মণিপুরে চুপ থাকা মানে মেরি-রতন থিয়ামদের অপমান করা! মোদির উদ্দেশ্যে মণিপুরের সাংসদ
Lok Sabha Session 2024: মণিপুরের পরিস্থিতি নিয়ে মোদি সরকারকে তীব্র আক্রমণ করেন সে রাজ্যের সাংসদ আঙ্গোমচা বিমল আকোইজাম। রাজ্যের ভয়াবহ ট্র্যাজেডির নীরব দর্শক হয়ে থেকেছে মোদি সরকার, সেই অভিযোগও তোলেন তিনি।
২০২৩ সালের জুন মাস। জাতি সংঘর্ষে উত্তাল হয়ে উঠেছিল মণিপুর। কুকি ও মেইতেই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে অসংখ্য মৃত্যু, নারীদের উপর অকথ্য অত্যাচার। এমনকী নগ্ন করে নির্যাতিতাকে হাঁটানোর অভিযোগ পর্যন্ত ওঠে মণিপুরে। সেই সমস্ত কিছু নিয়েই মুখে কুলুপ এঁটে রেখেছিল দেশের কেন্দ্র সরকার। মণিপুরের অশান্তিকে ধামাচাপা দিতে কেন্দ্রের তরফে ঘোষণা করা হয়েছিল, স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ফিরে গিয়েছে মণিপুর। হিংসায় বিদীর্ণ মণিপুরে শান্তি ফেরানোর কৃতিত্বও দেওয়া হয় দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও সে রাজ্যের বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিংকে। মণিপুর হিংসায় মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছিল ২২৫। জখম অন্তত ১৫ হাজার মানুষ। ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন ৭০ হাজার মণিপুরবাসী। অথচ হিংসাদীর্ণ মণিপুরে এর পরেও একবারও পদধুলি পড়েনি প্রধানমন্ত্রীর। লোকসভা ভোটের ফলাফলে বিজেপিকে সেই হিসেব কড়ায় গন্ডায় বুঝিয়ে দিয়েছে মণিপুরবাসী। ইনার মণিপুর কেন্দ্রে কংগ্রেসের প্রার্থী অঙ্গোমচা বিমল আকোইজমকে মণিপুরের মানুষ জেতায় ১ লক্ষেরও বেশি ভোটে। মুখ থুবড়ে পড়েন বিজেপির প্রতিদ্বন্দ্বী। আউটার মণিপুরেও বিপুল জয় পায় কংগ্রেস প্রার্থী আলফ্রেড কাঙ্গাম এস আর্থার। অবশেষে লোকসভায় নিজের রাজ্যের কথা বলার প্রতিনিধি পেয়েছে মণিপুর। আর লোকসভা অধিবেশনের প্রথম অধিবেশনেই তা বুঝিয়ে দিলেন সেখানকার সাংসদ অঙ্গোমচা বিমল আকোইজম।
রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর ভাষণে উল্লেখ ছিল না মণিপুরের। এমনকী প্রধানমন্ত্রীর কথাতেও একবারও আসেনি মণিপুর। সেই প্রসঙ্গটি নিয়ে সোমবার লোকসভা অধিবেশনে তোপ দেগেছিলেন বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধি। মণিপুরকে সরাসরি গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে বলেই কটাক্ষ করেন রাহুল। তার পর মঙ্গলবার মণিপুরের পরিস্থিতি নিয়ে মোদি সরকারকে তীব্র আক্রমণ করেন সে রাজ্যের সাংসদ আঙ্গোমচা বিমল আকোইজাম। রাজ্যের ভয়াবহ ট্র্যাজেডির নীরব দর্শক হয়ে থেকেছে মোদি সরকার, সেই অভিযোগ তুলেও এদিন ক্ষোভ উগরে দেন তিনি। পাশাপাশি কেন রাষ্ট্রপতির বক্তৃতা থেকে বাদ পড়ল মণিপুরের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, সে নিয়েও তোপ দাগেন তিনি।
আরও পড়ুন: মোদির প্রিয় ম: মুসলিম, মাদ্রাসা, মাংস… মণিপুর কই? প্রশ্ন মহুয়ার
একদিন আগেই রাহুল গান্ধি সরাসরি মোদি সরকারকে নিশানা করে বলেছিলেন, তিনি সরাসরি অভিযোগ করেন, সরকার এমন আচরণ করছে যেন মণিপুরে কিছুই হয়নি । সংসদে রাহুলের কথায়, "মণিপুর আপনার, আপনাদের নীতি এবং আপনাদের রাজনীতির জন্য পুড়ে গিয়েছে ৷" বিরোধী দলনেতা আরও বলেন, "মনে হচ্ছে যেন মণিপুর ভারতের কোনও রাজ্যই নয় ! প্রধানমন্ত্রীর জন্য, মণিপুর রাজ্য নেই। আমরা প্রধানমন্ত্রীকে একটি বার্তা দিতে, সেখানে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেছি। কিন্তু না, প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে কোনও উত্তর পাবেন না৷"
এদিন মণিপুরের সাংসদ আঙ্গোমচার গলাতেও শোনা গিয়েছে একই সুর। এদিন তিনি কেন্দ্র সরকারকে মনে করিয়ে দেন মণিপুরের বর্তমান পরিস্থিতির কথা। কীভাবে ৬০ হাজারেরও বেশি মানুষ এখনও গৃহহীন মণিপুরে। অনেকেই তাঁদের মধ্যে কোনও মতে মাথা গুঁজেছেন শরণার্থী শিবিরে। এক বছর কেটে গেলেও মণিপুরের পরিস্থিতি পাল্টায়নি। মানুষ কীভাবে বেঁচে রয়েছেন, তা বর্ণনার অতীত বলেই এদিন সংসদে জানান কংগ্রেস সাংসদ। আঙ্গোমচা জানান, মণিপুরের প্রতি বর্গকিলোমিটার জায়গা জুড়ে আজও মোতায়েন রয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। হিংসায় ধ্বংস হয়ে গিয়েছে হাজার হাজার ঘরবাড়ি। অথচ প্রধানমন্ত্রী নীরব। রাষ্ট্রপতি এড়িয়ে যাচ্ছেন মণিপুরের কথা।
মণিপুরের ট্র্যাজেডিকে দেখেও না দেখার চেষ্টা করে গিয়েছে বিজেপি সরকার। নিজের দেশেই ব্রাত্য যেন রাজ্যটি। প্রধানমন্ত্রী নিজের দেশের একটি রাজ্যকেই অসম্মান করছেন, সে দেশের বীর সেনাদের অসম্মান করছেন। মেরি কম, মীরাবাঈ চানু বা রতন থিয়ামের মতো ব্যক্তিত্বদের অসম্মান করা হচ্ছে, যাঁরা আদতে ওই মণিপুরের মানুষ। যে রাজ্যকে নিয়ে বিন্দুমাত্র মাথাব্যথা করতে রাজি নয় কেন্দ্র সরকার। মণিপুর নিয়ে কথা বলা হোক, দাবি তোলেন আঙ্গোমচা।
আরও পড়ুন: হিন্দু মানেই বিজেপি নয়, অযোধ্যা শিক্ষা দিয়েছে, লোকসভায় রাহুল
শুধুমাত্র রাহুলই নয়, সোমবার তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রের ভাষণেও উঠে আসে মণিপুরের প্রসঙ্গ। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে, মুসলিম, মাদ্রাসা, মাটন, মছলির মতো শব্দের উল্লেখ থাকে। কিন্তু নির্বাচনী প্রচারে একবারও মুখ দিয়ে বেরোয় না মণিপুরের কথা। মণিপুরের মানুষদের পাশে থাকার কথা সেদিনের ভাষণে উল্লেখ করেছেন মহুয়া। একের পর এক সাংসদ মণিপুর প্রসঙ্গে বিঁধেছেন নরেন্দ্র মোদি সরকারকে। সত্যিই কি তাতে পরিস্থিতি বদলাবে। মোদি কিংবা বিজেপি সাংসদদের মুখে শোনা যাবে আদৌ মণিপুর-উচ্চারণ? সেদিকেই তাকিয়ে দেশবাসী।