টাইটানিক খুঁজতে গিয়ে হারিয়ে গেল 'টাইটান'! যে পাঁচজন চিরতরে হারিয়ে গেলেন...
Titan Submarine Missing: রবিবার উত্তর আটলান্টিকের টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের সন্ধানে ডুব দেওয়ার সময় টাইটান সাবমার্সিবলের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
টাইটানিককে ঘিরে রহস্য সম্ভবত কোনওদিনই ফুরোবে না আর। কোনও দিন যে জাহাজ ডোবার কথা ছিল না, সে ডুবে গিয়েছে একশো বছরেরও বেশি আগে। সেই ডুবে যাওয়া জাহাজ টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ খুঁজতে গিয়ে আস্ত একটি ডুবোজাহাজ উধাও হয়ে গেল! প্রযুক্তিগতভাবে অত্যন্ত উন্নত এই ডুবোজাহাজটির মধ্যে থাকা পাঁচজন মানুষের কোনও সন্ধান নেই। রবিবার রাতে নিউফাউন্ডল্যান্ডের সেন্ট জন'স থেকে প্রায় ৪৩৫ মাইল (৭০০ কিলোমিটার) দক্ষিণে নিখোঁজ হয়ে যায় একটা আস্ত সাবমেরিন! সাবমেরিন বলে ডাকা হলেও বিষয়টি আসলে সাবমার্সিবল। সাবমেরিন নিজে নিজেই কোনও বন্দর থেকে নিজেকে জলের নীচে পাঠাতে পারে। সাবমার্সিবলের ক্ষেত্রে একটি জাহাজ দরকার পড়ে। সেই জাহাজ জলের গভীরে নামিয়ে দেয় এই সাবমার্সিবলকে। টাইটান সাবমার্সিবলটিতে ছিলেন পাঁচজন মানুষ।
ওয়াশিংটন রাজ্যের এভারেটে অবস্থিত, ওশানগেট সংস্থাটিকে মাঝসমুদ্রের রাজা বলা যায়। এটি ৪,০০০ মিটার পর্যন্ত গভীর সমুদ্রের খোঁজ জানতে অত্যাধুনিক ক্রুড সাবমার্সিবল এবং লঞ্চ প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে। ওশানগেট এর আগে প্রশান্ত মহাসাগর, আটলান্টিক এবং মেক্সিকো উপসাগরে সফলভাবে ১৪ টিরও বেশি অভিযান এবং ২০০ টিরও বেশি ডাইভ সম্পন্ন করেছে। অথচ টাইটানিক খুঁজতে গিয়ে নিখোঁজ হয়ে গেল অত্যাধুনিক টাইটান! রবিবার উত্তর আটলান্টিকের টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের সন্ধানে ডুব দেওয়ার সময় টাইটান সাবমার্সিবলের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ইউএস কোস্ট গার্ড এবং সাবমার্সিবল পরিচালনাকারী সংস্থা, ওশানগেট এক্সপিডিশনস জানিয়েছে, ডুবোজাহাজে থাকা পাঁচজনই মৃত বলে মনে করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন- কোনওদিন ডোবেইনি আসল টাইটানিক! আড়ালে ছিল কোন ষড়যন্ত্র?
কে কে ছিলেন এই টাইটান সাবমার্সিবলে?
হামিশ হার্ডিং
ব্রিটিশ ধনকুবের এবং এভিয়েশন কনসালটেন্সি অ্যাকশন এভিয়েশনের চেয়ারম্যান হামিশ হার্ডিং নিখোঁজ। দুবাইয়ের বাসিন্দা হার্ডিং সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছিলেন তিনি 'অভিযান বিশেষজ্ঞ' হিসেবে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের সন্ধানে যেতে পেরে গর্বিত। নিউফাউন্ডল্যান্ডে এই সময় শীতকাল। এবং বিগত ৪০ বছরের মধ্যে এবারই সবচেয়ে মারাত্মক আর ভয়াবহ শীত পড়েছে সেখানে। হামিশ জানিয়েছিলেন, ২০২৩ সালে টাইটানিকের উদ্দেশ্যে এই অভিযানটিই সম্ভবত প্রথম এবং একমাত্র মানব অভিযান হতে পারে।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে, হামিশ হার্ডিং প্রাক্তন মহাকাশচারী বাজ অলড্রিনের সঙ্গে দক্ষিণ মেরুতে গিয়েছিলেন। অলড্রিন ছিলেন আন্টার্কটিক অঞ্চলে পৌঁছনো সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তি! ৮৬ বছর বয়সে আন্টার্কটিক অভিযানে গিয়েছিলেন তিনি। হামিশ হার্ডিং ২০১৯ সালের 'ওয়ান মোর অরবিট' ফ্লাইট মিশনেরও অংশ ছিলেন। দুই ভৌগলিক মেরুতে বিমানের মাধ্যমে পৃথিবীর দ্রুততম প্রদক্ষিণের রেকর্ড গড়েছিল সেই অভিযান। বছর আটান্নর হামিশ হার্ডিং এর আগে জেফ বেজোসের ব্লু অরিজিন রকেট কোম্পানির একটি অভিযানে মহাকাশে গিয়েছিলেন। হার্ডিং ভারতে চিতাদের পুনঃপ্রবর্তনের প্রচেষ্টারও অংশ ছিলেন। রহস্যময় টাইটানিককে খুঁজতে গিয়ে রহস্যজনকভাবে হারিয়ে গেলেন হামিশ।
শাহজাদা দাউদ এবং তাঁর পুত্র সুলেমান
শাহজাদা সার, যানবাহন উত্পাদন, শক্তি এবং ডিজিটাল প্রযুক্তিতে বিনিয়োগকারী পাকিস্তানের অন্যতম বৃহত্তম সংস্থা, এনগ্রো কর্পোরেশনের ভাইস চেয়ারপার্সন। ক্যালিফোর্নিয়ার একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সার্চ ফর এক্সট্রাটেরেস্ট্রিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইনস্টিটিউটের (SETI) একজন ট্রাস্টি শাহজাদা। তিনি তাঁর স্ত্রী এবং দুই সন্তানের সঙ্গে ব্রিটেনে থাকেন।
পল হেনরি নাগেরোলেট
৭৭ বছর বয়সী এই ফরাসি অভিযাত্রী ও সামুদ্রিক বিশেষজ্ঞ টাইটানিকের ধ্বংসস্তূপের সন্ধানে এর আগে ৩৫টিরও বেশি ডাইভ দিয়েছিলেন। পল RMS Titanic, Inc.-এর সমুদ্রতল গবেষণার পরিচালক। এই সংস্থাটির কাছে টাইটানিক ধ্বংসাবশেষের মালিকানাও রয়েছে। ফরাসি নৌবাহিনীর একজন প্রাক্তন কমান্ডার পল হেনরি নাগেরোলেট একজন ডুবুরি এবং মাইন সুইপারও। নৌবাহিনী থেকে অবসর নেওয়ার পর, তিনিই ১৯৮৭ সালে টাইটানিকের প্রথম পুনরুদ্ধার অভিযানের নেতৃত্ব দেন। ফ্রান্স ব্লু রেডিওকে দেওয়া একটি সাক্ষাত্কারে ২০২০ সালে পল বলেছিলেন, "আমি মরতে ভয় পাই না, আমি জানি একদিন তো মরবই।"
আরও পড়ুন- সমুদ্রের তলায় গচ্ছিত ১১১ বছরের ভয়ংকর ইতিহাস! অবাক করবে টাইটানিকের সেই বিরল ছবি
স্টকটন রাশ
ডুবোজাহাজটির মার্কিন অপারেটিং সংস্থা ওশানগেটের প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও খোদ ছিলেন এই টাইটানে! স্টকটন রাশ এই বছরের শুরুর দিকেই ব্রিটেনের স্কাই নিউজ অব টাইটানিককে বলেছিলেন, "এটি আশ্চর্য সুন্দর ধ্বংসাবশেষ! আমরা নিচে নেমে বিশাল সিঁড়ি দেখেছি এবং দেখেছি কিছু ঝাড়বাতি এখনও ঝুলছে।" স্টকটন রাশ ১৯৮১ সালে মাত্র ১৯ বছর বয়সে বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ জেট ট্রান্সপোর্ট-রেটেড পাইলট হয়েছিলেন।
ডুবোজাহাজটি চালাচ্ছিলেন স্টকটন নিজে। নভেম্বর মাসে সিবিএস-এ সম্প্রচারিত একটি সাক্ষাত্কারে, স্টকটন রাশ জানিয়েছিলেন, আজীবন তিনি একজন মহাকাশচারী হতে চেয়েছিলেন এবং ১৯৮৪ সালে প্রিন্সটন থেকে মহাকাশ প্রকৌশলের ডিগ্রি অর্জনের পর ফাইটার পাইলট হতে চেয়েছিলেন।
এই অভিযানে যাওয়ার আগে স্টকটন বলেছিলেন, মহাকাশে যাওয়ার বিষয় তো এটা ছিল না। "এটা ছিল অন্বেষণ, নতুন জীবনরূপ অনুসন্ধান। আমি ক্যাপ্টেন কার্কের মতো হতে চেয়েছিলাম। আমি যাত্রী হতে চাইনি এবং আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে মহাসাগরই মহাবিশ্ব," বলেছিলেন তিনি।