দুই শিশুকে চাপিয়ে সাইকেলে ১১,০০০ কিলোমিটার ঘুরছেন বাবা, যে ঘটনা অবাক করছে দেশকে
Cycling to Reduce Plastic Pollution: দমন ও দিউ থেকে লখনউ পর্যন্ত টানা ১১,০০০ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়েছেন বাবা অনিল চৌহান, সঙ্গ ছাড়েনি দুই শিশু।
ছোট্ট সাইকেল। চালকের পিছনে দুই খুদে বাচ্চা। সাইকেল চলেছে কত হাইওয়ে, পুকুড়পাড়, তীব্র গরম দুপুর, নিঝুম সন্ধা। সাইকেলে চলেছে বাবা আর দুই কন্যা। সাত বছর বয়সী শ্রেয়া এবং চার বছরের যুক্তি। বাবা অনিল চৌহান সাইকেল চালাচ্ছেন, এপাড়া থেকে সে পাড়া নয়, এই শহর থেকে সেই শহর নয়, এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্য! গত ১ বছরে দমন ও দিউ থেকে লখনউ পর্যন্ত টানা ১১,০০০ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়েছেন বাবা অনিল চৌহান, সঙ্গ ছাড়েনি দুই শিশু। একক-ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের ক্ষতি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে সাইকেলে দেশের নানা জায়গায় ঘুরেছেন অনিল আর দুই সন্তান। দেশের মধ্যেই শুধু নয়। সাইকেলেই বাংলাদেশ পাড়ি দিতে চান অনিল।
গত বছরের ১ জানুয়ারি সাইকেলে চড়ে বেরিয়ে পড়েছিলেন দমন ও দিউয়ের বাসিন্দা অনিল চৌহান। এখনও পর্যন্ত গোয়া, গুজরাত, রাজস্থান, দিল্লি এবং মধ্যপ্রদেশের নানা জায়গার মধ্য দিয়ে সাইকেল চালিয়ে ঘুরেছেন তিনি। আর এই দীর্ঘপথে পথচারী মানুষ, গ্রামবাসী এবং শিশুদের সঙ্গে আলাপচারিতা করেছেন। গল্প জুড়েছেন, বুঝিয়েছেন এই একবার ব্যবহার যোগ্য প্লাস্টিক কীভাবে একদিন মানুষদের মেরেই ফেলবে। প্লাস্টিক বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন অনিল।
নিজে এই কষ্টসাধ্য কাজে, সাইকেল নিয়ে নেমে পড়েছেন- এতদূর অবধি ঠিকই ছিল। দুই মেয়েকে নিয়ে এত কঠিন সফরে কেন বেরোলেন অনিল? স্ত্রী নেই অনিলের। মেয়েদের সঙ্গে নিয়েই তাই কাজ করতে অভ্যস্ত তিনি। অনিল জানিয়েছেন, এই জাতীয় প্লাস্টিক খেয়ে প্রচুর গরুর মৃত্যু ঘটছে। তাঁর লক্ষ্য ছিল, এই সিঙ্গল ইউজ প্লাস্টিকের কারণে গরুর মৃত্যু বন্ধ করা। অনিল জানাচ্ছেন, দেশের অধিকাংশ গরু আবর্জনার মধ্যে ফেলে দেওয়া সিঙ্গল ইউজ প্লাস্টিক খেয়েই মারা যায়। প্লাস্টিক গরুর নানা রোগের অন্যতম প্রধান কারণও।
আরও পড়ুন- সাইকেলের থেকেও আস্তে চলে একটা ট্রেন! অবাক করবে ভারতের সবচেয়ে ধীর গতির এই ট্রেন
অনিলের এই সফরে সঙ্গে ছিল একটি মাত্র ব্যাগ, দু'টি কম্বল আর দুই শিশুসন্তান। অনিল চৌহান সাত মাসেরও বেশি সময় ধরে সাইকেল চালিয়েছেন। সূর্যাস্তের পরে মন্দির, বাস স্টপেজ, রেলস্টেশন বা ধর্মশালায় বিশ্রাম নিয়েছেন। সেখানকার মানুষজনই তাঁর এই সাইকেল ভ্রমণের কারণ জানতে পেরে তাঁকে খাবার ও জলের জোগান দিয়েছেন। যে যে এলাকার উপর দিয়ে অনিল চৌহান এগিয়েছেন, সেখানকার নানা স্কুল, প্রশাসন, গ্রামের প্রধান এবং স্থানীয়দের কাছ থেকে বিপুল সমর্থন পেয়েছেন তিনি। আর এই ভালোবাসার সম্পর্কগুলির পাশে বসেই গ্রামবাসী এবং শিশুদের সঙ্গে প্লাস্টিকের খারাপ দিক নিয়ে দীর্ঘ দীর্ঘ গল্প করেছেন তিনি, বলেছেন প্লাস্টিক পৃথিবীর গলা টিপে মারছে কীভাবে।
তবে দুই শিশুকে সঙ্গে নেওয়াতে সমস্যা বা ঝক্কি কম পোহাতে হয়নি। মেয়েদের নিয়ে এই অভিযানে রওনা দেওয়ার সময়ই দমন ও দিউতে তাঁর গ্রামের মানুষজনই নানা ঠাট্টা করেছেন। সেসবে কান দেননি বাবা অনিল। স্ত্রী সম্প্রতি মারা গিয়েছেন। দুই শিশুর সারাটা পৃথিবী তো তিনিই। মেয়েদের কার কাছেই বা রাখবেন? তাই শ্রেয়া এবং যুক্তিকে অভিযানের অংশ করে নিয়েছেন। বড় সফর, দীর্ঘ পথ, মেয়েরা সঙ্গে থাকায় কোনও বিপত্তি, ক্লান্তিই ছুঁতে পারেনি অনিলকে।
আরও পড়ুন- মাতৃদুগ্ধেও প্লাস্টিকের কণা! কতটা নিরাপদ আপনার শিশু
বাংলাদেশ যাওয়ার লক্ষ্যে অনেকখানি এগিয়েওছেন অনিল। বাংলাদেশে এই সাইকেল সফরের জন্য নিজের এবং দুই মেয়ের জন্য পাসপোর্টও বানিয়েছেন। ভিসা পাওয়ার ব্যাপারে বেশ আশাবাদী অনিল। তাঁর এই সাইকেল ভ্রমণ আদৌ কোনও প্রভাব ফেলবে প্লাস্টিক বন্ধের উপর? অনিল বলছেন, দেশে একক-ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের উপর অনেক বিধিনিষেধ রয়েছে। কিন্তু সবটাই খাতায় কলমে, তা কার্যকরীভাবে প্রয়োগ করা হয় না৷ এই প্লাস্টিক উৎপাদনকারী কারখানার বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থাও নেওয়া হয় না। একক-ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক পণ্য তৈরি করা সংস্থাগুলি বন্ধ না হলে সমাধান হবে না সমস্যার, মনে করেন তিনি।
একটি হিসেব বলছে, দেশে প্রতি বছর ৩৫ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক বর্জ্য তৈরি হয়। তথ্য বলছে, দেশে প্রতি বছর একজন মানুষ তিন কেজি প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপন্ন করেন। গভীরতর দূষণ সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্র সরকার গত বছরের ১ জুলাই থেকে একক-ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের উত্পাদন এবং ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করার নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু, আশেপাশে রমরমিয়ে প্লাস্টিকের ব্যবহারে কোনও লাগামই কি পড়েছে? উত্তর জানা সকলেরই।