জলে নামতেই গলে পাঁক সারা দেহ! জানেন, কেন উষ্ণ প্রস্রবণে স্নান এতখানি ভয়াবহ?

Yellowstone Hot Spring Mystery: রোজের চা বা কফিতে যেভাবে চিনি গুলে মিশে যায়, মানুষের হাড় চামড়া, পোশাক সহ গিলে খেয়ে নিতে পারে এই উষ্ণ প্রস্রবণগুলি।

উষ্ণ প্রস্রবণ বিষয়টি বিভিন্ন মানুষের কাছে বিভিন্নভাবে আকর্ষণের। ভারতের মতো দেশে উষ্ণ প্রস্রবণকে জুড়ে দেওয়া হয়েছে ধর্মের সঙ্গে, স্বাভাবিকভাবেই। নানা স্থানেই মানুষের বিশ্বাস, উষ্ণ প্রস্রবণ রোগ সারানোর অব্যর্থ দাওয়াই। কোথাও কোথাও আবার এই উষ্ণ প্রস্রবণ ভৌগলিক রহস্যের গর্ভাধার। পর্যটকদের আকর্ষণ রহস্যকে ঘিরেও, ধর্মকে ঘিরেও। ইয়েলোস্টোন ন্যাশনাল পার্কের কথা অনেকেরই শোনা। কিন্তু এই পার্কের নীচে যে বিশ্বের বৃহত্তম ম্যাগমা চেম্বারগুলির মধ্যে একটি রয়েছে, তা অনেকেই জানেন না। এই ম্যাগমা চেম্বারের কারণে পার্কের চারপাশে জলাধারের জল অবিশ্বাস্যভাবে গরম। শুধু তাই নয়, এই জলে অম্লতার পরিমাণও ব্যাপক বেশি। আরও রহস্য বাড়িয়েছে এক সাম্প্রতিক মৃত্যু। এই পার্কের এক উষ্ণ প্রস্রবণে স্নানে নেমে গলে গিয়েছেন এক ব্যক্তি! হ্যাঁ, গলে গিয়েছেন। সামান্য অবশেষটুকুও মেলেনি।

ইয়েলোস্টোনের এই প্রস্রবণ মানুষকে একেবারে শেষ করে দিতে বিন্দুমাত্র সময় নেয় না। সম্প্রতি বছর তেইশের এক ব্যক্তি পার্কের এমনই একটি গরম জলের প্রস্রবণে নেমেছিলেন। মারা তো যান অবশ্যই, কিন্তু দেহাংশ? এমন ভয়াবহ মৃত্যু কল্পনাও করা যায় না। স্নানই করতে চেয়েছিলেন ওই ব্যক্তি। যেমন আরও অনেকেই চান এই উষ্ণ প্রস্রবণে। জল আসলে কতটা গরম, নামলেই শরীর পুড়ে যাবে কিনা তা যাচাই করতে প্রথমে নিজের তর্জনীটি জলে ডুবিয়েছিলেন ওই যুবক। জলে আঙুল ডোবাতে গিয়ে হঠাৎ পিছলে গিয়ে একেবারে জলের মধ্যে পড়ে যান তিনি।

আরও পড়ুন- পিরানহা নয়, বিশ্বের প্রাচীনতম হ্রদে সত্যিই বাস ‘মানুষখেকো’ মাছের?

মৃত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল ওই যুবককে। জলের মধ্যেই ভেসে বেড়াচ্ছিল তাঁর দেহ কিন্তু কিছুতেই দেহ টেনে বের করা যাচ্ছিল না। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বহু চেষ্টা করেও ওই যুবকের ভেসে থাকা দেহ টেনে বের করার জন্য তাঁর ধারেকাছেও পৌঁছতে পারেননি। এরই মধ্যে ওঠে প্রবল ঝড়, সঙ্গে বজ্রপাত। সেই রাতে আর কোনওভাবেই ঝড়জল মাথায় নিয়ে যুবকের দেহ উদ্ধার সম্ভব হয়নি। পরের দিন ফিরে এসে কর্মকর্তারা দেখতে পান, ওই যুবকের আর কিছুই অবশিষ্ট নেই! মানিব্যাগ এবং পায়ের চটি ছাড়া সামান্য হাড়গোড়ের কণাটুকুও অবশিষ্ট নেই যুবকের দেহের।

ডেপুটি চিফ রেঞ্জার লরেন্ট ভেরেস পরে জানিয়েছিলেন, সেদিন জল বিশেষভাবে গরম এবং অম্লীয় ছিল। খুব সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যেই গরম অ্যাসিডিক জল সারা শরীর দ্রবীভূত করে ফেলে। ইয়েলোস্টোন ন্যাশনাল পার্কের এই জিওথার্মাল পুকুর, হ্রদ এবং প্রস্রবণগুলির গড় তাপমাত্রা প্রায় ৯৩° সেলসিয়াস (১৯৯° ফারেনহাইট)। কেবল জলের উপরিপৃষ্ঠেই এই তাপমাত্রা দেখা যায়, ভেতরে যত যাওয়া যাবে ততই বেশি তাপমাত্রা বাড়বে। এই কারণেই বেশিরভাগ উষ্ণ প্রস্রবণের চারপাশে প্রবল সতর্কতার বার্তা লেখা থাকে। অনেক প্রস্রবণ ঘিরে দেওয়াও থাকে যাতে কেউ জলের কাছকাছিই না যেতে পারেন।

এই প্রায় ফুটন্ত জলের আধারগুলি কেবলমাত্র আর্কিয়া নামে পরিচিত একটি বিশেষ জীবেরই বাসযোগ্য। মানুষ তো আর মাইক্রোস্কোপিক, এক্সট্রিমোফিলিক প্রজাতির কোনও প্রাণী বা জীব নয়। ফলে এই জাতীয় উষ্ণ প্রস্রবণের ধারেকাছে যাওয়া প্রবল বিপজ্জনক। রাতারাতি দেহ গলে চলে যাবে জলের গভীরে। রোজের চা বা কফিতে যেভাবে চিনি গুলে মিশে যায়, মানুষের হাড় চামড়া, পোশাক সহ গিলে খেয়ে নিতে পারে এই উষ্ণ প্রস্রবণগুলি।

১৮৯০ সাল থেকে ইয়েলোস্টোন ন্যাশনাল পার্কে এবং এর আশেপাশে উষ্ণ প্রস্রবণে কমপক্ষে ২২ জন মানুষের মৃত্যু ঘটেছে। ইয়েলোস্টোনের জল এত বিপজ্জনক কারণ এই জায়গাটি ভূতাত্ত্বিকভাবে সক্রিয় আগ্নেয়গিরির উপরে অবস্থিত। মানে এর পৃষ্ঠের ঠিক নীচেই ম্যাগমার বুদবুদ রয়েছে। এই উত্তপ্ত লাভাই এলাকার পুকুর এবং উষ্ণ প্রস্রবণগুলিকে এতখানি গরম করে তুলেছে। পার্কের সমস্ত গিজারগুলির মধ্যে সবচেয়ে উষ্ণ হচ্ছে নরিস গিজার। এটি ভূগর্ভস্থ আগ্নেয়গিরির তিনটি প্রধান চ্যুতি বা ফাটলের সংযোগস্থলে অবস্থিত। এখানকার জলের উষ্ণতা ১২১ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠতে পারে। পার্কের বাকি জলের থেকে এই প্রস্রবণের জল অত্যন্ত অম্লীয়। এই বিষাক্ত জলে বিশেষ এক ব্যাকটেরিয়া বেড়ে ওঠে যার কারণেই জলের রংও এমন বিচিত্র।

More Articles