মেসিকে চূড়ান্ত অপমান করছিলেন মারাদোনা? কোন শিক্ষা দিতে চেয়েছিলেন
FIFA World Cup 2022 : মেসির সম্পর্কে অভিযোগ ছিল মারাদোনার। অনেক সময়ই সেই ‘অভিযোগ’ বলে ফেলতেন ক্যামেরার সামনে।
২০১৪ এবং ২০১৮ – গত দু’টি বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা এবং লিওনেল মেসি মাঠে নামলেই তাঁর দিকে চলে যেত ক্যামেরা। ময়দানে তিনি থাকুন বা না-ই থাকুন, বিশ্বকাপ এলে দিয়েগো আর্মান্ডো মারাদোনা নামের দস্যি মানুষটির দিকে মুখিয়ে থাকত গোটা সংবাদমাধ্যম। ২০১০ সালে তিনি নিজেও আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের কোচ ছিলেন। কাছ থেকে দেখেছেন নিজের প্রিয় শিষ্যের খেলা। কিন্তু হঠাৎ করেই যেমন এসেছিলেন, তেমন আচমকাই মৃত্যু তাঁর দিকে ধেয়ে এসেছিল। মারাদোনার অবর্তমানে মেসিরা ফের বিশ্বকাপ ফাইনালে। ফলাফল কী হবে, এখনও কেউ জানে না। কিন্তু বছর ছয়েক আগের একটি ঘটনা বারবার মনে পড়ছে ফুটবল মহলের।
পেলে না মারাদোনা – পৃথিবী থেকে এই বিতর্ক কখনও শেষ হবে না। দুই কিংবদন্তিই এই তুলনা উপভোগ করতেন। পেলে এবং মারাদোনার বন্ধুত্বও ছিল গভীর। তবে একটু একটু করে সেই রাস্তায় চলে এলেন লিওনেল মেসি। মারাদোনা না মেসি – শুরু হল নতুন বিতর্ক। মারাদোনা সবসময় বুকে জড়িয়ে রেখেছেন আর্জেন্টিনার ভবিষ্যৎ স্বপ্নকে। কিন্তু…
মেসির সম্পর্কে একটি অভিযোগ ছিল মারাদোনার। অনেক সময়ই সেই ‘অভিযোগ’ বলে ফেলতেন ক্যামেরার সামনে। ২০১০ ফুটবল বিশ্বকাপের সময়ও বলেছিলেন, মেসি বিশ্বমানের ফুটবলার হলেও ‘মানসিকভাবে দুর্বল’। অতিরিক্ত চাপ নিতে পারেন না। সেইসঙ্গে অত্যাধিক ভদ্র ব্যবহার। ফুটবল মাঠ হল কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ, সেখানে অত ভদ্রতা চলে নাকি? এটাই ছিল মারাদোনার যুক্তি।
২০১৬ সাল। তখনও বার্সেলোনায় খেলছেন লিওনেল মেসি। দুই বছর আগে বিশ্বকাপের ফাইনালে গিয়েও হেরে যান। ২০১৬-তে একটি অনুষ্ঠানে একসঙ্গে উপস্থিত হন পেলে এবং মারাদোনা। সেখানেই উঠে আসে মেসির প্রসঙ্গ। পেলে মারাদোনাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, “ব্যক্তিগত ভাবে মেসিকে চেনো?” মারাদোনা “হ্যাঁ” বলার পর পেলে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ব্যক্তিগত জীবনে মেসি ঠিক কেমন? মারাদোনার সোজা সাপ্টা উত্তর, “মেসি খুবই ভালো মানুষ। কিন্তু ওর কোনও ব্যক্তিত্ব নেই! ও আর্জেন্টিনার ক্যাপ্টেন। সেই অনুযায়ী ব্যক্তিত্ব একেবারেই নেই। দুর্বল।” পেলেও সেই বক্তব্যের সঙ্গে কিছুটা একমত হয়েছিলেন।
ফুটবল মাঠ হোক, বা মাঠের বাইরে, মারাদোনা বরাবরের বর্ণময় চরিত্র। একা হাতে বিশ্বকাপ জিতিয়েছেন, রাজত্ব করেছেন বুক চিতিয়ে। নম্রতা নয়, বরং বুনো ঝড় দিয়েই বিপক্ষকে গুঁড়িয়ে দাও। যুদ্ধক্ষেত্রে এটাই নিয়ম - এমনটাই মনে করতেন আর্জেন্টিনার কিংবদন্তি। আর তাঁর সঙ্গেই তুলনা করা হয় মেসিকে। মেসির মধ্যে সেই জিনিসটা সেই সময় দেখতে পাননি মারাদোনা। 'লড়কে লেঙ্গে' মানসিকতা নেই, সেইসঙ্গে নেই চাপ সামলানোর ক্ষমতা। মেসি নিয়ে এমনই মনোভাব ছিল মারাদোনার।
আর ২০২২? সাধারণ ফুটবল ভক্ত থেকে বিশেষজ্ঞ, সমালোচক – প্রত্যেকের বক্তব্য একটাই। ২০২২ বিশ্বকাপের মেসির সঙ্গে আগের মেসিকে মেলালে হবে না। এই মেসি সম্পূর্ণ আলাদা। কেবল আক্রমণ ভাগ নয়, দলকে বাঁচাতে রক্ষণেও নেমে আসে। ফুটবল মহলের নিশ্চয়ই মনে পড়বে ২০২১-এর কোপা আমেরিকা ফাইনালের কথা। টানেলে দাঁড়িয়ে সতীর্থদের নিয়ে মেসির পেপ টক। মাঠের মধ্যে ভদ্র ইমেজ সরিয়ে রাগী মেসি। মারাদোনা নিশ্চয়ই মিস করছেন এসব। এই মেসিকেই তো দেখতে চেয়েছিলেন্তিনি! ডাকাবুকো জাদুকর নিশ্চয়ই এই মেসিকে আপন করে নিতেন। অন্যান্য আর্জেন্টিনীয়দের মতো তিনিও ফের স্বপ্ন দেখতেন।