নগ্ন করে হাঁটানোর ভিডিও করলেন যারা, 'পুরুষের ধর্ম'ই পালন করলেন তারা
Women of Manipur: সনাতনী হিন্দু ধর্মের ফোড়ন দিয়ে যদি সঞ্চিত সম্পদসহ জমি দখল করা যায়, আগ্রাসনের খাতায় জমার অঙ্কটা বাড়বে বৈ কমবে না।
বিশ ত্রিশ বছরের পুরনো মন্দিরে দেখা যায়, কৃষ্ণের পাশে রাধা এবং রামের পাশে লক্ষ্মণ ও সীতা। সে মূর্তিগুলির হাসি স্মিত, মুখমণ্ডল স্নিগ্ধ প্রশান্তি মাখা। পেশিবাহুল্য অনুপস্থিত। কৃষ্ণের হাতে বাঁশি আর রাম-লক্ষ্মণের কাঁধে ধনুক থাকলেও তা নেহাত আলঙ্কারিক। ইদানীং দক্ষিণপন্থীদের কল্যাণে সেই ইমেজে বেশ খানিকটা রদবদল ঘটেছে। হালের ডিজিটাল ইমেজ, স্টিকার, ক্যালেন্ডারে সেই স্নিগ্ধ, কোমল, স্মিত হাসি মিলিয়ে গিয়ে এঁরা পেশিবহুল, সশস্ত্র, মুখ বজ্রকঠিন ও নারী বিবর্জিত। সকলেই হয়ে উঠেছেন পুরুষতান্ত্রিক ক্ষমতাসীনদের আগ্রাসী প্রতীক। অবশ্য এ তো আর একদিনে গড়ে ওঠেনি, সবই চলে আসছে রামায়ণ ও মহাভারতের কাল থেকে। আর কট্টর হিন্দুত্ববাদীরা নিজের স্বার্থসিদ্ধিতে মহাকাব্যকে দরকার মতো অনুসরণ করে এক ঢিলে অনেক পাখি মারছে! মহাকাব্যের লেখকরা যতই নায়িকাদের ওজস্বীনি, দৃপ্ত ও সক্ষম করে গড়ে তুলুন না কেন, নায়িকারা সুবিচার পেয়েছেন কি? পুরুষতান্ত্রিক ক্ষমতার কাছে তাঁরা শেষ পর্যন্ত নারী বৈ আর কিচ্ছুটি তো নন। নানা আখ্যান বলে, নায়িকা, খলনায়িকা, সামান্য-অসামান্য... যে কোনও নারীই শেষ পর্যন্ত দাবার বোড়ে ও ভোগ্যা। হিন্দুত্ববাদী দক্ষিণপন্থীরা তাই বেছে বেছে সমতুল্য চিত্রনাট্য রচনা করছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। বর্তমানে সেই চিত্রনাট্যের নয়া বধ্যভূমি মণিপুর। ক্ষমতা দখলের দাবা খেলায় সেখানকার মহিলারা আবারও মাংসপিণ্ডের বোড়ে ছাড়া কিচ্ছুটি নন।
আগ্রাসী হিন্দুত্ববাদীদের দিল্লি দখলের প্রধান হাতিয়ার বিষ্ণুর অবতার রাম। ক্ষমতাসীন হয়ে তারা রামকে দেশের একমাত্র আরাধ্যে পরিণত করায় কোনও ত্রুটি রাখেনি। আর মসনদে থিতু হতে না হতেই তাদের আর এক হাতিয়ার কৃষ্ণ। পুরুষতন্ত্র ও ক্ষমতাতন্ত্রের ঐশ্বরিক রূপক। জগৎ স্থিতিশীল রাখতে অধুনা ভগবানে উত্তরিত বিষ্ণুর এই দুই অবতার ধরাধামে অবতীর্ণ হয়েছেন। সে সময় সংসার রক্ষার্থে অস্ত্রের ঝনঝনানিও শোনা গিয়েছে। ২০১৪ উত্তর কালে এই সব ধর্মীয় সমরাস্ত্রের শব্দ আরও জোরদার হয়েছে। সেই সঙ্গে জুটেছে শৌর্যের আধুনিকতম হাতিয়ার মোবাইল ক্যামেরা। মণিপুরের বর্বর ঘটনার ভিডিও গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ায় সংবেদনশীল একদল মানুষ শিউরে উঠেছে। ভেবে দেখার বিষয়, যে কাজ সমাজের এক অংশের জন্য অমানবিক, নৃশংস, অন্য মানসিকতায় তা চরম পুরুষত্ব নয় তো? পৌরুষ প্রমাণের এত নির্লজ্জ নথি গোপনীয়তার বিষয় তো নয়ই, বরং তা শৌর্য, বীর্যের প্রকাশ। পাঠকের মনে থাকতে পারে, ২০১৪-র ঠিক পরপর গুজরাতে চামারদের গণধোলাইয়ের ভিডিও। এক দলিতের ঘোড়ায় চড়ে বিয়ে করতে যাওয়ার ‘অপরাধ’-এ তাঁকে ঘোড়া থেকে নামিয়ে গণধোলাই দেওয়া হয়, ঘটনাটি ভিডিও করা হয়। হালে দেখা গেছে, এক বিজেপি বিধায়কের চ্যলার এক দলিতের গায়ে প্রস্রাব করার ভিডিও। প্রায় স্থায়ীভাবে স্মৃতিতে গেঁথে রাখার জন্য বা ডকুমেন্ট করে রাখার এই গোটা প্রক্রিয়াটা দ্বিগুণ তাৎপর্যপূর্ণ ওঠে তখনই যখন দেখা যায় দুই-তিন-চারজন আদিবাসী মহিলাকে লাঞ্ছনার ঘটনায় অত্যাচারীরা তা আড়ালের কোনও চেষ্টাই করেন না। লক্ষণীয়, অত্যাচারিতরা সমাজের নিচু তলার। হিন্দুসমাজে তাদের অস্তিত্ব প্রান্তিক, অপর। শূর্পনখার নাক কাটায় লক্ষ্মণের বীরত্ব বৈধ, সর্বসমক্ষে দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণে ‘বিজয়ী’ দলের আত্মশ্লাঘাও তাই। তেমনই দুই কুকি মহিলার সঙ্গে ঘৃণ্য, নারকীয় আচরণ সর্বসমক্ষে ঘটিয়ে ফেলার অর্থ, মহিলাকে, অবমানবকে কেবলই উপভোগ্য (তা বিকৃতও হতে পারে) মাংসপিণ্ড ভাবাটাই দস্তুর। জনসমক্ষে দুই জনজাতি মহিলার চূড়ান্ত লাঞ্ছনাও একাংশের কাছে বীরত্ব। কে বলতে পারে, এ ঘটনার রেকর্ডকারী বা পৃথিবীর বিভিন্ন কোণের দর্শকের মধ্যে এক ছটাকও দর্শকামীর উপভোগ্যতা মিশে নেই? এ প্রদর্শন ক্ষমতাতন্ত্র নয়? পুরুষত্ব নয়?
আরও পড়ুন- কাশ্মীর থেকে মণিপুর, ক্ষমতার হাতিয়ার যখন ‘ধর্ষণ’
যদিও মহাকাব্যিক চরিত্র মেনে দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণের কেলেঙ্কারি থেকে রক্ষা করেছিলেন কৃষ্ণ। এ কলিতে কৃষ্ণোচিত শিভালরি নেই। বরং যখন জানা যায়, লাঞ্ছনাকারী মেইতেই গোষ্ঠীর সিংহভাগ বৈষ্ণব, তখন বিজেপির কষা দুইয়ে দুইয়ে চার মেলানো খানিকটা সহজ হয়! মনে রাখা দরকার, মণিপুরের বর্তমান বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী মেইতেই ক্ষত্রিয়। এই মেইতেই গোষ্ঠী মূলত ইম্ফল উপত্যকার বাসিন্দা। নাগরিক। শাসন ও প্রশাসনের ভার প্রাথমিক ভাবে এদের নিয়ন্ত্রণাধীন। আধুনিক সভ্যতার স্বত্বভোগী। নিজেদের মণিপুরের ভূমিপুত্র এবং সংস্কৃতির ধারক ও বাহক বলে দাবি করে তারা। মহাকাব্যেই বহুবার দেখা গিয়েছে, বর্ণাশ্রমের বাইরের মানুষজন (কিরাত, নিষাদ ইত্যাদি) মাটি জঙ্গলের কাছাকাছি। সেই প্রথা মেনে এখানকার জনজাতিরাও মূলত রাজ্যের জঙ্গলে ঘেরা পাহাড়ি এলাকার বাসিন্দা। মেইতেই-কুকি বিরোধ যথেষ্ট পুরনো। সমাজের মূলস্রোতের সঙ্গে রাজ্যের বিভিন্ন জনজাতির বিরোধের জেরে গোটা মণিপুর জুড়ে ছুটকোছাটকা ঝামেলা লেগেই থাকত। সে অশান্তি থামাতে সরকার প্রায় দেড় দশক আগে এক শান্তিচুক্তি করেছিল। তাও যে ঝামেলা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, তা নয়! তবে পট পরিবর্তন ঘটল এই মার্চে। শান্তিচুক্তি তুলে নেওয়ার মাস দুয়েকের মধ্যে আগুন জ্বলে ওঠে মণিপুরে।
আসলে এর মধ্যেও আর্থ-সামাজিক, ঐতিহাসিক-রাজনৈতিক, প্রাকৃতিক, গোষ্ঠী, ধর্ম সহ সূক্ষ্ম জটিলতার তন্তুজাল রয়েছে। ভারতের গোটা উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে মূলস্রোতের যে কোনও ধরনের যোগসূত্র বহুদিন ধরেই ছিল বেশ কম। এই অঞ্চলের প্রতি দিল্লির শাসকদলের অনুকম্পা ছিল, এদের নিয়ে বাগাড়ম্বরে ভর্তি গল্প মূল ভূখণ্ডে ঢাকঢোল পিটিয়ে পরিবেশন করাও ছিল। কিন্তু মন ছিল না। এ সব সত্ত্বেও, ভূ-রাজনৈতিক জটিলতায় পড়ে অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদে দিল্লি যখন পূবে তাকাল, তখন বেশ খানিকটা দেরি হয়ে গিয়েছে। স্বার্থান্বেষী ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের হাতে পড়ে চিন থেকে শুরু করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেকটা এলাকা আফিম উৎপাদনের প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠেছিল। তাছাড়া এলাকা, অঞ্চল, দেশ নির্বিশেষ বহু জনজাতির মধ্যেই নেশা ব্যাপারটা বিড়ম্বনার বিষয় নয় আদপেই। বরং আজকের নিরিখে অনেক ক্ষেত্রেই অর্থনৈতিকভাবে দুর্বলদের জন্য নিষিদ্ধ মাদক কাঁচা টাকার বিশ্বস্ত জোগানদার। ফলে স্বাধীনতার পর থেকে মায়ানমার (বর্মা) সীমান্তবর্তী মণিপুরের প্রত্যন্ত, দুর্গম ও অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল এবং নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত পাহাড়ি জনজাতিরা কাঁচা টাকার লোভে নিষিদ্ধ আফিম চাষে মন দিল নতুন করে। মণিপুর থেকে লাওস, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনামের দূরত্ব দিল্লির মতো দূরে নয়। ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থে এই অঞ্চলে, যার পোশাকি নাম গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গল, নিষিদ্ধ মাদকের রমরমা ব্যবসা। আর কে না জানে, নিষিদ্ধ মাদকের সঙ্গে বেআইনি অস্ত্র ব্যবসার যোগাযোগ কতটা নিবিড়! ফলে নেশার ফাঁদে পা দিতে কুকি, জো, মিজোরা বেশি সময় নেয়নি।
আরও পড়ুন- স্বামীশ্রেষ্ঠ, পুরুষোত্তম নন, রামায়ণে রামকে আসলে যেভাবে এঁকেছেন মহিলারা…
এছাড়াও ইতিউতি হাওয়ায় ভাসছে, হিমালয়ের এই অংশ দামি খনিজে পরিপূর্ণ। ফলে সবকা বিকাশের হাতে এ তো চাঁদ বটেই। পূবে তাকিয়ে, তাতে খানিক চরিত্র এবং শ্রেণিগত পরিচয় প্রতিষ্ঠার মশলা আর সনাতনী হিন্দু ধর্মের ফোড়ন দিয়ে যদি সঞ্চিত সম্পদসহ জমি দখল করা যায়, আগ্রাসনের খাতায় জমার অঙ্কটা বাড়বে বৈ কমবে না। মেইতেইদের মণিপুরের ভূমিপুত্র দাবির আবেগকে সন্তর্পণে হাওয়া দেওয়া চলছে। ভারত তো সনাতনীভাবে বীরভোগ্যা বসুন্ধরায় বিশ্বাসী। দরকারে মাটিকে চষে, গুঁড়িয়ে, ভেঙে, খুঁচিয়ে, ঘষে ফালাফালা করে পৃথিবীকে (উপ)ভোগ করবে বীর। মহাকাব্যিক চিত্রনাট্য ও ছক মিলিয়ে, কেন্দ্র ও রাজ্যে বিজেপি তার শক্ত হাত আরও শক্তিশালী করতে চুক্তি প্রত্যাহার তো করেইছে, সেই সঙ্গে আফিম চাষের গোড়ায় আগুন দিতে রীতিমতো অভিযান চালিয়ে জনজাতিদের একাধিক গ্রাম উৎখাত করেছে। সংখ্যাগুরু মেইতেইরা যদি জনজাতির তকমা পেয়ে যায়, তাহলে তো আদিবাসীদের জমি দখলে কোনও সমস্যা থাকবে না। তাই ধিকিধিক হোক বা দাউদাউ, ডবল ইঞ্জিনের রাষ্ট্রীয় মদতে বিভেদের আগুন আরও জ্বলবে। ইতিহাসের পুনরাবৃত্তির তত্ত্ব মেনে খুব যত্নে তাতে হাওয়া দিচ্ছে হিন্দুত্ববাদী ক্ষমতা। মহাকাব্যের কালেও সাম্রাজ্য বিস্তারের জন্য কিরাত, নিষাদ, অরণ্যবাসীদের উৎখাত করা হয়েছে। রামায়ণে বানর (তিনি নর নন) কুলের রাজা, কিষ্কিন্ধার রাজা বালি পরাক্রমশালী। এক আদর্শ ক্ষত্রিয় নিজের স্বার্থে তাঁকে নিয়ম লঙ্ঘন করেও হত্যা করতে পারে কারণ ‘অবমানব’ বা অপরকে হত্যা করা জায়েজ! এরা অর্থাৎ শম্বুক, ঘটোৎকচ, অধিরথ, গুহের মতো চরিত্র (বর্তমান প্রেক্ষিতে তাঁরা দলিত তকমার জোরালো দাবিদার) বলির পাঁঠা হয়েছে। আর সনাতনী আফিম হিসেবে ভারতের মূল ভূখণ্ডে মুসলমান বিদ্বেষের মতো খ্রিস্টান অধ্যুষিত উত্তরপূর্বাঞ্চলেও শুরু হয়েছে সংখ্যালঘু বিদ্বেষ কারণ, এখানকার জনজাতিরা প্রধানত খ্রিস্টান।
তবে মেয়েদের ক্ষেত্রে বিষয়টা একটু আলাদা। মহিলাদের জাত ধর্ম অপ্রয়োজনীয়। তাঁরা বাঁজা না উৎপাদনক্ষম, তাতেও বিশেষ যায় আসে না। কারণ মহিলা বীরভোগ্যা মাংসপিণ্ড ও পুরুষত্ব প্রমাণের বোড়ে। সেই সীতার কাল থেকে! তাঁর স্বয়ম্বর সভায় বহু বিত্তশালী, প্রতিপত্তিবান পুরুষ থাকতেও সীতাকে (লাঙলের ফাল) পেলেন রাম। সীতার জন্যই সোনার লঙ্কা বিজয় (সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন?)! রামরাজ্যের গ্র্যান্ড ন্যারেটিভ তৈরিতে সীতাকে পাতাল প্রবেশ করতে হয়নি? মহাভারতে দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণের মতো ঘটনার পরেও ধর্মকে স্থাপন করতে মহাপ্রস্থানে সবার আগে দেহত্যাগ করেন দ্রৌপদী। কারণ তাঁর মানুষী চরিত্র। ধর্মস্থাপনে এসব মানুষী আচরণ অপাংক্তেয়। তাই সবার আগে প্রয়াণ ঘটে তাঁর। নবনীতা দেবসেন, দে’জ প্রকাশিত (প্রথম প্রকাশ: জানুয়ারি ২০১৬) চন্দ্র-মল্লিকা এবং প্রাসঙ্গিক প্রবন্ধ-র নায়িকা-সংবাদ : প্রচী ও প্রতীচীতে লিখেছেন,
"… মহাকাব্যের রীতি অনুযায়ী নারীর সুখী হবার প্রায় কোনও রাস্তাই খোলা নেই। নারীর দুঃখের পথ বেয়েই পুরুষের বীর্য পৌরুষ প্রমাণিত হয়। মহাকাব্যের নারীর ব্যক্তিগত সুখের কামনা থাকতে নেই।" (পৃঃ ৩৮)
সেই ছবিই তো যুগ যুগ ধরে বহমান। নারী শিক্ষা, নারী আন্দোলন, নারী ক্ষমতায়নে যাও বা আশার আলোর সম্ভাবনা ছিল, ক্ষমতালিপ্সু পুরুষতান্ত্রিক হিন্দুত্ববাদীদের কাছে তা পথের কাঁটা। তাই মহাকাব্যিক ছক মেনে, কাশ্মীরে, উত্তরপ্রদেশে, ছত্তিশগড়, কর্ণাটকে নারীকে ত্রস্ত করে, অপমান করে, দুঃখ দিয়ে তাকে পায়ের তলায় রাখার খেলা শুরু হয়েছে। সেটাই পুরুষের ধর্ম।