১ বছরে ২ মন্ত্রী গ্রেফতার! শিক্ষক নিয়োগ থেকে রেশন দুর্নীতি, জড়িয়ে আছেন কারা?

Partha Chatterjee to Jyotipriya Mallick TMC Scams : এক বছরে এই নিয়ে তৃণমূলের ৪ বিধায়ক ও মন্ত্রী ED-র হাতে গ্রেফতার!

দুর্নীতি যে কোন সীমায় যেতে পারে তা গতবছরই বিস্ফারিত নেত্রে দেখেছিল বাংলা! একাধিক ফ্ল্যাট থেকে কোটি কোটি টাকা উদ্ধার হতে দেখে হাঁ হয়ে যান ভোটাররা। অবাক রাজ্য সাক্ষী হয় শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির মতো দেশ কাঁপানো এক ঘটনার। রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী খোদ দুর্নীতিতে জড়িয়ে! গ্রেফতার হচ্ছেন শিক্ষামন্ত্রী, তাঁর বাড়িঘর থেকে মিলছে দুর্নীতির পাহাড় প্রমাণ টাকা। বছর ঘোরেনি এখনও। গ্রেফতার হলেন আরেক মন্ত্রী। প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী এবং বর্তমান বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের বিরুদ্ধে রেশন বন্টন দুর্নীতির অভিযোগ। এক বছরে এই নিয়ে তৃণমূলের ৪ বিধায়ক ও মন্ত্রী ED-র হাতে গ্রেফতার!

পার্থ চট্টোপাধ্যায়, প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী (২০২২ সালের ২৩ জুলাই গ্রেফতার)

শিক্ষক নিয়োগে চরম বেনিয়ম নিয়েও বহুকাল থেকেই মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। এই তদন্তের সূত্রে ধরেই পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বান্ধবী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি থেকে প্রথম উদ্ধার হয় ২১ কোটি টাকা, বস্তার মধ্যে! ৫০ লক্ষের গয়না মেলে! অথচ পার্থ এবং অর্পিতা দু'জনের কেউ তদন্তে কোনও সহযোগিতা করছেন না বলে অভিযোগ ওঠে। স্কুল সার্ভিস কমিশনে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি মামলায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করা হয়। ইডি জানায়, পার্থ তথ্য গোপন করছিলেন।

মানিক ভট্টাচার্য, তৃণমূল বিধায়ক (২০২২ সালের ১১ অক্টোবর গ্রেফতার)

পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সুবীরেশ ভট্টাচার্য গ্রেফতার হওয়ার পরই নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় মানিক ভট্টাচার্যের নাম জড়িয়ে যায়। ইডির চার্জশিটে প্রকাশ্যে আসে মানিক ও পার্থর কথোপকথন। ২০১১ সালে রাজ্যে তৃণমূল ক্ষমতায় আসে। আর সেই বছরই প্রথম নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন মানিক ভট্টাচার্য। সেবার হেরে যান সিপিএম প্রার্থীর কাছে। ২০২১ সালে পলাশীপাড়া থেকে জয়ী হন তৃণমূলের মানিক ভট্টচার্য। ২০১২ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের দায়িত্ব সামলান মানিক। নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় ইডি জানায়, যুব তৃণমূল নেতা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে মানিক ভট্টাচার্যের নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। শান্তনুকেও গ্রেফতার করে ইডি। ইডির আধিকারিকরা জানান, অযোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের চাকরি দিতে সরাসরি মানিক ভট্টাচার্যর কাছে সুপারিশ করতেন শান্তনু। শান্তনুর বলাগড়ের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে প্রচুর চাকরিপ্রার্থীর নামের তালিকা উদ্ধার করেছিলেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। ইডি জানায়, শান্তনুর সুপারিশে ৩১২ জনের মধ্যে ১০ জনকে স্কুলে চাকরি পাইয়ে দিয়েছিলেন মানিক। মাথাপিছু ৪ থেকে ৫ লক্ষ টাকার বিনিময়ে, প্রাইমারি ও আপার প্রাইমারির চাকরি পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিতেন শান্তনু। সংগঠক শিক্ষকদের চাকরির ইন্টারভিউতে ডাক পাইয়ে দেওয়ার জন্য মাথাপিছু ৫০ হাজার টাকা নেওয়া হতো।

আরও পড়ুন- চাল-গমেই কোটি কোটি টাকা নয়ছয়! কীভাবে রেশন দুর্নীতিতে জড়ালেন মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয়?

 

জীবনকৃষ্ণ সাহা, তৃণমূল বিধায়ক (২০২৩ সালের ১৭ এপ্রিল গ্রেফতার)

নিয়োগ দুর্নীতিতে গ্রেফতার হন তৃণমূলের বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহাও। আদালতে চার্জশিট পেশ করে সিবিআই জানায় জীবনকৃষ্ণর বিরুদ্ধে প্রতারণা, ঘুষ নেওয়ার মতো অভিযোগের পাশাপাশি তথ্যপ্রমাণ লোপাটের অভিযোগও রয়েছে। চার্জশিটে জীবনকৃষ্ণ সাহার এজেন্ট সুব্রত সামন্ত রায়েরও নাম ছিল। সিবিআই জীবনকৃষ্ণর বড়ঞার বাড়িতে তল্লাশি করতে গেলে নিজের দু'টি ফোন পিছনের পুকুরে ছুঁড়ে ফেলেছিলেন জীবনকৃষ্ণ। ৩ দিন ধরে তল্লাশি চালিয়ে সেই ফোন উদ্ধার করতে হয় সিবিআইকে। নিয়োগ দুর্নীতি তদন্তে টানা ৩ দিন তল্লাশি চালিয়ে ১৭ এপ্রিল বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহাকে গ্রেফতার করে সিবিআই। তাঁর বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে চাকরি বিক্রির অভিযোগ রয়েছে।

কুন্তল ঘোষ, প্রাক্তন তৃণমূল যুবনেতা (২০২৩ সালের ২১ জানুয়ারি গ্রেফতার)

শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ইডির হাতে গ্রেফতার হন কুন্তল ঘোষও। হুগলির তৃণমূল যুবনেতা কুন্তলের সঙ্গে নাম জড়ায় তৃণমূলের যুবনেত্রী সায়নী ঘোষেরও।

শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রাক্তন তৃণমূল যুবনেতা (২০২৩ সালের ১১ মার্চ গ্রেফতার)

কুন্তল ঘোষ ঘনিষ্ঠ শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় হুগলি জেলা পরিষদের স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ ছিলেন। তাঁর বলাগড়ের বাড়ি থেকে অ্যাডমিট কার্ড, নানা নথি উদ্ধার করেছিলেন ইডির তদন্তকারীরা।

আরও পড়ুন- ২০ ঘণ্টার জেরা-তল্লাশি! জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে ইডির গ্রেফতারি কি সত্যিই ‘ষড়যন্ত্র’?

অনুব্রত মণ্ডল, বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি (২০২২ সালের ১১ অগস্ট গ্রেফতার)

গরু পাচারকাণ্ডে গ্রেফতার করা হয় অনুব্রত মণ্ডলকে। বোলপুরে অনুব্রতর বাড়ি থেকেই সিবিআই গ্রেফতার করে দোর্দণ্ডপ্রতাপ কেষ্টকে।

জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, বনমন্ত্রী (২০২৩ সালের ২৭ অক্টোবর গ্রেফতার)

রেশন দুর্নীতিতে ইডির হাতে গ্রেফতার হলেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। ২০২০ সালে প্রথম রেশন দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর থেকেই ইডির নজরে ছিল এই মামলা। ২০২০ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে নদিয়া জেলাতেই কেবল তিনটি মামলা দায়ের হয়। মামলার তদন্তে নেমেই ব্যবসায়ী বাকিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে ইডি। বাকিবুরকে জেরা করার পরেই রাজ্যের বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের নাম উঠে আসে। গ্রেফতার হন তিনি।

More Articles