মোদি মন্ত্রিসভা 3.O: বিজেপির ভাগ-বাঁটোয়ারা খুশি মনে মানবেন নীতীশ-নাইডুরা?
Modi 3.0 Cabinet: এখন কথা হচ্ছে, এই সমস্ত জরুরি মন্ত্রক কি বিজেপি হাতছাড়া করবে শরিকদের মন রাখতে? ৫৪৩টি লোকসভা আসনের মধ্যে ২৯৩টি জিতেছে এনডিএ।
লোকসভা ভোটে নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা না পেলেও সরকার গড়ার পথে বিজেপি। তবে তার জন্য এনডিএ জোট শরিকদের উপরেই ভরসা রাখতে হচ্ছে মোদিশিবিরকে। সব ঠিক থাকলে আগামী রবিবারই নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে চলেছেন নরেন্দ্র মোদি। ইতিমধ্যেই সব কটি শরিক দল প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মোদিকে বেছেও নিয়েছেন। রাষ্ট্রপতির কাছে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পদত্যাগও দিয়ে এসেছেন মোদি। প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছিল, শনিবারই শপথ গ্রহণ করবেন মোদি। তবে পরে সেই পরিকল্পনায় খানিকটা বদল আসে।
প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন নরেন্দ্র মোদি, এ কথা একরকম ঠিক। তবে তাঁর বাকি মন্ত্রিসভায় কে কোন পদ পেতে চলেছেন। মোদির মন্ত্রিসভা 2.O থেকে কতটা আলাদা হতে মন্ত্রিসভা 3.O? সমর্থনের পরিবর্তে একগুচ্ছ জরুরি দফতরের দাবি ইতিমধ্যেই করে রেখেছে শরিকদলগুলি। জেডিইউ প্রধান নীতীশ কুমার দলের জন্য চেয়েছেন চার পূর্ণমন্ত্রী ও একটি প্রতিমন্ত্রী পদ। রেল, গ্রামোন্নয়ন ও জলসম্পদের মতো মন্ত্রক রয়েছে সেই তালিকায়। অন্ধ্রপ্রদেশের টিডিপি নেতা চন্দ্রবাবু নাইডু চেয়ে রেখেছেন তিনটি পূর্ণমন্ত্রী ও দু'টি প্রতিমন্ত্রী পদ। জলসম্পদ, গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক, তথ্য-সম্প্রোচার মন্ত্রক, কৃষি মন্ত্রক, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য মন্ত্রকে নিজেদের সাংসদের দেখতে চাইছেন চন্দ্রবাবু। তালিকায় রয়েছে সড়ক পরিবহণ মন্ত্রকও। তার সঙ্গে তাঁর চাই স্পিকারের পদ। মন্ত্রিত্ব চাই বিহারের চিরাগ পাসোয়ানের দল এলজেপি, জিতনরাম মাঝির হাম এবং শিন্ডের শিবসেনা শিবিরের। মন্ত্রিত্ব চেয়ে তদ্বির করেছে এনডিএ-তে থাকা আরও ছোটোবড় দলও।
আরও পড়ুন: কারওর চাই অর্থ তো কারওর স্পিকার পদ! নীতীশ-নাইডুদের প্রত্যাশা রাখতে পারবে তো বিজেপি?
এখন কথা হচ্ছে, এই সমস্ত জরুরি মন্ত্রক কি বিজেপি হাতছাড়া করবে শরিকদের মন রাখতে? ৫৪৩টি লোকসভা আসনের মধ্যে ২৯৩টি জিতেছে এনডিএ। আগের দুটি মেয়াদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল বিজেপি। ফলে তখন ছোটখাটো দলগুলিকে তেমন পাত্তা দেওয়ার প্রয়োজন হয়নি গেরুয়া শিবিরের। তবে এবার পরিস্থিতি অন্য। সরকার গড়ার জন্য চাই ২৭২ নম্বর। সেখানে বিজেপির কাছে আছে মাত্র ২৪০।
যতদূর জানা যাচ্ছে, প্রতিরক্ষা, স্বরাষ্ট্র, অর্থ এবং বিদেশ— এই চারটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রক শরিকদলের হাতে ছাড়তে রাজি নয় গেরুয়া শিবির। নীতীশ কুমারের নজর একাধিক পরিকাঠামোগত পোর্টফোলিওতে। বিশেষত রেল ও গ্রামীণ উন্নয়নের উপর জোর দিয়েছে জনতা দল ইউনাইটেড। এ দিকে বিজেপি এত সহজে পরিকাঠামোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রক শরিকদলের হাতে ছাড়তে চাইচে না বলেই খবর। বিশেষত সড়ক পরিবহণ, হাইওয়ে, এবং জনকল্যাণ কর্মসূচীর জন্য এই সব বিভাগ বিজেপির কাছে জরুরি।
বহুদিন পর্যন্ত রেল শরিকদলের হাতে ছিল এনডিএ জমানায়। অতিকষ্টে তা নিজেদের কাছে ফিরিয়ে এনেছে বিজেপি। সেটিও তারা হাতছাড়া করতে চাইবে বলে মনে হচ্ছে না। বরঞ্চ পঞ্চায়েত রাজ ও গ্রামীণ উন্নয়ন মন্ত্রকগুলি নীতীশকে দেওয়ার কথা ভাবলেও ভাবতে পারে বিজেপি। অন্যদিকে নাইডু যে সব মন্ত্রক চেয়েছেন, তার থেকে ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরে বিজেপি তাদেরকে দিতে চাইছে সিভিল অ্যাভিয়েশন ও ইস্পাতের মতো দায়িত্ব। শিন্ডের শিবসেনা পেতে পারে ভারী শিল্পের দায়িত্ব।
পর্যটন, এমএসএমই, স্কিল ডেভলপমেন্ট, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, আর্থ সায়েন্স ও সামাজিক ন্যায়ের মতো দফতরগুলি দিয়েই শরিকদলগুলিকে খুশি রাখতে চাইবে বিজেপি। তবে যে যে জরুরি দফতরগুলি শরিকদলেরা চেয়ে রেখেছে, সেখানে বিশেষ সুবিধা গেরুয়া শিবির তাদের দেবে না বলেই মনে হচ্ছে এখনও পর্যন্ত। এদিকে, চন্দ্রবাবু নাইডুর এ সবের পাশাপাশি চাই লোকসভার স্পিকারের পদ। যতদূর জানা যাচ্ছে, বিজেপি নাইডুকে বোঝাবে, যাতে ডেপুটি স্পিকারের পদ নিয়েই খুশি থাকেন তিনি।
আরও পড়ুন:মোদি বিরোধিতাই পথ! বিরাট সিদ্ধান্ত নিল ‘ইন্ডিয়া’ জোট
জাতীয় রাজনীতিতে এখন কিংমেকার পজিশনে রয়েছেন নীতীশ-নাইডুরা। এই পরিস্থিতিতে মন্ত্রিসভার ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে গেরুয়া শিবির যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা কি খুশি খুশি মেনে নেবে এনডিএ-র শরিক দলগুলির। 'নাই মামা'-র বদলে আদৌ কি 'কানা মামা'তে খুশি থাকবেন তাঁরা? নাকি এর ফলাফল বদলে দেবে জাতীয় রাজনীতির গতি? বিজেপির অঙ্কের ভুলে হাতছাড়া হবে না তো দেশের মসনদ। নানা মহলে উঠছে প্রশ্ন।