প্রভু জগন্নাথ খোদ মোদির ভক্ত! লক্ষ লক্ষ মানুষের আবেগে কেন আঘাত বিজেপির?

Jagannath PM Modi: মোদি বারেবারে বোঝাতে চান বিজেডি-র শাসনে পুরীর জগন্নাথ মন্দিরও নিরাপদ নয়। তাই গত ছ' বছর ধরে মন্দিরের রত্নভাণ্ডারের চাবি 'গায়েব'।

তিনি প্রধানমন্ত্রী না সাত্ত্বিক কোনও ধর্মগুরু তা মাঝেমাঝে গুলিয়ে যা, এ সত্য। তাঁর মন্দির ভ্রমণ, প্রাণ প্রতিষ্ঠা সবটাই দেশ জানে। তিলক-গেরুয়া চন্দনে সেজে মাঝে মাঝেই তাঁকে দেখা যায় দেশের বিভিন্ন তীর্থস্থানে, গুহাতে ধ্যান করতেও দেখা যায়। নরেন্দ্র মোদির এই ধর্মপ্রাণ সত্ত্বা সকলেরই পরিচিত। কিন্তু খোদ ভগবানকে মোদির ভক্ত প্রমাণ করতে গিয়েই বিড়ম্বনা বাড়িয়েছেন দলের এক নেতা। বিজেপি নেতা এবং পুরী লোকসভা আসনের বিজেপি প্রার্থী সম্বিত পাত্র বলেছেন প্রভু জগন্নাথ হলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভক্ত। স্বাভাবিকভাবেই এই বিতর্কিত মন্তব্য প্রকাশ্যে আসতেই হইচই পড়েছে দেশে।

ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী এবং ক্ষমতাসীন বিজু জনতা দলের প্রধান নবীন পট্টনায়েক বলেছেন, "মহাপ্রভু শ্রী জগন্নাথ মহাবিশ্বের প্রভু। মহাপ্রভুকে অন্য মানুষের ভক্ত বলা ভগবানের অপমান।" তিনি বলছেন, এমন মন্তব্য সারা বিশ্বের কোটি কোটি জগন্নাথ ভক্তদের এবং ওড়িশাবাসীদের বিশ্বাসকে নিচু করেছে। পরে, সম্বিত পাত্র অবশ্য বলেছেন, কথাটা নেহাতই মুখ ফসকে বলে ফেলেছেন তিনি। X-এ সম্বিত পাত্র লিখেছেন, তিনি মোদির জনসভার পরে সব সংবাদ মাধ্যমেই বলেছেন, মোদিজি একজন প্রবল জগন্নাথ ভক্ত। কেবল একটি চ্যানেলে কথা বলতে গিয়ে তিনি অসাবধানবশত উল্টো কথা বলে ফেলেছেন।

নিজের এই 'স্লিপ অফ টাং’ সামলাতে গিয়ে জগন্নাথের কাছে ক্ষমাও চেয়েছেন সম্বিত। বলেছেন, এই ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করতে তিন দিন উপোসও করবেন তিনি।

 

সম্বিত পাত্রের এই মুখ ফসকে বেরিয়ে আসা বিতর্কিত মন্তব্য নিয়ে সমস্ত বিরোধী দলই নেমে পড়েছে রাজনীতির উঠোনে। লোকসভা নির্বাচনের মাঝে এমন সুযোগ হাতছাড়া করতে রাজি নন আম আদমি পার্টির প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়ালও। সম্বিত পাত্রের এমন কথা 'ঈশ্বরের অপমান', বলছেন মাফলার ম্যান। কংগ্রেসও বিজেপিকে কটাক্ষ করেছে।

আরও পড়ুন- রামকৃষ্ণ মিশন সত্যিই বিজেপির আজ্ঞাবহ? সাধু বিতর্কে ভোট হারাবেন মমতা?

এইসব ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে নরেন্দ্র মোদির একটি রোড-শো। গত ১০ দিনে ২বার পুরী ভ্রমণ করেছেন মোদি। ২০ মে নির্বাচনী প্রচারে ওড়িশায় গিয়ে নবীন পট্টনায়ক এবং বিজু জনতা দলকে আক্রমণ করেছেন বারবার। জগন্নাথ মন্দিরে প্রার্থনা করে, সেখান থেকেই পুরীর রত্নভাণ্ডারের চাবি কোথায় বলে প্রশ্ন তোলেন মোদি। বারেবারে বোঝাতে চান, নবীন পট্টনায়ক এবং বিজেডি-র শাসনে পুরীর জগন্নাথ মন্দিরও নিরাপদ নয়। তাই গত ছ' বছর ধরে মন্দিরের রত্নভাণ্ডারের চাবি 'গায়েব'।

 

২৫ মে পুরী লোকসভা কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ। পুরী-সহ গোটা ওড়িশার মানুষের কাছেই জগন্নাথ মন্দির এবং রত্নভাণ্ডারের গুরুত্ব অপরিসীম। তাই সেই বিষয়টিকেই ভোটের ইস্যু করতে চেয়েছেন মোদি। জগন্নাথ মন্দিরের যে রত্নভাণ্ডারের কথা মোদি বলছেন, জনশ্রুতি আছে ওই রত্নভাণ্ডারে জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রার সমস্ত গয়না সঞ্চিত রয়েছে। বিগত কয়েক শতকে যত রাজা, মহারাজা এবং ভক্তরা মূল্যবান গয়না, রত্ন দেবতাদের উৎসর্গ করেছেন, সবই ওই রত্নভাণ্ডারে রাখা আছে। ১৯৮৫ সালের ১৪ জুলাই ওই রত্নভাণ্ডারটি শেষ বার খোলা হয়েছিল।

রত্নভাণ্ডার নিয়ে আদালতেও মামলা হয়। ২০১৮ সালে ওড়িশা হাইকোর্ট রাজ্য সরকারকে রত্নভাণ্ডার খোলার নির্দেশ দেয় কিন্তু রত্নভাণ্ডারের চাবির কোনও হদিশ মেলেনি। সেবারও চরম বিতর্ক হয়েছিল। এবারও, নির্বাচনী আবহে বিতর্ক উস্কে দেন মোদি। ওড়িশায় বিজেপি আর বিজেডি-র জোরদার লড়াই। লোকসভা নির্বাচনে জোট করেনি দুই দলই। আগে, যৌথভাবে ৯ বছর ওড়িশায় শাসন করেছে বিজেপি ও বিজেডি। ২০০৯ সালে সেই জোট ভেঙে যায়। এবার নবীন পট্টনায়ককে এক ইঞ্চি জমি ছাড়তে নারাজ মোদি।

More Articles