কেবল মহিলা নয়, পুরুষদের জন্যও জন্মনিয়ন্ত্রক বড়ি! সুরক্ষিত যৌনসুখের যে উপায় আনলেন ডাক্তাররা
Male Contraceptive Pills : গবেষকদের দাবি, এই বিশেষ ওষুধটিই পুরুষদের জন্য জন্মনিয়ন্ত্রক ওষুধ হিসেবে কাজ করবে! এই কাজে ওষুধটি অত্যন্ত সফল!
‘যৌনতা’ – এই শব্দটা শুনলে আজও অনেকেই রে রে করে ওঠেন। অথচ ইঁদুর থেকে বাঘ, মানুষ – সবার জীবনেই এটি অত্যন্ত স্বাভাবিক একটি ঘটনা। আরও ভালো করে বললে, যৌনতা, যৌনসুখের ‘অমৃতভাণ্ডের’ স্বাদ পেতে চায় প্রত্যেকেই। স্বাভাবিক, প্রয়োজনীয় এই জৈবিক প্রক্রিয়ার বাইরেও রয়েছে আরও বেশকিছু জিনিস। সঙ্গীর সঙ্গে যৌনসুখ উপভোগ করতে চাইছেন বারবার। কিন্তু দুজনের একটাই ভয়, সন্তান যেন না আসে। অবাঞ্চিত গর্ভধারণ যেন না হয়।
যৌনমিলন আসলে কী? যৌনক্রিয়ার ফলে পুরুষের বীর্য মেয়েদের শরীরে প্রবেশ করে। এই বীর্যের ভেতরেই থাকে আণুবীক্ষণিক শুক্রাণু। মেয়েদের ডিম্বাণুকে নিষিক্ত করার জন্য অজস্র শুক্রাণু পেরোয় অনেকটা পথ। হাজার হাজার শুক্রাণুর ভেতর কেবল একটিই নিজের গন্তব্যে পৌঁছয়। শুক্রাণু আর ডিম্বাণুর মিলন বা নিষিক্ত হওয়ার পরই একটু একটু করে জন্ম নেয় ভ্রূণ। সেখান থেকে আস্ত একটি প্রাণীর জন্ম। যুগে যুগে, কালে কালে এমনটাই চলেছে স্বাভাবিক নিয়মে।
কিন্তু এখন ফ্যামিলি প্ল্যানিংয়ের যুগ। প্রেম হোক বা বিয়ে, হঠাৎ করে সন্তান ধারণ করতে চান না অনেকেই। সেখানে থাকে সঠিক ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা। কিন্তু যৌনতা, যৌনসুখ তো তা বলে থেমে থাকে না। অবাঞ্চিত গর্ভধারণ এড়াতে এর আগে বিভিন্ন জিনিসপত্র আবিষ্কার হয়েছে। পুরুষদের জন্য এসেছে কন্ডোম। অবশ্য কেবল ছেলেদেরই নয়, এখন মেয়েদের জন্য বিশেষ ধরনের কন্ডোম পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়াও রয়েছে ভ্যাসেকটমি বা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে নির্বীজকরণ। এসবের পাশাপাশি রয়েছে আরও একটি জিনিস। গর্ভনিরোধক বড়ি বা ওষুধ। মূলত মেয়েদের ব্যবহারের জন্যই এই ওষুধ বাজারে পাওয়া যায়।
তবে ২০২৩-এ এসে পরিস্থিতি একটু হলেও বদলাল। ডাক্তারদের ভাষায়, জন্ম নিয়ন্ত্রণের ইতিহাসে একটা মাইলফলক তৈরি হল; বলা ভালো ‘গেম চেঞ্জার’! কী সেই আবিষ্কার? ২০২৩-র ভ্যালেন্টাইনস ডে-র দিন নেচার কমিউনিকেশন জার্নালে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়। আমেরিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথের অর্থসাহায্যে কয়েকজন বিজ্ঞানী একটি বিশেষ পরীক্ষা চালান। এই গবেষণার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল একটি বিশেষ ওষুধ। নাম ‘TDI-11861’। ওই গবেষকদের দাবি, এই বিশেষ ওষুধটিই পুরুষদের জন্য জন্মনিয়ন্ত্রক ওষুধ হিসেবে কাজ করবে! এবং গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, এই কাজে ওষুধটি অত্যন্ত সফল!
কিন্তু ব্যাপারটি কী?
ওই গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন ডঃ মেলানি বালবাচ। তাঁর বক্তব্য, এই বিশেষ ওষুধটি নিয়ে দীর্ঘদিন পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা চালানো হয়েছে। মেয়েদের গর্ভনিরোধক বড়ির মতো এটিও একেবারেই হরমোনাল ওষুধ নয়। পুরুষ ইঁদুরের ওপর এই গবেষণা করা হয়েছে। সেখানেই দেখা গিয়েছে অদ্ভুত ফলাফল। গবেষকরা বলছেন, এই ওষুধ শরীরে যাওয়ার পর পুরুষ ও স্ত্রী ইঁদুরের সঙ্গম ঘটানো হয়। দেখা যায়, পুরুষ ইঁদুরের শুক্রাণু মেয়েদের ডিম্বাণুর দিকে যেতে পারছে না। অর্থাৎ, ওষুধ খাওয়ার পর সাঁতার কেটে দীর্ঘপথ পাড়ি দেওয়ার ক্ষমতা হারিয়েছে। যেহেতু ডিম্বাণুর দিকে যেতে পারছে না শুক্রাণু, তাই ভ্রূণ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে না।
এরকম ৫২ টি ইঁদুরের ওপর এই পরীক্ষা করা হয়েছে। এবং প্রত্যেকবারই একই ফলাফল পাওয়া গিয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, প্রাণীর শুক্রাণুতে অ্যাডেনাইলিল সাইক্ল্যাস (Soluble Adenylyl Cyclase বা sAC) নামের একটি বিশেষ উৎসেচক থাকে। এই প্রোটিনের কাজই হল শুক্রাণুকে সক্রিয় করা, যাতে সে দীর্ঘপথ সাঁতরে ডিম্বাণুর দিকে যেতে পারে। এই TDI-11861 ওষুধটি ওই প্রোটিনকে সাময়িকভাবে অকেজো করে দেয়। ফলে সঙ্গমের আগে এই ওষুধ খেলে শুক্রাণুও সেই দীর্ঘপথ পাড়ি দিতে পারবে না। ফলে অবাঞ্চিত গর্ভরোধও এড়ানো যাবে।
মূলত পুরুষদের জন্যই তৈরি হয়েছে এই বিশেষ জন্মনিয়ন্ত্রক ওষুধ। তবে ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই বলেছেন গবেষকরা। শুক্রাণুর কাজ বন্ধ করে দিলেও, সেটি একেবারেই সাময়িক। মোটামুটি তিন ঘণ্টা পর ফের শুক্রাণুর ‘সাঁতার কাটার’ শক্তি ফিরে আসে। এছাড়াও গবেষকরা বলছেন, মেয়েদের গর্ভনিরোধক বড়ির থেকে পুরুষদের এই বিশেষ ওষুধ নাকি অনেক বেশি কার্যকর। যৌনসুখও বজায় থাকবে, সঙ্গমের আনন্দও জারি থাকবে বরাবর; অন্যদিকে অবাঞ্চিত গর্ভধারণও এড়ানো যাবে।