সাংসদ পদ খারিজ নিয়ে এবার সুপ্রিম কোর্টে মহুয়া, ১৫ পাতার আবেদনে যা যা লিখলেন?
Mahua Moitra: এবার পদ খারিজ হওয়ার ঘটনা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হলেন মহুয়া। সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে ইতিমধ্যেই মামলা দায়ের করেছেন তিনি।
সাংসদ পদ খারিজ নিয়ে বড় পদক্ষেপ কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রের। এত সহজে যে লড়াইয়ের ময়দান তিনি ছাড়ছেন না, তা ফের একবার বুঝিয়ে দিলেন মহুয়া। এথিকস কমিটির সুপারিশ মেনে শুক্রবার খারিজ হয়ে গিয়েছে মহুয়ার সাংসদপদ। কার্যত মহুয়াকে আত্মপক্ষ সমর্থনে একটি কথাও বলার সুযোগ দেওয়া হয়নি। সুপারিশ পড়ার জন্য সময় চাওয়া হলেও তৃণমূল-সহ অন্যান্য বিরোধী দলকে সেই সময়টুকু পর্যন্ত দেননি। মহুয়ার সঙ্গে যা হয়েছে, তা ঘোর অন্যায়। আর তা কোনও মতেই যে তিনি মেনে নেবেন না, তা শুক্রবারই ঘোষণা করে দিয়েছিলেন মহুয়া। স্বাভাবিক ভাবেই মনে করা হচ্ছিল, এর পর আইন-আদলতের পথে হাঁটতে পারেন তিনি। হলও তেমনটাই। এবার পদ খারিজ হওয়ার ঘটনা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হলেন মহুয়া। সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে ইতিমধ্যেই মামলা দায়ের করেছেন তিনি।
মনে করা হচ্ছে, শীঘ্রই শুনানির জন্য শীর্ষ আদালতে তালিকাভুক্ত হতে পারে মামলাটি। মহুয়া বিতর্কে শেষপর্যন্ত কি সুপ্রিম কোর্টেই সুবিচার পাবেন মহুয়া, তার জন্য় অপেক্ষা আরও কিছুদিনের। আদানি নিয়ে লোকসভায় প্রশ্ন করার জন্য দুবাইয়ের ব্যবসায়ী দর্শন হীরনন্দানির থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ ও দামী উপহার নেওয়ার অভিযোগ ওঠে মহুয়ার বিরুদ্ধে। বিজেপির সাংসদ নিশিকান্ত দুবে ও মহুয়ার প্রাক্তন বন্ধু ও আইনজীবী জয় অনন্ত দেহাদ্রাই-ই এ নিয়ে লোকসভার স্পিকারের কাছে নালিশ ঠোকেন। এর পরেই সেই ঘটনার তদন্তভার যায় লোকসভার এথিকস কমিটির কাছে।
আরও পড়ুন: স্পষ্টবাদী, স্বাধীনচেতা বলেই মহুয়া মৈত্রকে বহিষ্কারের ছক সাজাল বিজেপি?
গত শুক্রবার লোকসভার শীতকালীন অধিবেশনের পঞ্চম দিনে স্পিকারের কাছে এই সংক্রান্ত রিপোর্টটি পেশ করে এথিকস কমিটি। তাঁরা মহুয়ার পদ খারিজের প্রস্তাবই সুপারিশ করে। স্পিকারের টেবিলে আনুষ্ঠানিক ভাবে রিপোর্টটি পেশ করেন বিজেপি সাংসদ বিনোদ সোনকর। কিন্তু অনেক আগেই এথিক্স কমিটির একাধিক সদস্য প্রকাশ্যে জানিয়ে দিয়েছিলেন, মহুয়াকে বহিষ্কারের সুপারিশ করা হয়েছে রিপোর্টে। তারই প্রেক্ষিতে প্রশ্ন ওঠে, কী ভাবে এথিক্স কমিটি এক সাংসদকে বহিষ্কারের সুপারিশ করতে পারে? সেই এক্তিয়ার সংসদের স্বাধিকার রক্ষা কমিটি ছাড়া আর কোনও কমিটির নেই। দ্বিতীয়ত, তদন্ত রিপোর্ট গোপন থাকার কথা ছিল। কিন্তু তা আগেই কী ভাবে সংবাদমাধ্যমে ফাঁস হয়ে গেল?
তবে এত সব কিছুর মধ্যেই মাত্র আধাঘণ্টায় মহুয়ার ভাগ্য নির্ধারণ হয়ে যায় ধ্বনিভোটের মাধ্যমে। সাংসদ পদ থেকে বহিষ্কৃত হন কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ।বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরীও। গত কয়েকদিনে অধিকাংশ বিরোধীদলেরই সমর্থন পেয়েছেন মহুয়া। লোকসভা থেকে বেরিয়েই হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন মহুয়া, যে এই ঘটনার শেষ দেখে ছাড়বেন তিনি। শুক্রবারের পর শনি-রবি ছিল ছুটি। আর সেই ছুটির বিরতিটুকু নিয়েই এই মামলা নিয়ে উঠেপড়ে লেগেছেন মহুয়া। সোমবার সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে গিয়ে মামলা দায়ের করেছেন তিনি। তার সঙ্গে জমা করেছেন ১৫ পাতার একটি আবদনপত্রও। যেখানে খুঁটিনাটি সমস্ত বিষয় বিস্তারিত ভাবে লিখেছেন মহুয়া। এথিক্স কমিটির এই রিপোর্ট এবং তাঁকে বহিষ্কারের প্রস্তাবকে ‘সত্যের বিকৃতি’ বলে উল্লেখ করেছেন। নিশিকান্ত ও জয়ের অভিযোগের বয়ান তুলে ধরে আবেদনে মহুয়া দেখাতে চেয়েছেন, তার মধ্যে কতটা ‘পরস্পর বিরোধিতা’ রয়েছে। এথিক্স কমিটির তদন্তপ্রক্রিয়া নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন মহুয়া। কী ভাবে তাঁকে ব্যক্তিগত প্রশ্ন করে শুনানিকে কোন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, সে কথারও উল্লেখ রয়েছে মহুয়ার আবেদনে।
তৃণমূলের বহিষ্কৃত সাংসদ সুপ্রিম কোর্টে দায়ের করা আবেদনে এ-ও উল্লেখ করেছেন যে, কী ভাবে তাঁকে পাল্টা প্রশ্ন করতে বাধা দেওয়া হয়েছিল। ব্যবসায়ী দর্শন হীরানন্দানির হলফনামা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে মহুয়ার তরফে। তাঁর স্পষ্ট অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সরকার তথা দেশের শাসকদলের ধারাবাহিক সমালোচনা করার কারণেই তাঁকে ‘টার্গেট’ করে লোকসভা থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ‘সংখ্যাগরিষ্ঠতার ঔদ্ধত্য’। যা যুক্তি, আইন, এক্তিয়ার সব কিছু লঙ্ঘন করেছে। এথিকস কমিটির ‘এক্তিয়ার’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরী নিজেও। তিনি সাফ জানান, এথিকস কমিটির সিদ্ধান্ত অগেভাগেই যে ভাবে ফাঁস হয়ে গিয়েছে বা প্রকাশ্যে চলে এসেছে, তা একেবারেই কাম্য নয়। ব্যপারটা সংসদের রীতিনীতিরও পরিপন্থীও বটে। তাছাড়া এথিকস কমিটি তদন্ত করে কী পেয়েছে, তাদের রিপোর্টে কী কী রয়েছে বা মহুয়া দোষী হলে কী শাস্তির সুপারিশ তারা করছে, এ সবই তো গোপন থাকার কথা। কিন্তু মহুয়ার বিরুদ্ধে ‘ঘুষের বিনিময়ে প্রশ্ন’ অভিযোগে এথিকস কমিটির তদন্ত রিপোর্ট গোপন ছিল না।
আরও পড়ুন:মহুয়া বহিষ্কারে রণং দেহী মমতা, যে বার্তা দিলেন…
সেই সমস্ত বিষয়গুলিকে একত্রে করে পনেরো পাতার ওই আবেদনটি সুপ্রিম কোর্টের কাছে জমা দিয়েছেন মহুয়া। এবার সেই মামলা শুনানির জন্য আদৌ সুপ্রিম কোর্টে ওঠে, নাকি তার আগেই সেখান থেকেও প্রত্যাখ্যাত হতে হয় কৃষ্ণনগরের প্রাক্তন সাংসদ মহুয়া মৈত্রকে, সেদিকেই তাকিয়ে রাজ্য ও জাতীয় রাজনীতি।