অপ্রতিরোধ্য মহুয়া! কৃষ্ণনগরে যে ভাবে মুখ থুবড়ে পড়ছে বাম ও বিজেপির কৌশল
Mahua Moitra: কৃষ্ণনগরের ভূমিকন্যা তথা সেখানকার 'রাজমাতা' অমৃতা রায়কে কার্যত বিপুল ভোটে পিছনে ফেলে দিয়েছেন মহুয়া। কার্যত সেই সংখ্যার ব্যবধান এতটাই যে, অমৃতার ফেরার পথটাও নেই বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
তৃণমূলের বহিষ্কৃত সাংসদ মহুয়া মৈত্রের জন্য এই লোকসভা ভোট ছিল হৃত সম্মান ফিরে পাওয়ার লড়াই। টাকার বিনিময়ে প্রশ্ন করার মামলায় সাংসদ পদ খোয়াতে হয়েছিল মহুয়াকে। তাতেও শান্তি মেলেনি। এরপর তার পিছনে পড়ে ইডি। বিদেশি মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইন লঙ্ঘনের মামলায় বারবার তাঁকে তলব করেছে ইডি। তবে সেই সব কিছুর জবাব ভোটের ময়দানে দিয়েছেন মহুয়া। মঙ্গলবার লোকসভা ভোটের গণনাপর্ব শুরু হতে চড়চড়িয়ে বাড়তে লাগল পারদ। কৃষ্ণনগরের ভূমিকন্যা তথা সেখানকার 'রাজমাতা' অমৃতা রায়কে কার্যত বিপুল ভোটে পিছনে ফেলে দিয়েছেন মহুয়া। কার্যত সেই সংখ্যার ব্যবধান এতটাই যে, অমৃতার ফেরার পথটাও নেই বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ভোটগণনার দিন সকাল বেলা চেনা মেজাজে দেখা গেল মহুয়াকে। দলীয় কর্মীর সাইকেলের পিছনে বসে ঘুরে বেড়ালেন এলাকায় হাসিমুখে। লোকসভা ভোটের মুখে যখন বারবার ইডির ডাক পাচ্ছেন মহুয়া, বাতাসে ভাসছে তাঁর গ্রেফতারির খবরও, সে সময় কার্যত বাঘিনীর মতোই গর্জে উঠেছিলেন মহুয়ার মা। জানিয়েছিলেন, মেয়ে গ্রেফতার হলে লড়াইয়ের ব্যাটন কাঁধে তুলে নেবেন তিনি। তবে তেমন পরিস্থিতি আসেনি। নিজের লড়াই নিজেই দক্ষতার সঙ্গে লড়েছেন তৃণমূলের এই দৃপ্ত নেত্রী। স্বাভাবিক ভাবেই এই লোকসভা ভোটে রাজ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আসন ছিল কৃষ্ণনগর কেন্দ্রটি।
আরও পড়ুন: ভোটে মহুয়া-কাঁটা তুলতে অমৃতার পাশে খোদ মোদি, কোন পথে কৃষ্ণনগরের লড়াই?
তেহট্ট, পলাশিপাড়া, কালীগঞ্জ, নাকাশিপাড়া, ছাপড়া, কৃষ্ণনগর উত্তর এবং কৃষ্ণনগর দক্ষিণ— এই সাতটি বিধানসভা কেন্দ্র থেকে গঠিত কৃষ্ণনগরের লোকসভা কেন্দ্রটি। ২০০৯ সাল থেকে এই কেন্দ্রে তৃণমূল কংগ্রেস ধারাবাহিত ভাবে জিতে আসছে। ২০০৪ সালে এই কেন্দ্র শেষবার পকেটে পুরতে পেরেছিল বাম। ১৯৯৯ সালে এই কেন্দ্রে বিজেপি জিতেছিল। তার আগে কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্র দীর্ঘ বছর ধরে ছিল বামেদের দখলে ছিল। ধারে ও ভারে কিছুটা হলেও কৃষ্ণনগর কেন্দ্রে তৃণমূল এগিয়ে থাকলেও বিজেপি ও বামের পুরনো সংগঠন আছে কৃষ্ণনগর। এই লোকসভা ভোটে বিজেপির সবচেয়ে বড় তুরুপের তাস ছিল সেখানকার রাজমাতা অমৃতা রায়কে দাঁড় করানো। বিজেপি নেতৃত্ব ভেবেছিল, ভূমিকন্যার সমীকরণে হয়তো খানিকটা হলেও সুবিধা করতে পারবে কৃষ্ণনগরে গেরুয়া শিবির। খোদ প্রধানমন্ত্রীর ভোট এসেছিল অমৃতার কাছে। মিলেছিল পাশে থাকার বার্তা। এমনকী মহুয়াকে পথ থেকে সরাতে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে বিজেপি নেতৃত্ব, তেমন ভরসাও এসেছিল শীর্ষ নেতৃত্বের কাছ থেকে।
তবে সেসব কিছু করেই ঠেকানো যায়নি মহুয়াকে। সংসদে প্রতিটি অপমান, হেনস্থার হিসেব তিনি তুলে নিয়েছেন ভোটবাক্সে। দুপুর একটা পর্যন্ত মহুয়া মৈত্র কৃষ্ণনগরে এগিয়ে রয়েছেন প্রায় ৬৫ হাজার ২৪৫টি ভোটে। যা দেখে শুনে বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, এই ব্যবধান অতিক্রম করা সহজ হবে না অমৃতার পক্ষে। এদিকে, কৃষ্ণনগরে বামেরা প্রার্থী করেছিল সেখানকার প্রাক্তন বিধায়ক এস এম সাদিকে। বোঝাই যায়, সেখানকার সংখ্যালঘু ভোটের কথা ভেবেই প্রার্থী নির্বাচন করেছিল সিপিএম। অনেকেই মনে করেছিল, সাদিকে দাঁড় করানো সংখ্যালঘু ভোট পাওয়ার ব্যাপারে তৃণমূলকে কিছুটা হলেও চাপে রাখবে। কিন্তু বাস্তবে তেমন হল না মোটেও। ভুললে চলবে না, গত লোকসভা ভোটে সংখ্যালঘু ভোটই আশীর্বাদ হয়ে এসেছিল মহুয়ার জন্য। সেই ভোটে ভাগ বসানোর যতই চেষ্টা করুক বামেরা, তা আদতে যে হয়নি, তা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে মঙ্গলবার লোকসভা ভোটের গণনা শুরু হতেই।
আরও পড়ুন: মেয়ে গ্রেফতার হলে লড়বেন তিনি! মহুয়া মৈত্রকে অভয়বার্তা ‘শেরনি’ মায়ের
কার্যত সমস্ত হিসেবনিকেশ গুলিয়ে দিয়েছেন মহুয়া। বাম-বিজেপির সমস্ত পরিকল্পনা মুখ থুবড়ে পড়ার মুখে কৃষ্ণনগরে। সংসদে যে ভাবে হেনস্থার শিকার হতে হয়েছিল তৃণমূল সাংসদকে, তার সব হিসেব যেন সুদে আসলে ভোট বাক্সে ফিরিয়ে দিয়েছেন কৃষ্ণনগরের মানুষ। শেষপর্যন্ত কী হয় তা জানতে অবশ্য আরও কিছুক্ষণ সময় ধৈর্য ধরতে হবে। তবে ওয়াকিবহালের মত, মহুয়ার জয় এখন সময়ের অপেক্ষা কেবল।