'চাকরি থাকবে তো?' এই চিন্তায় বারোটা বাজছে কিডনির! চাপের মধ্যেও কীভাবে সুস্থ থাকবেন
Mass Layoff Stress Kidney Disease : গোটা পৃথিবী জুড়ে এই বিপুল সংখ্যক কর্মী ছাঁটাইয়ের খবরে রাতের ঘুম আরও উড়ে গিয়েছে সাধারণ মানুষের।
‘ছাঁটাই’ – এই একটি শব্দ বরাবরই মানুষের জীবনে দুঃস্বপ্নের মতো চলে আসে। চাকরি থাকবে তো? ঘুমোতে যাওয়ার সময় এই চিন্তা প্রায় সমস্ত কর্মরত মানুষের মনে আসে। বিগত কয়েক মাস ধরে এই চিন্তা যেন মারণ ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। খবরের কাগজ, ডিজিটাল মিডিয়ার পাতা খুললেই দেখা যাচ্ছে নিত্যনতুন কর্মী ছাঁটাইয়ের কিসসা। গোটা পৃথিবী জুড়ে এই বিপুল সংখ্যক কর্মী ছাঁটাইয়ের খবরে রাতের ঘুম আরও উড়ে গিয়েছে মানুষের।
বিগত বছরের নভেম্বর থেকে গোটা বিশ্বে শুরু হয়ে ব্যাপক হারে কর্মী ছাঁটাই। সবচেয়ে বেশি প্রবণতা দেখা যাচ্ছে কর্পোরেট, তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে। গুগল, অ্যামাজন, মেটা বা ফেসবুক সহ বড় বড় আইটি কোম্পানিগুলি ব্যাপক হারে কর্মীদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করছে। কখনও একদিনে ১১ হাজার, কখনও ৭০০০ আইটি কর্মীর চাকরি চলে যাচ্ছে। আর এমন ঘটনা প্রায় প্রতিদিনই হচ্ছে। কোনওরকম নোটিশ ছাড়া রাতারাতি কাজ হারাচ্ছেন বিপুল সংখ্যক মানুষ।
চাকরি ছাঁটাই ও দুশ্চিন্তার ঝড়
প্রতিদিন এই বিপুল সংখ্যায় কর্মী ছাঁটাই এক ধাক্কায় রোগের সংখ্যা বাড়িয়ে দিয়েছে। ‘চাকরিটা থাকবে তো?’ – এই একটা চিন্তায় রাতের ঘুম উড়েছে অনেকের। স্ট্রেস, অফিসের চাপ, জীবনের চাপ – সমস্ত কিছু মিলিয়ে মানুষের ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। আর এখানেই প্রমাদ গুনছেন ডাক্তাররা। কর্মী ছাঁটাইয়ের সংখ্যা যত বাড়ছে, বিশ্বজুড়ে স্ট্রেস, মানসিক অবসাদ, ইনসমনিয়া বা নিদ্রাহীনতা ইত্যাদি রোগগুলি বাড়ছে। আর এসবের প্রভাব এসে পড়ছে শরীরে। ডাক্তাররা বলছেন, সমস্ত কিছুর প্রভাব পড়ছে কিডনিতে।
আরও পড়ুন : ১২,০০০ কর্মীকে ছাঁটাই, আর পিচাইয়ের বেতনে ব্যাপক বৃদ্ধি! কী চলছে গুগলের অন্দরে?
বিপুল ছাঁটাইয়ের জেরে বাড়ছে কিডনির রোগ
চিকিৎসা জগতের সাম্প্রতিক একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, বিগত ২-৩ মাসে পৃথিবী জুড়ে কিডনির অসুখের সংখ্যা বেড়েছে। এক আধটা কেস বাড়েনি; ডাক্তাররা বলছেন এক ধাক্কায় ৩০ শতাংশ রোগ বৃদ্ধি হয়েছে! বিভিন্ন কারণ রয়েছে এর পেছনে, তবে মূল কারণ হল ব্যাপকহারে কর্মী ছাঁটাই। স্ট্রেস যত বাড়ছে, ততই ঘুম উড়ছে মানুষের। আর ততই চাপ বাড়ছে কিডনির ওপর। পরে কিডনি থেকে সেই চাপ ছড়িয়ে পড়ছে গোটা দেহে।
কর্মী ছাঁটাই কীভাবে কিডনির ওপর প্রভাব ফেলছে?
ডাক্তারদের বক্তব্য, ব্যাপক হারে কর্মী ছাঁটাইয়ের খবর এখন রোজনামচা হয়ে গিয়েছে। কার কখন চাকরি চলে যাবে, কেউ বলতে পারছে না। ফলে সবসময় মনের মধ্যে দুশ্চিন্তা দানা বেঁধে পড়ে আছে। যত দিন যাচ্ছে, নানা দিক থেকে চাপ বাড়ছে। ফলে দুশ্চিন্তাও বাড়ছে। আর এই পরিস্থিতি মানুষের মনে তৈরি করছে মানসিক অবসাদ। তৈরি করছে ব্যাপক স্ট্রেস। আর তারই প্রভাব সরাসরি কিডনির ওপর পড়ছে।
কিডনি প্রধানত আমাদের শরীরের রক্তকে পরিষ্কার রাখতে, রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। শরীরের ফিল্টারিং ইউনিট বা ‘অ্যাকোয়াগার্ড’ বলা যেতে পারে। যখন ব্যাপক স্ট্রেস, অবসাদের মতো রোগ গ্রাস করে, তখন সেটা আমদের শরীরে প্রভাব ফেলে। রক্তচাপ বেড়ে যায়, রক্তে শর্করা বা ব্লাড সুগারের পরিমাণও বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এই দুইয়ের প্রভাব সরাসরি পড়ে কিডনির ওপর।
আরও পড়ুন : রাতদিন সমানে জিম করেন, হার্ট সুস্থ আছে তো? নিজের অজান্তেই যে বিপদ ডেকে আনছেন
উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস হলে সেই ঝড়ের দাপট এসে পড়ে কিডনির ওপর। ফলে কিডনির কাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর সেটা হলে চাপ এসে পড়ে হৃদপিণ্ড ও গোটা সিস্টেমের ওপর। ফলে বিপদের পরিসীমা বাড়ে বই কমে না। অনেকে আবার চিন্তা থেকে মুক্তি পেতে সিগারেট, অ্যালকোহলের শরণাপন্ন হন। এতে বিপদ আরও বাড়ে। মদ, সিগারেট গিয়ে কিডনির আরও ক্ষতি করে। বিষ জমতে শুরু করে কিডনির মধ্যে।
মুক্তির উপায়?
ডাক্তারদের বক্তব্য, এখান থেকে মুক্তি পেতে গেলে নিজের স্ট্রেস, মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নিয়ন্ত্রণ আনতে হবে। সেটা খুবই মুশকিল কাজ, কিন্তু একটু ধৈর্য ধরলে সেটা করা সম্ভব। যেমন –
স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া
নিজের হার্ট আর কিডনির দিকে খেয়াল রাখুন। সেজন্য পরিমিত, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া শুরু করে দিন আজ থেকেই। টাটকা সবজি, ফলমূল খান। আর সবচেয়ে বড় কথা, খাবারে নুনের পরিমাণ যত কম থাকে ততই ভালো। অতিরিক্ত চিনি খাওয়াও বন্ধ করতে হবে।
আরও পড়ুন : বুকে ব্যথা, মাথায় অসহ্য যন্ত্রণা! যে বিপদ মাথাচাড়া দিচ্ছে কোভিড ভ্যাকসিনের নেওয়ার পর
ব্যায়াম, শরীরচর্চা
শরীরে মেদ জমতে দেওয়া যাবে না। সেটা হলে সমস্যা আরও বাড়বে। তাই প্রতিদিন শরীরচর্চা, ব্যায়ামের অভ্যাস করুন। খেলাধুলা করুন। এর ফলে ক্যালোরি কমবে, মেদও ঝরবে। আর ব্যায়াম করলে স্ট্রেস, অবসাদের মতো রোগকেও একটু একটু করে দূরে সরিয়ে রাখা যাবে।
সঠিক ঘুম
ঘুম মানুষের জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাতে অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা টানা ঘুম দরকার। সেটা না হলে শরীর আরও ভেঙে পড়বে। যদি ঘুম না আসে, তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। ব্যায়াম করুন, ধ্যান করুন। খাওয়াদাওয়া নিয়ম মেনে করুন। নিজের মনটাকে শান্ত করুন।
সিগারেট নৈব নৈব চ
মদের পাশাপাশি সিগারেট-বিড়িও ছাড়তে হবে। মানসিক অবসাদ, স্ট্রেসের মধ্যে থাকলে ধূমপানের অভ্যাস বেড়ে যায়। তাই এখন থেকেই সেই সমস্যায় দাঁড়ি দিন। সিগারেট সেবন একেবারেই চলবে না।