সন্দীপের জন্মদিনে চিঠি মমতার! শুভেচ্ছাবার্তায় যা লিখেছিলেন
RG Kar Rape-Murder Case: সন্দীপ কি মুখ্যমন্ত্রীর রাজ্য প্রশাসন ও শাসক দলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ?
আরজি কর কাণ্ডে প্রথম থেকেই হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই। সন্দীপের অপসারণ চেয়ে আন্দোলন শুরু করেছিলেন আরজি করের জুনিয়র ডাক্তাররা। অভিযোগ উঠেছিল, সন্দীপ আরজি করের প্রভাবশালী ব্যক্তি। তথ্য লোপাট ও অভিযুক্তিকে আড়াল করায় তাঁর হাত থাকতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন অনেকেই। দেখা গেছে, ২০২৩ সাল থেকেই সন্দীপ ঘোষের বদলি নিয়ে নানা নাটকীয় ঘটনা ঘটেছে।বার বার তাঁর বদলির নির্দেশ জারি হতেই শুরু হয়েছে টালবাহানা। প্রশ্ন উঠছিলই, কী ভাবে সন্দীপ ঘোষ আরজি করের অধ্যক্ষ পদে টিকে ছিলেন?প্রতি বার অধ্যক্ষের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার পরও তাঁকে পাকাপাকিভাবে কেন সরানো যেত না? অন্যদিকে, আরজি কর কাণ্ডে তদন্তের গতি নিয়ে বার বারই প্রশ্ন উঠছিল,কোনও প্রভাবশালী এই কাণ্ডে যুক্ত কিনা? তাঁর মধ্যেই প্রকাশ্যে এল বিস্ফোরক তথ্য।
আরজি কর হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ যে প্রভাবশালী তা অনেকেই আন্দাজ করতে পেরেছিলেন। তথ্য বলছে তিনি শুধু প্রভাবশালী নন, তিনি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আস্থাভাজনও বটে।'ইন্ডিয়া টুডে'র একটি প্রতিবেদনে ২০২২ সালের ৩০ জুন সন্দীপের জন্মদিনে মুখ্যমন্ত্রীর পাঠানো শুভেচ্ছাবার্তা সামনে এসেছে।মুখ্যমন্ত্রী নিজের লেটারপ্যাডে শুভেচ্ছাবার্তা পাঠিয়েছিলেন সন্দীপকে। তিনি লিখেছিলেন, 'প্রিয় অধ্যাপক ঘোষ, আপনার জন্মদিনে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও শুভকামনা রইল। আপনার সব আশা পূরণ হোক এবং আগামী দিনগুলি খুশি ও সাফল্যে ভরে উঠুক। সুস্বাস্থ্য আসুক আপনার। পরিবারের সকল সদস্যকেও শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।'
মুখ্যমন্ত্রী যে হাতে গোনা কিছু জনকেই শুভেচ্ছাবার্তা পাঠান তা আর আলাদা করে বলার অপেক্ষা রাখে না। ফলত বোঝাই যাচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ ওই কিছুজনের একজন সন্দীপ। স্বাভাবিকভাবে, মুখ্যমন্ত্রীর কাছাকাছি মানেই রাজ্য প্রশাসন ও শাসক দলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতেই পারেন সেই আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
চিকিৎসার সরঞ্জাম কেনায় অবহেলা করা, চুক্তির ভিত্তিতে কর্মী নিয়োগ করা, হাসপাতাল পরিকাঠামো সংক্রান্ত বিষয়ে গাফিলতি প্রতি ক্ষেত্রেই দুর্নীতির অভিযোগ। আরজি করের প্রাক্তন নন মেডিক্যাল ডেপুটি সুপার আখতার আলি প্রিন্সিপাল সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে টাকা নিয়ে বদলির অভিযোগ তুলেছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ ছিল বায়ো মেডিক্যাল ওয়েস্ট এবং মধ্যরাতে বরাত বদল নিয়েও। এরপর থেকেই সন্দীপ ঘোষের বদলির দাবি উঠতে থাকে। বিতর্কের আবহে বদলির নিদের্শও জারি করে স্বাস্থ্যভবন। ২০২৩ সালের মে মাসে আরজি কর- এর প্রিন্সিপাল সন্দীপ ঘোষেরর বদলির নির্দেশ জারি হয়। কিন্তু ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই গল্প ঘুরে যায়, প্রিন্সিপাল সন্দীপের বদলির নির্দেশিকা বাতিল করে দেওয়া হয়। পুনরায় তাঁকেই আরজি করে ফেরানো হয়। পাঁচ মাস পর ওই বছরই সেপ্টেম্বরে ফের সন্দীপের বদলির নির্দেশ জারি হয়। সে বার সন্দীপ-ঘনিষ্ঠ কয়েক জন প্রাক্তনী ও বহিরাগত বিক্ষোভ করেন।
উল্লেখ্য, সিবিআই দফতরে ২৩ তারিখ পর্যন্ত ৮ বার হাজিরা দিয়েছেন সন্দীপ ঘোষ। গত শুক্রবার থেকে তাঁর টানা জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তাঁর পলিগ্রাফ টেস্ট হতে পারে বলে জানা গিয়েছে। আরজি কর কাণ্ডের পর পদত্যাগ করেন সন্দীপ। কিন্তু আবার কিছু ক্ষণের মধ্যেই ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব পান তিনি। আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষকে 'পুরস্কৃত পদে' নিয়োগ করা হয়েছে বলে সমালোচনা করেছিল হাই কোর্ট। বলে রাখা দরকার, আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে লাগাতার আন্দোলন, মিছিল চলছেই। প্রশ্ন উঠছে, মুখ্যমন্ত্রীর আস্থাভাজন বলেই কি তবে পাহাড় প্রমাণ দুর্নীতির অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও এত প্যাঁচ ছিল বদলির নির্দেশ? এ জন্যই হাসপাতালের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গাতে অবহেলা, গাফিলতি, দুর্নীতির পরও রেহাই পেয়ে গিয়েছেন প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ?