২০২৪ ভোটে শিকে ছিঁড়বে? কেন শেষমুহূর্তে পা পিছলে যাচ্ছে কংগ্রেসের?

Lok Sabha Election 2024: আসন সমঝোতা জোটে স্বস্তির বার্তা দিলেও, আসন্ন লোকসভা ভোটে তার ফল দেখা যাবে! রাহুলের এই তৎপরতা কি শেষপর্যন্ত মাঠেই মারা যাবে? গোটা দেশে ব্যাপক প্রচারের পরেও কত আসন রাখতে পারবে কংগ্রেস?

লোকসভা ভোট দোরগোড়ায়। সাত বছর পর রাহুল গান্ধি-অখিলেশ যাদব ফের একসঙ্গে। আসন সমঝোতা নিয়ে তিক্ততা চলছিল সমাজবাদী পার্টি এবং কংগ্রেসের মধ্যে। অবশেষে, উত্তরপ্রদেশে ৮০টির মধ্যে কংগ্রেসকে ১৭টি আসন ছাড়তে রাজি হয়েছে সমাজবাদী পার্টি। 'ভারত জোড়া ন্যায় যাত্রায়' অখিলেশের যোগদান বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। বাংলায় এই যাত্রা চলাকালীন বারবার আমন্ত্রণ সত্ত্বেও সাড়া মেলেনি তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তরফে। বরং একই দিনে মালদহে পাল্টা মিছিল করেছেন মমতা। কিন্তু উত্তরপ্রদেশে অখিলেশকে পাশে পেয়েছেন রাহুল। আসন সমঝোতা জোটে স্বস্তির বার্তা দিলেও, আসন্ন লোকসভা ভোটে তার ফল দেখা যাবে! রাহুলের এই তৎপরতা কি শেষপর্যন্ত মাঠেই মারা যাবে? গোটা দেশে ব্যাপক প্রচারের পরেও কত আসন রাখতে পারবে কংগ্রেস?

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের দাবি, রাহুল গান্ধির নেতৃত্বে এই পদযাত্রা রাহুলের নিজস্ব ব্র্যান্ড তৈরির প্রচেষ্টা। কেউ কেউ মনে করছে, না স্রেফ নিজস্বতা নয়, দলের শ্রীবৃদ্ধিতেও সাহায্য করবে এই যাত্রা। কারণ, যাত্রা চলাকালীন রাহুল-সহ কংগ্রেসের নেতারা নানাবিধ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছেন। সাধারণ মানুষের কথা শুনছেন, প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন। যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির থেকে আশাও করা যায় না। তাঁর বিরুদ্ধে বড় অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর, কোনও সাংবাদিককেই তিনি এখনও সাক্ষাৎকার দেননি। একাংশের অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী স্ক্রিপ্ট ছাড়া জনসমক্ষে কথা বলেন না। রাহুল কিন্তু তার ঠিক বিপরীত মেরুতে দাঁড়িয়ে।

আরও পড়ুন: জোট নয়, প্রতিপক্ষ কংগ্রেস! রাহুলের ন্যায় যাত্রার দিনেই জনসভা কেন মমতার?

রাহুল গান্ধির নেতৃত্বে প্রথমবার 'ভারত জোড়ো যাত্রা' হওয়ার পর যেসব রাজ্যে ভোট হয়েছে, সেখানে কংগ্রেস বিজেপির কড়া প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল। তবে, সেই লড়াকু কংগ্রেসকেই যেন অগোছালো দেখাচ্ছে 'ইন্ডিয়া জোট'-এর প্রশ্নে। একাধিকবার জোট যে ভাঙনের মুখে পড়েছে, প্রতিবার যেন সেই ভাঙনের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে কংগ্রেসই। কংগ্রেসেরই অভ্যন্তরীণ নেতৃত্বরা কার্যত মেনেই নিচ্ছেন, পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়াচ্ছে আসন ভাগাভাগি। বুঝতে হবে, বিজেপি বসে নেই। প্রতিপক্ষের প্রতিটি চাল লক্ষ্য করছে ৩৭০টি আসন টার্গেট করা গেরুয়া শিবির। বিরোধী ২৮টি দলের জোট 'ইন্ডিয়া' যখন নিজেদের মধ্যে কথাচালাচালি করছে, বিজেপিও সেই মতো দলের রণনীতিতে বদল আনছে। চাপ সৃষ্টি করছে জোটের উপর।

বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট এনডিএ- তে যোগদানই তার উদাহরণ। এর সঙ্গে রয়েছে ইডি-সিবিআই-এর দেদার ব্যবহার। ঝাড়খন্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন জানুয়ারিতে গ্রেফতার হয়েছেন। একের পর এক নোটিস ধরানো হচ্ছে অ-বিজেপি রাজ্যের নেতাদের।

মে মাসে হওয়া কর্ণাটকের ভোটে জয়ী হয়েছিল কংগ্রেস। নভেম্বরে পাঁচ রাজ্য মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, তেলেঙ্গানা, ছত্তিশগঢ় এবং মিজোরাম বিধানসভা ভোটের ফল কী হতে পারে সেই নিয়ে জনমত সমীক্ষা করে, অনুমান করা হয়েছিল এই ৫টি রাজ্যের মধ্যে চারটিতেই জয়ী হবে কংগ্রেস। কিন্তু আসলে ঘটল উল্টোটাই। কংগ্রেস শুধুমাত্র তেলেঙ্গানাতেই জয় লাভ করে। মধ্যপ্রদেশে সমীক্ষায় দেখা গিয়েছিল, ২% ভোটে এগিয়ে ছিল কংগ্রেস। কিন্তু ভোটের ফলে দেখা গেল, ৮ শতাংশ ভোটে হেরে গিয়েছে তারা।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, রাজনৈতিক সমীকরণে বদল আসতে পারে। চার রাজ্যের জনমত সমীক্ষার ফল বাস্তবায়িত হতেও পারে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে। আর তেমনটা হলে ১৩৮ বছরের দলটি ভারতীয় রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতেও চলে আসতে পারে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী দিগ্বিজয় সিংয়ের মতো কয়েক জন নেতা দাবি করেছেন, ভোট-কারচুপি করে আসন্ন লোকসভা ভোটের জনমত সমীক্ষাগুলিতে আকাশ ছোঁয়া ফল পাচ্ছে বিজেপি। অভিযোগ, ইভিএম এবং জাল ভোটের কাগজপত্রেও চক্রান্ত চালায় গেরুয়া শিবির । বিজেপির আবার অভিযোগ, এই তথ্যের এখনও কোনও জোরালো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কংগ্রেস পক্ষের সমালোচকরা হেরে গেলেই ভোটের কারচুপি নিয়ে অভিযোগ করেন বলেও তোপ দেগেছেন তারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কংগ্রেস নেতা সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা-তে দাবি করেন, আদিবাসী ভোটারদের প্রধান্য দিয়ে ভোট-প্রচারে জোর দেওয়ার কথা বলেছিলেন তিনি। তবে তাঁর কথায় সেসময় মান্যতা দেয়নি দল। ২০১৮ সালের বিধানসভা নির্বাচনে দেখা যায়, যে ক'টি আসনে কংগ্রেস জয় পেয়েছিল তা চলে যায় বিজেপির কাছে। কংগ্রেস নেতা দাবি করেন , বিজেপি কিন্তু সেসময় আদিবাসী সম্প্রদায়গুলিকে লক্ষ্য করেই ভোটপ্রচার করেছিল। আর তার ফল মেলে হাতেনাতে। সেই নেতার আরও দাবি, ২০১৮ সালে বিজেপি সেই একই রণনীতি নিয়েই রাজস্থান এবং ছত্রিশগঢ়েও বেশিরভাগ আসন জিতে নেয়।

সমাজবাদী পার্টির মতো বহু আঞ্চলিক দলেরই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিল কংগ্রেস। দলের অন্দরের বেশ কয়েক জন মনে করেন, কংগ্রেসের হেরে যাওয়ার অন্যতম কারণ সেটাও। ভারতের সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য উত্তরপ্রদেশ। সেখানে অন্যতম দল সমাজবাদী পার্টি। অথচ তাদেরকেই ফিরিয়ে দিয়ে আখেরে নিজেরই ক্ষতি করেছিল কংগ্রেস। আর সেটা তাদের ভুলই।

আরও পড়ুন: আস্থা ভোট চায় বিজেপি, হিমাচলে টিকতে পারবে কংগ্রেস সরকার?

কংগ্রেসের বহু নেতাই কিন্তু একমত নন এ বিষয়ে। তাঁদের বক্তব্য, মধ্যপ্রদেশে জয় অনিশ্চিত ছিলই। তার জন্য ভোটের রাজনীতি নয়, দুর্বল ব্যবস্থাপনাই হারের জন্য দায়ী করেছেন তারা। ভোটকেন্দ্রের অবস্থান, প্রচারে খামতি, দলের কর্মীদের দক্ষতার অভাব — এইসব কিছুকেই হারের কারণ হিসেবে তুলে ধরেছেন তাঁরা।

নবীন-প্রবীণের সংঘাত, পুরনো ভুল-খামতি মিটিয়ে কি ২০২৪ লোকসভা ভোটে নয়া উদ্যমে লড়তে পারবে কংগ্রেস? অন্তর্ঘাত, আসন সমঝোতা নিয়ে বিবাদ, সেই সমস্ত সমস্যা সরিয়ে বিজেপি বিরোধিতায় মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারবে কংগ্রেস ও জোট 'ইন্ডিয়া'? লোকসভা ভোটের আগে আপাতত সেটাইসবচেয়ে বড় প্রশ্ন।

 

More Articles