখিরি নয়'! তমলুকে ভোটপ্রচারে যে বেফাঁস কথা বললেন প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ

Lok Sabha Election 2024: এবার তৃণমূলের সেই প্রকল্পকে বিঁধেই মমতা সরকারের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন ভাবে আক্রমণ শানালেন তমলুকের বিজেপি প্রার্থী অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। বললেন, এই জানোয়াররা এটা জানে না যে মানুষ ভিখিরি নয়।”

এতদিন ধরে আইনরক্ষকের ভূমিকায় ছিলেন তিনি। সেই বিচারপতির পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে সম্প্রতি সংসদীয় রাজনীতিতে আস্থা দেখিয়েছেন তিনি। এই লোকসভা ভোটে বিজেপির হয়ে তমলুকের প্রার্থী হয়েছেন প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। এবার ভোটপ্রচারে নেমে বেফাঁস হতে দেখা গেল প্রাক্তন বিচারপতি। শালীনতার উর্ধ্বে উঠে বিঁধলেন মমতার সরকারকে। যা নিয়ে শুরু হল দেদার বিতর্ক।

বিচারপতি হিসেবে তিনি হয়ে উঠেছিলেন চাকরিপ্রার্থীদের 'মসিহা'। তেমন চিহ্নই রাখবেন রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও, তেমন প্রত্যাশাই তাঁর কাছে ছিল। তবে বিচারপতির আসন ছাড়ার পর তিনি যে পুরোদস্তুর রাজনীতিক হয়ে উঠেছেন, তা মালুম পড়ছে ভালোই। ইতিমধ্যেই জোরকদমে প্রচারের কাজেও নেমে পড়েছেন প্রাক্তন বিচারপতি। এর আগেও বিচারপতি হিসেবে তৃণমূল সরকারকে দিনরাত বিঁধেছেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। সেই পদ থেকেই ইস্তফা দিলেও তৃণমূলের বিরুদ্ধে সেই এক অবস্থানেই রয়ে গেলেন তিনি। তবে সে সময় আইনের শৃঙ্খল, বিচারপতি হিসেবে তার এক্তিয়ার- সেসব এসে পড়ত মাঝখানে। তবে সেসব বাধা আর নেই। বিজেপি নেতা হিসেবে তাই তমলুকের মাটিতে প্রচারে নেমেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে খড়্গহস্ত হলেন অভিজিৎ। তৃণমূলের একাধিক প্রকল্প নিয়ে দাগলেন তোপ।

ভোটমুখী বাজেটে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার-সহ একাধিক প্রকল্পে অর্থের পরিমাণ বাড়িয়েছে রাজ্য সরকার। এপ্রিল থেকেই সেই বর্ধিত অঙ্কে ভাতা পাচ্ছেন রাজ্যের মানুষ। এক ধাক্কায় পাঁচশো থেকে দ্বিগুণ হয়েছে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্প থেকে প্রাপ্য অর্থের পরিমাণ। তফসিলি জাতি-উপজাতির আওতায় বসবাসকারীদের জন্য সেই ভাতা বেড়ে হয়েছে বারোশো। স্বাভাবিক ভাবে তাতে খুশি রাজ্যের মানুষ। ভোটের আগে তৃণমূল সরকারের এই ঘোষণা যে ভালো মতোই কাজে এসেছে, তার প্রমাণ মিলেছে গ্রামেগঞ্জে।

আরও পড়ুন: অভিজিৎ, দেবাংশু বনাম সায়ন, তমলুকে কতটা কঠিন হতে চলেছে বামেদের লড়াই?

এবার তৃণমূলের সেই প্রকল্পকে বিঁধেই মমতা সরকারের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন ভাবে আক্রমণ শানালেন তমলুকের বিজেপি প্রার্থী অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। বললেন, এই জানোয়াররা এটা জানে না যে মানুষ ভিখিরি নয়।” তমলুকের শহীদ মাতঙ্গিনী গ্রাম পঞ্চায়েতের এমএসকে স্কুল মাঠে প্রচার করতে এসে অভিজিতের বক্তব্য, "যদি মহিলারা এগিয়ে না আসেন তাহলে চোর,ছ্যাচ্চর দুর্বৃত্তরাই তৃণমূল রাজনীতির আঙিনা দখল করবে। অনেকদিন হলো সব চুরি করছে, কোটি কোটি টাকা কামাচ্ছে। কলকাতায় গেলে দেখবেন হরিশ্ মুখার্জি রোডে যেখানে হাজরা রোডে মিশেছে ডানদিকে তাকালে দেখবেন একটা রাজপ্রাসাদ, এই রাজপ্রাসাদের মালিক একটি দুর্বৃত্ত, মমতা ব্যানার্জির ঘনিষ্ঠ।"

সোমবার তমলুকের মাটিতে দাঁড়িয়ে প্রাক্তন বিচারপতি আরও বলেন, “আমি গ্রামের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার সময় দেখছিলাম ছোট ছোট কিছু বাড়ি হয়েছে। ইটের গাঁথনি হয়েছে, বাইরে প্লাস্টার হয়নি। কবে হবে কেউ জানে না। মানুষের এই শ্রমের দ্বারা উপার্জিত অর্থে ছোট্ট বাড়ি করা, একটা সংসার তৈরি করা, এসবের ওই চোরেরা কোনও মূল্য দেয় না”। এর পরেই ওঠে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রসঙ্গ। সে নিয়ে বলতে গিয়ে অভিজিৎবাবু বলে বসেন, “শুধু বলে হাজার টাকা দিচ্ছি লক্ষ্মীর ভাণ্ডারে। জানোয়াররা এটা জানে না মানুষ ভিখিরি নয়। যে টাকা তোমরা দিচ্ছ লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের নামে তা তোমাদের পৈতৃক সম্পত্তি নয়। এটা সরকারের উপার্জন করা করের টাকা যা সারা ভারত থেকে এসেছে। এটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের টাকা নয়।”

আরও পড়ুন:বাহুবলে ব্যারাকপুর দখল করতে পারবেন তৃণমূল-বিজেপি ডেইলি প্যাসেঞ্জার অর্জুন সিং?

স্বাভাবিক ভাবেই অভিজিৎবাবুর এই মন্তব্য ঘিরে উত্তাল রাজ্যরাজনীতি। অভিজিৎবাবুকে বিঁধে তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, “এতদিন যিনি মুখোশ পরে থাকতেন, তাঁর কিসের মতো মুখটা দেখা যাচ্ছে সেটা বাংলার মানুষ বলতে পারবেন।” রাজ্যবিজেপির বরিষ্ঠ নেতা দিলীপ ঘোষ প্রায়শই আলটপকা মন্তব্য করে বিতর্কে জড়ান। লোকসভা ভোটের আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কুকথা বলে বেশ বিপাকে পড়েছিলেন দিলীপ। এবার কি সেই তালিকায় যুক্ত হতে চলেছে নয়া নাম। যে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে ঘিরে বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থী ও বিজেপির শীর্ষনেতৃত্বের বিরাট আশা-ভরসা, সেই মুখ কি রাখতে পারবেন প্রাক্তন বিচারপতি! এই ভোট-বাজারে সেই প্রশ্ন তো উঠছেই।

More Articles