ইজরায়েলে সুপারসোনিক ক্ষেপণাস্ত্রের মার! আর কী কী অস্ত্র মজুত ইরানের হাতে?
Israel-Iran Conflicts: মঙ্গলবার যে সুপারসোনিক ব্যালিস্টিক মিসাইল নিয়ে ইজরায়েলে হামলা চালিয়েছে ইরান, তার মধ্যে ছিল এমাদ, গদর এবং ফাত্তাহ-2 মিসাইল।
ইরানপুষ্ট জঙ্গি সংগঠন হিজবুল্লাহের উপর ইজরায়েলের লাগাতার হামলার পরেই নেতানিয়াহুর দেশকে হুঁশিয়ারি দিয়েছিল ইরান। ইরানের একাধিক কট্টরপন্থী নেতারা ইজরায়েলে পারমাণবিক হামলার সম্ভাবনার কথাও উস্কে দিয়েছিলেন। তবে সেই সব জল্পনা-কল্পনার মধ্যেই ইজরায়েলে হামলা চালিয়ে বসল ইরান। অন্তত দু'শোটির কাছাকাছি সুপারসোনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ইজরায়েলে নিক্ষেপ করেছে ইরান। নিশানা করা হয়েছে ইজরায়েলের একাধিক বিমানঘাঁটি ও তেল আভিভে মোসাদের সদর দফতরে। হামলার সাইরেন বেজে উঠতেই ইজরায়েলের বাসিন্দাদের বাঙ্কারে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
মঙ্গলবার যে সুপারসোনিক ব্যালিস্টিক মিসাইল নিয়ে ইজরায়েলে হামলা চালিয়েছে ইরান, তার মধ্যে ছিল এমাদ, গদর এবং ফাত্তাহ-2 মিসাইল। ইরানের সামরিক বিভাগের তরফে দাবি করা হয়েছিল, এই ফাত্তাহ ক্ষেপণাস্ত্রটি শব্দের গতির চেয়েও ১৫ গুণ দ্রুত গতিতে প্রায় ১৪০০ কিলোমিটার রাস্তা পাড়ি দিতে পারে। ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের তরফে বলা হয়, গদর ও এমাদ— এই দুটি ক্ষেপণাস্ত্র ইজরায়েলের আয়রন ডোমকে নিশানা করে ছোড়া হয়েছিল। অন্যদিকে, ফাত্তাহ-2 ক্ষেপণাস্ত্রটি দিয়েই নিশানা করা হয় ইজরায়েলের বিমানঘাঁটি ও মোসাদের সদর দফতর।
তবে ইরানের অস্ত্রভাণ্ডার কিন্তু এই হাতে গোনা ক্ষেপণাস্ত্রে শেষ নয় মোটেই। তেহরানের ভাণ্ডারে রয়েছে আরও অসংখ্য সব ভয়ঙ্কর ভয়ঙ্কর ক্ষেপণাস্ত্র। ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স ডিরেক্টরের মার্কিন দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, ব্যালিস্টিক মিসাইল তেহরানের অস্ত্রাগারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ইরানের এই অঞ্চলটি নাকি সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে সজ্জিত।
আরও পড়ুন: ইজরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পরেই বন্ধ ইরানের আকাশপথ! জবাব ফেরাতে পারবেন নেতানিয়াহু?
ইরানের আধা-সরকারি নিউজ আউটলেট আইএসএনএ-তে গত এপ্রিল মাসে একটি গ্রাফিক্স প্রকাশ করে বেশ কিছু ইরানের ভাণ্ডারে থাকা ক্ষেপণাস্ত্র সম্পর্কে জানানো হয়েছিল। বিশেষত যেগুলো ইজরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হতে পারে বলে জানা যায়। এর মধ্যে রয়েছে সেজিল, যা প্রতি ঘণ্টায় ১৭ হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত পৌঁছতে সক্ষম। রয়েছে আড়াই হাজার কিলোমিটার ও ২০০০ কিলোমিটার রেঞ্জের 'খেইবার' এবং ১৪০০ কিলোমিটার হজ কাসেম ক্ষেপণাস্ত্রও।
ওয়াশিংটন ভিত্তিক একটি বেসরকারি সংস্থা আর্মস কন্ট্রোল অ্যাসোসিয়েশন সূত্রের খবর, ইরানের ভান্ডারে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের মধ্যে রয়েছে 'শাহাব-১', যার আনুমানিক পাল্লা ৩০০ কিলোমিটার, রয়েছে ৭০০ কিলোমিটারের জোলফাঘর, ৫০০ থেকে ৬২০ মাইলের ইমাদ-১ এবং ৯৩০-১৫৫০ মাইল দূরত্ব সম্পন্ন সেজিল।
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র অস্ত্রাগার সংক্রান্ত বার্লিন-ভিত্তিক বিশেষজ্ঞ ফ্য়াবিয়ন হিনজ জানাচ্ছেন, ইরানের কাছে রয়েছে বেশ কিছু তরল-জ্বালানিযুক্ত ক্ষেপণাস্ত্রও। শুধু ইজরায়েলই নয়, একই সঙ্গে আমেরিকা-সহ বেশ কয়েকটি দেশকেই নিশানা করতে পারে ইরানের ভাণ্ডারে থাকা ক্ষেপণাস্ত্রগুলি। একই সঙ্গে ইরান আন্ডারগ্রাউন্ড ক্ষেপণাস্ত্রের ডিপো বানিয়ে চলেছে, যেখানে ক্ষেপণাস্ত্রগুলি পরিবহনের পাশাপাশি উৎক্ষেপণও করতে পারবে তারা। ২০২০ সালে প্রথম বার মাটির তলা থেকে রকেট উৎক্ষেপণ করে ইরান।
দিনের পর দিন ধরে ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে পরীক্ষানিরিক্ষা করে চলা ইরান রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন রকম অভিনব ক্ষেপণাস্ত্র তৈরিতে পারদর্শী হয়ে উঠেছে। এমন সব হালকা উপাদান দিয়ে তারা মিসাইল বানিয়ে ফেলেছে, যা বহু দূরের লক্ষ্যবস্তুতে গিয়ে আঘাত হানতে পারে।
এর সঙ্গে তারা হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরিতে সিদ্ধহস্ত হয়ে উঠেছে, যা শব্দের চেয়ে অন্তত ৫ গুণ দ্রুত ও জটিল গতিপথ দিয়ে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে। কার্যত এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলিকে আটকানো অসম্ভব বলেই মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল।
ইজরায়েলই প্রথম নয়, এর আগে ২০১৯ সালে সৌদি আরবের অয়েল ফেসিলিটিতে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করে ইরান। এমনটাই অভিযোগ আমেরিকার। এর আগে সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেট জঙ্গিদের উপরেও ক্ষেপণাস্ত্র হেনেছে তারা। পাকিস্তানের কাছে বালুচি জঙ্গিদের দুটি ঘাঁটিতেও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। এখানেই শেষ নয়, ২০২০ সালে ইরাকে মার্কিন সেনার বেশ কয়েকটি ঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছিল তারা।
আরও পড়ুন: হিজবুল্লাহকে চাপে রাখতেই লেবাননে স্থল আক্রমণ! ইজরায়েলে পাল্টা পরমাণু হামলার ফন্দি আঁটছে ইরান?
দীর্ঘদিন ধরেই লেবাননের হিজবুল্লাহ গোষ্ঠী, ইয়েমেনের হাউথি ও প্যালেস্টাইনের হামাস-কে সব দিক থেকে মদত জুগিয়ে চলে ইরান। ওয়াকিবহাল মহলের মত, এই সব জঙ্গিগোষ্ঠীর উত্থানের নেপথ্যেও বড়সড় ভূমিকা রয়েছে তেহরানের। এদিকে, ইজরায়েলের সঙ্গে বরাবরই ইরানের সম্পর্ক আদায়-কাঁচকলায়। ক্ষেপণাস্ত্র তো বটেই, একই সঙ্গে পারমাণবিক অস্ত্রশস্ত্রেও বেশ ধনী এই দেশটি। তার উপর তেলের উপর বিশ্বের প্রায় সবকটি দেশই বড়সড় ভাবে নির্ভরশীল ইরানের উপরে। এই পরিস্থিতিতে বহু দেশই যে ইরানকে কম-বেশি সমঝে চলে, সে কথাও অস্বীকারের জায়গা নেই। প্রাথমিক ভাবে ইরানকে ঘাঁটাতে রাজি ছিল না আমেরিকাও। এর আগেও বহুবার যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হলে ইজরায়েলকে সতর্ক করেছে আমেরিকা। এবারও ব্যতিক্রম হয়নি। তবে সে বারণ শেষপর্যন্ত শোনেনি ইজরায়েল। এই পরিস্থিতিতে ইজরায়েলে হামলা হলে ইরানকে ছেড়ে কথা বলবে না আমেরিকা, এমন হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তবে এবার ইজরায়েল ইরানকে জবাব দিতে কোন পথে হাঁটে, সেটাই উদ্বেগের কারণ বিশ্বের সমস্ত শুভবুদ্ধিসম্পন্ন দেশের।