মৃত ৪৭, ধ্বংসস্তূপে আটকে ৫০০-রও বেশি! কেরলে কীভাবে ঘটল ভয়াবহ ভূমিধস?

Kerala Landslide: ভূমিধসে কারা নিখোঁজ, কারা মারা গেছেন এই নিয়ে সম্পূর্ণ তথ্যই এই মুহূর্তে নেই প্রশাসনের কাছে।

বর্ষার কেরল অপূর্ব! তবে যে কোনও মুহূর্তে সেই অপূর্ব নিসর্গ বদলে যেতে পারে মৃত্যুফাঁদেও! ঈশ্বরের নিজস্ব দেশ কেরলে প্রবল বৃষ্টিতে মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় আটকে পড়েছেন অন্তত ৫০০ মানুষ! কেরলের ওয়ানাড় জেলায় চার ঘণ্টার মধ্যে তিনটি ভূমিধসে অন্তত ৪৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। প্রতি মুহূর্তে বেড়ে যাচ্ছে মৃতের সংখ্যা। এনডিআরএফ সহ একাধিক সংস্থা মেপ্পাদির কাছে পাহাড়ি এলাকায় উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছে জোরকদমে। গাছ ভেঙে পড়ে, বড় পাথর পড়ে অধিকাংশ বাড়িঘর ভেঙে গিয়েছে। উদ্ধার অভিযানও তাই বারেবারে বাধা পাচ্ছে।

৩০ জুলাই, মঙ্গলবার ভোরে কেরলের ওয়ানাড় জেলায় ব্যাপক ভূমিধস ঘটে। ধ্বংসাবশেষের নীচে এক বিশাল এলাকা চাপা পড়ে যায়। আশঙ্কা করা হচ্ছে ৫০ পেরিয়ে যেতে পারে লাশের সংখ্যা! কেরলের ভূমিধসে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর মধ্যে আছে মুন্ডক্কাই, চুরমালা, আত্তামালা এবং নুলপুজা। এই এলাকার সেতু ও রাস্তা ভেসে গেছে। বেশ কিছু এলাকায় কোনওভাবেই যোগাযোগও করা যাচ্ছে না। মুন্ডাক্কাইয়ে আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধার করতে এয়ারলিফট করার পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে। তবে ভূমিধসে কারা নিখোঁজ, কারা মারা গেছেন এই নিয়ে সম্পূর্ণ তথ্যই এই মুহূর্তে নেই প্রশাসনের কাছে। বিচ্ছিন্ন এলাকাতে কারা আটকে রয়েছে, সকলকে উদ্ধার করা যাচ্ছে কিনা আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।

ভূমিধসে চুরমালা শহর এবং অনেক বাড়িঘর, যানবাহন ও দোকানপাটও জলে তলিয়ে গেছে। ওই এলাকায় চারশোরও বেশি মানুষ আটকা পড়েছেন। আশেপাশের এলাকাগুলোও মাটি ও ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে গেছে। বহু বাসিন্দাকে এলাকা থেকে সরিয়ে আশেপাশের ত্রাণ শিবিরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন- ২ মাসে তিনবার! ত্রাসের নাম ভারতীয় রেল! এবার ১৮ টি বগি লাইনচ্যুত হাওড়া মুম্বই মেলের!

প্রবল বৃষ্টি ও রাস্তা ভেসে যাওয়ার কারণে উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে। বিদ্যুৎ সরবরাহও বন্ধ। ফলে মানুষদের নিরাপদে বের করে আনা ক্রমেই দুষ্কর হয়ে পড়ছে। গ্রামীণ কোঝিকোডের ভিলানগাড়-মালয়ানগড়ে ভূমিধসের ফলে একটি গুরুত্বপূর্ণ সেতু ভেঙে পড়েছে। যার ফলে ওই এলাকায় ১২টি পরিবার বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। দুর্যোগে নদীতীরে অবস্থিত চারটি বাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভিলানগাড় নদীর জলের স্তর ক্রমশ বাড়তে থাকায় কর্তৃপক্ষ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে নদীতীরবর্তী এলাকা থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নিচ্ছে। প্রচণ্ড বৃষ্টিতে কোঝিকোড় জেলার সমস্ত পর্যটনস্থলে পর্যটকদের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। সব গ্রানাইট খনিও সাময়িকভাবে বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।

ভারতের আবহাওয়া দফতর আগামী কয়েক ঘণ্টায় আরও বেশি বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে ইতিমধ্যেই। জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দক্ষিণ এশিয়া জুড়ে বর্ষার বৃষ্টি নামে। কেরলে বর্ষা ঢুকেছিল নিয়মমাফিকই। তবে এই ব্যাপক বর্ষণ সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বারেবারেই মারাত্মক বন্যা ঘটিয়েছে। ভূমিধসের সংখ্যাও বেড়েছে এই অঞ্চলে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের সঙ্গে কথা বলে এলডিএফ সরকারকে সব ধরনের সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন। বিজেপি প্রধান জেপি নাড্ডাকে নির্দেশ দিয়েছেন যাতে দলীয় কর্মীরা উদ্ধার কাজে এগিয়ে আসেন। এই প্রসঙ্গে কেরলের বিজেপির একমাত্র সাংসদ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুরেশ গোপীর সঙ্গেও কথা বলেছেন মোদি।

আরও পড়ুন- IAS হতে গিয়ে ভেসে গেলেন ৩ পড়ুয়া! কোচিং সেন্টারে বন্যায় মর্মান্তিক মৃত্যুতে গাফিলতি কার?

 

এক্স হ্যান্ডেলে একটি পোস্টে মোদি লিখেছেন, "ওয়ানাডের কিছু অংশে ভূমিধসের কবলে। যারা তাদের প্রিয়জনকে হারিয়েছেন এবং আহতদের জন্য প্রার্থনা করছেন, আমি সকলের সমব্যথী। ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য করার জন্য বর্তমানে উদ্ধার অভিযান চলছে।"প্র ধানমন্ত্রীর কার্যালয় দুর্যোগে নিহতদের পরিবারকে ২ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ আর আহতদের ৫০,০০০ টাকা দেওয়ার ঘোষণাও করেছে।

কেরল রাজ্য বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ এবং এনডিআরএফ ছাড়াও, কান্নুর প্রতিরক্ষা সুরক্ষা বাহিনীও উদ্ধার অভিযানে যোগ দিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, বায়ুসেনার দু'টি হেলিকপ্টারও ওয়ানাড়ের উদ্দেশ্যে রওনা হবে উদ্ধারকার্য সামলাতে।

ওয়ানাড়ের সাংসদ তথা কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধিও মুখ্যমন্ত্রী বিজয়ন এবং জেলা কালেক্টরের সঙ্গে কথা বলেছেন। উদ্ধার অভিযান নিয়ে রীতিমতো খোঁজ রাখছেন তিনি। কন্ট্রোল রুম স্থাপন করতে এবং ত্রাণের যে কোনও সাহায্যের প্রয়োজনে কংগ্রেসকে জানাতে বলেছেন তিনি।

More Articles