শিবসেনা বনাম শিবসেনা! উদ্ববের দল ভাঙানোর পরে মহারাষ্ট্রে কত আসন পাবে এনডিএ?
Maharashtra Lok Sabha Election Result: মহারাষ্ট্রের ৪৮টি লোকসভা আসনের নির্বাচনী ফলাফলের গভীর প্রভাব পড়বে বিধানসভা নির্বাচনেও যা এই বছরের শেষের দিকেই হবে।
মোট ৪৮ টি আসনের লড়াই মহারাষ্ট্রে। কয়েক বছরে মহারাষ্ট্রের রাজনীতি এক উথাল পাথাল অবস্থার মধ্যে দিয়ে গেছে। শিবসেনা শিবির দুইভাগে ভাগ হয়ে গেছে। একনাথ শিন্ডে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন, বিজেপি কী কী ভাবে বিরোধীদের সংসার ভেঙে আখের গোছাতে পারে তা মহারাষ্ট্র দেশকে দেখিয়েছে। সেই মহারাষ্ট্রে, লোকসভা নির্বাচনে এবার বিজেপি শিবির অর্থাৎ দেবেন্দ্র ফড়নবিশ, একনাথ শিন্ডে, সুনীল তাতকারে আর মহাদেব জনকরের গোষ্ঠী লড়ছে ৪৮ টি আসনে। পাল্টা ইন্ডিয়া জোট অর্থাৎ মহারাষ্ট্রে যেখানে রয়েছেন শিবসেনার উদ্বব ঠাকরে শিবির, পৃথ্বীরাজ চৌহান, সুপ্রিয়া সুলেরা, তারাও ৪৮ টি আসনেই লড়ছেন। এতগুলির মধ্যে ১৩ টি আসনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে চলেছে শিবসেনা বনাম শিবসেনার। একনাথ শিন্ডে বনাম উদ্বব ঠাকরের।
ইন্ডিয়া টুডে-অ্যাক্সিস মাই ইন্ডিয়ার এক্সিট পোল অনুসারে, একনাথ শিন্ডের নেতৃত্বাধীন দলটি পাঁচটি আসন জিততে পারে এবং উদ্ধব ঠাকরে শিবির তিনটি আসন পেতে পারে। বাকি পাঁচটি আসনে বেশ কঠিন লড়াই। সামগ্রিকভাবে, শিন্ডের শিবসেনা এবং উদ্ববের শিবসেনা যথাক্রমে ১৫টি এবং ২১টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল। একটি দল আসন সংখ্যায় এগিয়ে আছে, অন্য দলটি মহারাষ্ট্রে ভোট শেয়ারে এগিয়ে।
আরও পড়ুন- এক্সিট পোলই শেষ কথা নয়! আজ পর্যন্ত কতবার ফ্লপ হয়েছে বুথফেরত সমীক্ষা?
ইন্ডিয়া টুডে-র এক্সিট পোল অনুসারে, একনাথ শিন্ডের দল ৮ থেকে ১০ টা আসন জিততে পারে, যেখানে উদ্বভের শিবসেনা (ইউবিটি) ৯ থেকে ১১টি আসন পেতে পারে। ভোট ভাগের নিরিখে, শিন্ডে শিবির পেতে পারে ১৩%। আর উদ্ববের খাতায় আসতে পারে মোট ভোটের ২০ শতাংশ। শিন্ডে এবং ৪০ জন বিধায়কের বিদ্রোহের পরে শিবসেনাতে ২০২২ সালে যে বিশাল ভাঙন আসে, তারপর থেকে এই লোকসভা নির্বাচনই কিন্তু দু'টি গোষ্ঠীর জনপ্রিয়তা পরীক্ষা করার প্রথম বড় নির্বাচন।
হিঙ্গোলি, শিরডি, কল্যাণ, থানে, ভুলদানা আসনে একনাথ শিন্ডে গোষ্ঠীর জয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। উদ্ববের শিবসেনা (ইউবিটি) সম্ভবত মাভাল, দক্ষিণ মুম্বই, নাসিকে জয়ী হতে পারে। ইয়াভাতমাল, সম্ভাজি নগর, উত্তর-পশ্চিম মুম্বই, হাতকানাঙ্গলে এবং দক্ষিণ মধ্য মুম্বইয়ে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। এই পাঁচটি আসনের মধ্যে শিন্ডের সেনা শিবির ইয়াভাতমাল, সম্ভাজি নগর এবং উত্তর-পশ্চিম মুম্বই আসনে বেশ ভালো অবস্থায় রয়েছে। হাটকানঙ্গলে আসনে আবার উদ্বব শক্তিশালী।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী মোদি শিবসেনার প্রার্থীদের জন্য অনেক সমাবেশ করেছেন, যেখানেই তাদের দুর্বল বলে মনে হয়েছে মোদি নিজে গেছেন। এই বিষয়টি শিন্ডে শিবিরকে অক্সিজেন জোগাবে।
মহারাষ্ট্রের ৪৮টি লোকসভা আসনের নির্বাচনী ফলাফলের গভীর প্রভাব পড়বে বিধানসভা নির্বাচনেও যা এই বছরের শেষের দিকেই হবে। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে, বিজেপি এবং শিবসেনা নিয়ে গঠিত এনডিএ ৪২টি আসন জিতেছিল। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনেও এনডিএ আবার ৪২ টি আসনই জেতে। কিন্তু তারপর উদ্ধব ঠাকরের নেতৃত্বাধীন শিবসেনা কংগ্রেস এবং জাতীয় কংগ্রেস পার্টির (এনসিপি) সঙ্গে রাজ্যে সরকার গঠনের জন্য এনডিএ জোট থেকে বেরিয়ে যায়। ২০২২ সালের জুনে, একনাথ শিন্ডে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন। যার জেরে শিবসেনা দু'টুকরো হয়ে পড়ে এবং রাজ্যে উদ্ববের সরকারের পতন ঘটে।
গত বছর মে মাসে, সুপ্রিম কোর্ট রায় দেয়, শিন্ডের নেতৃত্বাধীন মহারাষ্ট্র সরকারই বহাল থাকবে কারণ উদ্বব ঠাকরে ফ্লোর টেস্ট না করেই পদত্যাগ করেন। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে, মহারাষ্ট্র বিধানসভার স্পিকার রাহুল নারওয়েকর মুখ্যমন্ত্রী শিন্ডের গোষ্ঠীর নেতৃত্বাধীন শিবসেনাকেই 'প্রকৃত শিবসেনা' হিসাবে ঘোষণা করেন।
আরও পড়ুন- ডবল ধামাকা! শুধু ওয়ানাড় নয়, রায়বরেলিতেও জিততে চলেছেন রাহুল গান্ধি?
ক্ষমতাসীন বিজেপি, শিন্ডের শিবসেনা এবং অজিত পাওয়ারের এনসিপি এবারের ভোটে মারাঠা জাতি সংরক্ষণ নিয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। দলিত ও সংখ্যালঘু ভোট এবার মহারাষ্ট্রের বড় ফ্যাক্টর। কারণ ওবিসিরা মনে করে তাদের সম্প্রদায়ের মধ্যে মারাঠাদের জন্য যেকোনও সংরক্ষণই তাদের সুবিধা থেকে বঞ্চিত করবে। ওবিসিরা রাজ্যের জনসংখ্যার ৫২%। মহারাষ্ট্রে ওবিসিরা এনডিএ-র পক্ষে বলেই মনে হচ্ছে। এছাড়া ১২ শতাংশ এসসি, ১০% এসটি এবং ১২% মুসলিম ভোটও বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায় গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হতে পারে।
২০২৩ সালের অগাস্টে পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০% শুল্ক আরোপ করার এবং পরে এপ্রিল পর্যন্ত সবজি রপ্তানি নিষিদ্ধ করার কেন্দ্রীয় সরকারের নীতির বিরুদ্ধে মহারাষ্ট্রের কৃষকরা অসন্তুষ্ট ছিলেন। দেশের বৃহত্তম পেঁয়াজের বাজার মহারাষ্ট্রের নাসিক জেলার লাসালগাঁওয়ে অবস্থিত। এপ্রিল মাসে, উত্তর মহারাষ্ট্রের পেঁয়াজ চাষিদের ক্ষোভ প্রশমিত করতে কৌশলী পদক্ষেপ হিসেবে কেন্দ্র ছয়টি দেশে ৯৯,১৫০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে - বাংলাদেশ, সংযুক্ত আরব আমিরশাহী, ভুটান, বাহরিন, মরিশাস এবং শ্রীলঙ্কা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পেঁয়াজ এবং পেট্রোলের মূল্যবৃদ্ধি অটল বিহারী বাজপেয়ীর এনডিএ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করেছিল। ২০২৪ সালে সেই কাঁটা আর রাখতে চায়নি বিজেপির সরকার। তাহলে পেঁয়াজ, সংখ্যালঘু ভোট আর মারাঠা সংরক্ষণ শিবসেনা বনাম শিবসেনার লড়াইয়ে কত আসনের ছক উল্টে দেবে, উত্তর মিলবে আর কিছু পরেই।