'দেখো আলোয় আলো আকাশ'! ২০২২-এ মহাকাশের যে ছবিগুলি মানুষের চোখ ধাঁধিয়ে দিয়েছে
2022 Mesmerizing galaxy image: সুবিশাঁল টেলিস্কোপ তুলে ধরল মহাবিশ্বের বেশকিছু রহস্য। সামনে এল মহাকাশের চমকপ্রদ কিছু ছবি।
আর মাত্র কয়েক পা। দরজার দোরগোড়ায় প্রায় চলেই এল ২০২৩। নতুন বছর মানে নতুন স্বপ্ন, নতুন আশা। তবে ২০২২-ও কম ছাপ রাখল না। ঘটনার ঘনঘটায় পেরিয়ে গেল গোটা একটা বছর। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হল একের পর এক ছবি। তবে খেলা, রাজনীতি, ভ্রমণের পাশে এবার সেই ছবির ভিড়ে জায়গা করে নিল মহাকাশ। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা অত্যাধুনিক, সুবিশাঁল টেলিস্কোপ তুলে ধরল মহাবিশ্বের বেশকিছু রহস্য। সামনে এল মহাকাশের চমকপ্রদ কিছু ছবি। সেই সমস্তই আরও একবার ফিরে দেখা যাক।
ব্ল্যাক হোলের ‘দুরন্ত ঘূর্ণি’
২০১৯-এ প্রথমবার গোটা বিশ্ব দেখেছিল ব্ল্যাক হোলের আসল ছবি। এতদিন কেবল বিজ্ঞানীদের কল্পনা, অঙ্ক আর বিজ্ঞানেই লুকিয়েছিল এই রহস্যময় বস্তুটি। ২০১৯ প্রথমবার সেই ছবি সামনে আনল। তার তিন বছর পর, ২০২২-এ ফের একটি ব্ল্যাক হোলের ছবি সামনে এল। ১২ মে তারিখে ইউরোপিয়ান সাদার্ন অবজারভেটরি (ESO) একটি ছবি প্রকাশ করে। ইভেন্ট হরাইজন টেলিস্কোপের সাহায্যে বিজ্ঞানীদের একটি দল এই ছবি তুলে ধরতে সক্ষম হন। ব্ল্যাক হোলটির নাম দেওয়া হয় ‘স্যাজিটারিয়াস এ’ (Sagittarius A)। সুপারম্যাসিভ এই ব্ল্যাক হোলটির এই ছবিই প্রথমবার তার অস্তিত্বের প্রমাণ দিল। মাঝে কালো গহ্বর, তার আশেপাশে আলোর বলয় আসলে একটি নক্ষত্র, যেটি ব্ল্যাক হোলের গ্রাসে চলে যাচ্ছে।
তারার আলোয় আলো
এক ঝলক দেখে মনে হবে রূপকথার ফিনিক্স পাখি। আসলে তা নয়। এবছরই নাসার জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ নিয়ার ইনফ্রারেড ক্যামেরা (NIRCam) একটি ছবি তুলে ধরেছে। ছবিটি আসলে একটি প্রোটো স্টারের। এই নক্ষত্রটি একেবারে নিজের কিশোর অবস্থায় রয়েছে। আণবিক ক্লাউডের ভেতর থেকে যাবতীয় ভর সংগ্রহ করছে এই নবীন নক্ষত্রটি। এখনও বেড়ে ওঠার পর্যায়ে রয়েছে। সেই ছবিই উঠে এল নাসার টেলিস্কোপে। মাঝে নক্ষত্র,, তার দু’দিক দিয়ে বেরোচ্ছে আলো। লাল, কমলা, হলুদ, নীল রঙের এক মায়াবী ছবি।
আরও পড়ুন : ১৯০ কোটি বছর ধরে মহাকাশের পথ পেরিয়ে পৃথিবীতে কোন বার্তা এসে পৌঁছল?
বিশ্বমাঝে জাগ্রত যে আলো
এবারও কামাল নাসার জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের। মহাবিশ্বের ছবি তুলে ধরতে সবসময় তৎপর এই টেলিস্কোপটি। এ বছর সে-ই ফের একটি ছবি নিয়ে হাজির হল। এটি এসএমএসিএস ০৭২৩ (SMACS 0723) গ্যালাক্সি ক্লাস্টার। বিভিন্ন গ্যালাক্সির সম্মিলিত একটি ছবি, যা চোখ ধাঁধিয়ে দেবেই।
সৃষ্টির স্তম্ভ
১৯ অক্টোবর নাসার জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ থেকে পাওয়া এই অদ্ভুত ছবিটি সোশ্যাল মিডিয়ায় রীতিমতো ভাইরাল। চারিদিকে নক্ষত্রদের মাঝে একটি মেঘের স্তম্ভ উঠে গিয়েছে। সৃষ্টির স্তম্ভ নাম কেন? কারণ এই মেঘ আসলে গ্যাস আর ধুলোকণার সম্মিলিত একটি পিণ্ড। এখান থেকেই নক্ষত্রের জন্ম হয়।
স্টারি নাইট
একঝলক দেখলে কিংবদন্তি চিত্রশিল্পী ভিনসেন্ট ভ্যান গঘের বিখ্যাত ছবিটির কথাই মনে পড়বে। ১২ জুলাইয়ে নাসার জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ থেকে নেওয়া এই ছবিটি চোখে ধাঁধাঁ লাগিয়ে দেয়। এটি আসলে ক্যারিনা নেবুলার ছবি। আর তার আশেপাশে জ্বলজ্বল করছে আরও অজস্র তারা।
আরও পড়ুন : অজানা সৌরজগতের সন্ধান দিতে পারে দীর্ঘ পথ হাঁটা এই মহাকাশযান
নেপচুনের আংটি
২১ সেপ্টেম্বর নাসার তরফ থেকে আরও একটি ছবি সামনে আনা হয়। এটি আমাদের সৌরজগতের ছবি। হাজার তারার মাঝে জ্বলজ্বল করছে একটি হালকা লাল রঙের বস্তু। এটি আসলে নেপচুন, সূর্যের অষ্টম গ্রহ। সবচেয়ে মজাদার বিষয় হল, এই ছবিতে খুব স্পষ্টভাবে নেপচুনের বলয়গুলো দেখা যাচ্ছে। যেটা এই ছবিকে আরও রোমহর্ষক করে তুলেছে।
বৃহস্পতির আলো
শেষ করা যাক সৌরমণ্ডলের সবচেয়ে বড়ো গ্রহটিকে নিয়ে। ২২ আগস্ট নাসার জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ বৃহস্পতির একটি ছবি তোলে। সঙ্গে সঙ্গে ভাইরাল হয়ে যায় এটি। কারণ, এতো স্পষ্ট, এতো সুন্দর বৃহস্পতির ছবি এর আগে পাওয়া যায়নি। ছবিতে স্পষ্ট বিখ্যাত ‘গ্রেট রেড স্পট’, সঙ্গে দেখা যাচ্ছে বলয়ও। তবে ছবিটিকে অনন্য করেছে দুই মেরুর অরোরা।