মোদির হাতেই ভারতের রাশ নাকি ক্ষমতায় এবার অন্য কেউ! কী বলছে প্রশান্ত কিশোরের অঙ্কের খাতা?
Lok Sabha Election 2024: নিজের কেরিয়ারে খুব কম সংখ্যক বারই ব্যর্থ হয়েছে প্রশান্ত কিশোরের পর্যবেক্ষণ। লোকসভা ভোটের শেষ পর্যায়ে পৌঁছে কী বলছেন পিকে?
লোকসভা নির্বাচনের প্রায় সিংহভাগটাই শেষ। বাকি মাত্র দু-দফা। গোড়া থেকেই ২০২৪ লোকসভা ভোট নিয়ে আত্মবিশ্বাসী দেখিয়েছে গেরুয়া শিবিরকে। তবে ভোট যত গড়িয়েছে, ততই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি-সহ একাধিক বিজেপি নেতার কথাবার্তায় অস্থিরতা ফুটে উঠেছে। বারবার কংগ্রেসকে আক্রমণ শানিয়েছে শাসক শিবির। যা থেকে বহুসময়েই মনে হয়েছে, বিজেপির সেই গগনচুম্বী আস্থা যেন কোথাও একটু নড়োবড়ো। বিশেষত কংগ্রেসের ইস্তেহার সামনে আসার পর থেকে আরও বেশি। লোকসভা ভোটের শুরুতে চারশো আসন পাওয়ার দাবি জানিয়েছিল বিজেপি। তবে ভোট যত এগিয়েছে, তেমন ভাবে চারশো পারের স্লোগান যেন আর শোনা যায়নি বিজেপি নেতামন্ত্রীদের মুখে। তবে ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর গোড়া থেকেই আস্থা রেখেছেন বিজেপির উপরেই। তার জন্য কম আক্রমণের মুখে পড়তে হয়নি তাঁকে। কেন্দ্রে মোদির আসার ক্ষেত্রেও পিকে-র বড় ভূমিকা ছিল। নিজের কেরিয়ারে খুব কম সংখ্যক বারই ব্যর্থ হয়েছে প্রশান্ত কিশোরের পর্যবেক্ষণ। লোকসভা ভোটের শেষ পর্যায়ে পৌঁছে কী বলছেন পিকে? পুরনো অবস্থান থেকে কি টলানো গেল ভোট-কুরুক্ষেত্রের এই কৃষ্ণকে?
সাত দফা লোকসভা ভোটের পাঁচ দফা শেষ। বাকি মাত্র দু-দফার ভোটগ্রহণ। এই পাঁচ দফায় প্রাপ্ত ভোটের হারের মোটামুটি হিসেব আমাদের হাতেই। যদিও নির্বাচন কমিশনের দেওয়া সেই হিসেবে জল মেশানো রয়েছে, বলে দাবি করেছেন ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ। তবে সেসব দেখে-শুনে-বুঝেও প্রশান্ত কিশোর বলছেন, তিনি নিশ্চিত তৃতীয়বারের জন্যও ক্ষমতায় আসতে চলেছে মোদি সরকারই। গত বারের মতোই সংখ্যা বা তার বেশি আসন নিয়েই বিজেপি ফিরতে চলেছে বলে জানিয়েছেন পিকে। কেন এ কথা বলছেন তিনি? তাঁর কথায়, এখনও পর্যন্ত মোদি সরকারের বিরুদ্ধে তেমন বড় কোনও ক্ষোভের আভাস দেখা যায়নি জনগণের। হতাশা বা অপূর্ণ আকাঙ্ক্ষা থাকলেও তা এত বড় নয়, যে মোদির বিরুদ্ধে গোটা দেশের মানুষকে এককাট্টা করতে পারে। ফলে এই ভোটেও যে গেরুয়া শিবিরের ক্ষমতায় আসা একরকম নিশ্চিত, তেমনটাই মনে করেন ভোটকুশলী পিকে।
আরও পড়ুন: দু’নম্বরে নামবে তৃণমূল! বাংলায় পিকে-র বাণী ফলার সম্ভাবনা কতটা?
পাশাপাশি বিজেপির প্রধান প্রতিপক্ষ হয়ে ওঠার কথা ছিল যাদের, সেই ইন্ডিয়া জোটকে কার্যত তেমন ভাবে ভোট ময়দানে দেখা যায়নি। জোট ইন্ডিয়া ঘোষণার পর থেকেই তেমন ভাবে কোমর বাঁধতে পারেনি যেন তাঁরা। জোটে বেশিরভাগ সিদ্ধান্তেই বেশিরভাগ সময়ে একজোট হতে পারেননি জোটসঙ্গীরা। পিকের মতে, জোট ঘোষণার কয়েক মাস ধরে তেমন কোনও বড় পদক্ষেপের কথা, এমনকী প্রধানমন্ত্রীর পদপ্রার্থীর নামটুকু পর্যন্ত ঘোষণা করতে পারেনি তারা। প্রশান্ত কিশোর জানান, বিরোধী দল যতই চেষ্টা করুক না কেন, জনসাধারণের সামনে তেমন স্পষ্ট, বিশ্বাসযোগ্য মুখ তুলে ধরতে পারেনি তাঁরা। রাহুল গান্ধি এলে যে পরিস্থিতি অন্য রকম কিছু হতে পারে, তেমন কোনও আশ্বাসও কংগ্রেস বা ইন্ডিয়া জোট তুলে ধরতে পারেনি বলেই মন্তব্য করেছেন ভোটকুশলী পিকে। ফলে এই মুহূর্তে গেরুয়া শিবিরের সামনে তেমন কোনও চ্যালেঞ্জার নেই, যা ভোটের সংখ্যায় বড় কোনও পরিবর্তন আনতে পারে। জানালেন তিনি।
তবে বিজেপি জয় নিয়ে প্রত্যয়ী হলেও নরেন্দ্র মোদির চারশো পেরনোর দাবিকে হাওয়ায় উড়িয়ে দিয়েছেন প্রশান্ত কিশোর। গেরুয়া শিবির দাবি করেছে, তারা ৫৪৩টি লোকসভা আসনের মধ্যে ৩৭০টি আসন জিতবে, এবং এনডিএ জোট দেশে চারশোটিরও বেশি আসন পাবে। তবে এমনটা ঘটবে বলে আদৌ মনে করেন না পিকে। হ্যাঁ, বিজেপির আসন সংখ্যা বাড়তেই পারে, তবে তা কখনওই চারশো পেরোতে পারবে না। তবে মোদির তৃতীয় দফা তেমন সহজ হবে বলে মনে করছেন না প্রশান্ত কিশোর। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) সংক্রান্ত বিক্ষোভ, কৃষক বিক্ষোভের মতো সমস্যাগুলির জন্য বেশ চ্যালেঞ্জিং হতে চলেছে মোদির এই পরবর্তী শাসন। যার জেরে আগের চেয়ে দুর্বল প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রমাণিত হতে পারেন নরেন্দ্র মোদি। এমন আশঙ্কাও উড়িয়ে দিতে পারছেন না প্রশান্ত কিশোর।
আরও পড়ুন:২০১৪: মোদিকে যেভাবে মসনদে বসিয়েছিলেন প্রশান্ত কিশোর
একই সঙ্গে পিকে এ-ও মনে করছেন, মোদির নেতৃত্বে বিজেপি ৩৭০টি আসন পাওয়ার যে দাবি করেছেন, সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে না পারলে, শেয়ারবাজারে তার ছাপ পড়বে বলেই মনে করছেন ভোটকুশলী। তবে দেশের দক্ষিণ ও পূর্বভাগ থেকে বিজেপির ভোটসংখ্যা বাড়বে বলেই অঙ্ক কষে বলছেন পিকে। এদিকে, ২০১৪ কিংবা ২০১৯-এর ভোটে তেলঙ্গানা, ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গ, তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ, বিহার ও কেরলের মতো রাজ্যগুলিতে ৫০টি আসনও পায়নি গেরুয়া শিবির। সেখানে প্রশান্ত কিশোরের দাবি কতটা ফলতে চলেছে ২০২৪ লোকসভা ভোটে, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন অভিজ্ঞমহলের বড় অংশই। তবে ভোটের কুরুক্ষেত্রে প্রশান্ত কিশোরের কথা ফলবে না তাঁকে ভুল প্রমাণ করে অন্য কোনও সিদ্ধান্ত নেবে দেশের মানুষ, সেই ফয়সলা হবে আগামী ৪ জুনেই।