বয়স ৯২ ছুঁইছুঁই, LIC এজেন্ট থেকে কীভাবে ভারতের বয়স্কতম ধনকুবের হয়ে উঠলেন এই ব্যক্তি?

India’s oldest billionaire : ৯২ বছরেও সজাগ নজর ব্যবসায়, লছমন দাস মিত্তলের লড়াই শুনলে অবাক হবেন আপনিও

মাটির সঙ্গে টাকার তুলনা এ যুগে সত্যিই বিরল তাই রামকৃষ্ণের বলে যাওয়া সেই কথাকে স্মরণ করার প্রয়োজনও বিশেষ পড়ে না। বরং মোট সম্পত্তির হিসেবে কে কতটা উঠল, কার কতটাই বা পড়ে গেল শেয়ার, এসব নিয়েই তরজা চলে বেশি। শেয়ার বাজারের ওঠা নামা থেকে শুরু করে ব্যবসায়িক লাভ ক্ষতির হিসেব, রাতারাতি বদলে দিতে পারে বিশ্বের ইকোনমিক গ্রাফ। আজ যিনি ধনীর তালিকায় শীর্ষে, রাতারাতিই হয়তো নেমে যেতে পারেন প্রথম কুড়ি জনের পরে। সম্প্রতি এমনই এক ঘটনার সাক্ষী অবশ্য থেকেছে গোটা দুনিয়া।

গৌতম আদানি, এই নামটা ভারত তথা বিশ্বের আলোচনাতেও বেশ পরিচিত। সম্প্রতি বেশ দীর্ঘ সময় জুড়ে খবরের শিরোনাম দখল করে ছিল এই আদানি গ্রুপ। শুধু তাই নয়, পাশাপাশিই ছিল তাদের বিরুদ্ধে উঠে আসা হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের প্রতিক্রিয়াও। মুহূর্তের মধ্যে ধনীর শীর্ষ অবস্থান থেকে হুড়মুড়িয়ে পড়তে হয়েছে ভারতীয় এই ধন কুবেরকে। অন্যদিকে কেউ কেউ আবার একেই পৌষমাস স্বরূপ পেয়েছেন। উঠে এসেছেন শীর্ষে। তবে এই এত এত আলোচনার কেন্দ্রে আছেন যাঁরা, ধন কুবেরদের মধ্যে ভারতের সবচেয়ে বেশি বয়স্ক কে জানেন?

আরও পড়ুন - দাদুর দেখানো পথেই ‘স্বপ্নের উড়ান’, নতুন যে ইতিহাস গড়ার পথে দার্জিলিংয়ের সাক্ষী

এতদিন এই তালিকায় নাম ছিল কেশব মাহিন্দ্রার। চলতি বছরের ১২ এপ্রিল কেশব জি প্রয়াত হওয়ার পর এই জায়গাটি দখল করেন লছমন দাস মিত্তল। আজকের নিরিখে তিনিই দেশের বয়স্কতম কোটিপতি তথা ধনকুবের। বয়স নব্বই পেরিয়েছে আগেই। আজও তিনি ধরে রেখেছেন নিজের ব্যবসায়িক সাফল্য। বর্তমানে তাঁর মোট সম্পদের পরিমাণ ২.৫ বিলিয়ন ডলার। যা নিমেষেই ঘোল খাওয়াতে পারে বিশ্বের আচ্ছা আচ্ছা উঠতি ধনপতিদেরও। সদ্য প্রকাশিত ফোর্বস তালিকায় বয়স্কতম ব্যক্তি হিসাবে কেশব মহীন্দ্রার নাম ছিল। আর তাঁর ঠিক পরেই ছিলেন লছমন দাস মিত্তল। তোকে বর্তমানে কেশব মাহিন্দ্রার মৃত্যুর পর অচিরেই সেই স্থান তাঁর আয়ত্তে।

অতি সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবার থেকেই জীবনের শুরু। তারপর লড়াই, সংগ্রাম, এবং অসম্ভব শ্রম এসব দিয়েই ক্রমে রাস্তা সুঠাম করেছেন তিনি। প্রথম জীবনে কাজ শুরু করেন নিতান্ত সাদামাটা একজন এলআইসি এজেন্ট হিসাবে। ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত সেখানেই অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। যদিও প্রথাগত রিটায়ারমেন্ট এর ধার তিনি কখনওই ধারেননি। বরং কাজকেই আজীবন ভালোবেসেছেন। স্বপ্ন দেখেছেন উঠে যাওয়া সিঁড়ির দিকে তাকিয়ে। তাই কর্মক্ষেত্রে থেকে আপাত বিরতি পাওয়ার পর সারা জীবনের সমস্ত সঞ্চয় কাজে লাগিয়ে শুরু করেন ব্যবসা।

আরও পড়ুন - আদানির পর ফের মরণকামড় হিন্ডেনবার্গের! টুইটার প্রতিষ্ঠাতার বিরুদ্ধে কোন জালিয়াতির অভিযোগ?

যে বয়সে মানুষ কেনো বিশ্রামের কথা ভাবেন, সেই বয়সেই নতুন করে পথ চলা শুরু করেন লছমন দাস মিত্তল। বয়স যখন ৬৫ ছুঁইছুঁই, তখন নতুন করে ট্রাক্টর তৈরির ব্যবসা শুরু করেন লছমন। সোনালিকা ট্রাক্টর নামে নতুন একটি সংস্থাও তৈরি করেন। কিন্তু ভাগ্য তখন সাথ দেয় না তাঁর। প্রথম কয়েক বছরের মধ্যেই দেউলিয়া হয়ে যান লছমন। ব্যবসায় লোকসানের জেরে কার্যত সর্বস্বান্ত হয়ে যান তিনি। যদিও হাল ছাড়ার মানুষ তো লছমন কোনওদিনই ছিলেন না। ফলে শেষ থেকে আবার নতুন করে শুরু করেন তিনি। ডুবে যাওয়া ব্যবসা থেকেই আবার ঘুরে দাঁড়ান। একই ব্যবসা ফের নতুন রূপে শুরু করেন। তাঁর এই অশেষ জেদই শেষমেশ সাফল্য এনে দেয় লছমনকে।

ক্রমেই সময়ের সঙ্গে উত্তর ভারতের একাধিক রাজ্যে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে সোনালিকা ট্রাক্টর। পাঞ্জাব, হরিয়ানা-সহ বেশ কয়েকটি রাজ্যে বিভিন্ন সংস্থা ভরসা রাখতে শুরু করে এই সোনালিকা ট্রাক্টরের ওপরই। আজ তিনি ৯২ বছর বয়সের দোরগোড়ায়। তবুও কাজ থেকে বিরতি নেওয়ার কথা ভাবেন না। ছেলেদের হাতে ব্যবসার দায়িত্ব তুলে দিয়েছেন ঠিকই তবে আজও সোনালিকা ট্রাক্টর সংস্থার সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত রয়েছেন লছমন নিজেও। আজও ব্যবসার সমষ্টি খুঁটিনাটির দিকে তীক্ষ্ণ নজর থাকে লছমনের। আর তাঁর অভিজ্ঞ চোখই যে প্রতিনিয়ত সাফল্যের ভিত শক্ত করে, তা বলাই বাহুল্য।

More Articles