ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ইতিহাসে কটূক্তিতে সেরা মোদিই! উত্তরসূরিকে নিয়ে যা বললেন মনমোহন
Modi Government: ভারতবর্ষের এ যাবৎকালের সবচেয়ে কুকথা বলা প্রধানমন্ত্রী হিসেবেও মোদির নাম উঠে এসেছে সাম্প্রতিক কালে। একের পর এক জনসভা থেকে মুসলিমদের আক্রমণ করেছেন তিনি।
লোকসভা ভোট প্রায় শেষের দিকে। দেশ জুড়ে ১৮তম লোকসভা ভোট ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই মোদি বিভিন্ন রাজ্যে বিভিন্ন জায়গায় শুধু জনসভা করে গিয়েছেন। আর সেখানে যত না কাজের কথা, তার চেয়ে বেশি বলেছেন কুকথা । কখনও তিনি কংগ্রেসকে আক্রমণ করতে গিয়ে ঘৃণাভাষণ করেছেন দেশের সংখ্যালঘু মুসলিমদের বিরুদ্ধে। কখনও তাদের ঘুসপেটিয়া বলে অপমান করেছেন, কখনও বা বেশি সন্তান যাদের বলে কটাক্ষ করেছেন। কখনও তিনি নিজেকে বলেছেন ভগবান, কখনও আবার বলেছেন তাঁর জন্মে নাকি মানবশরীরের মিলনে হয়নি মোটেও। সম্প্রতি জাতির জনক মহাত্মা গান্ধিকে কেউ চেনে না বলে মন্তব্য করে বিতর্ক বাড়িয়েছেন মোদি।
সম্প্রতি পঞ্জাবে ভোটপ্রচারে গিয়েছিলেন দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। ভোটের ঠিক দু'দিন আগে তিনি পঞ্জাবের বাসিন্দাদের কাছে অনুরোধ জানান, যাতে বিজেপির হাতে হেনস্থা হওয়া থেকে দেশের গণতন্ত্র এবং সংবিধানকে রক্ষা করেন। পঞ্জাবের বাসিন্দাদের 'পঞ্জাব ওয়ারিয়ার্স' (যোদ্ধা) বলেও প্রশংসা করেছেন তিনি। প্রবীণ এই কংগ্রেস নেতা জানান, কৃষিআইন কার্যকর করে একাধারে পঞ্জাব, পঞ্জাবি ও তাঁদের পঞ্জাবত্বকে নিশানা করতে চাইছে বিজেপি।
আরও পড়ুন: দেশেবিদেশে কতটা রয়েছেন গান্ধি? ভোটের বাজারে আদৌ কতটা সত্যি বলেন মোদি?
সোশ্যাল মাইক্রোব্লগিং সাইট এক্স-এও মনমোহন সিং তাঁর সহ-নাগরিকদের উদ্দেশে জানান, ভারত একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। শেষ দফার ভোট সামনে। এটাই স্বৈরাচারি শাসনের হাত থেকে আমাদের গণতন্ত্র ও সংবিধানকে রক্ষা করার চূড়ান্ত সময়। পাঞ্জাব এবং পাঞ্জাবিরা আসলে যোদ্ধা। আমরা আমাদের ত্যাগের জন্য পরিচিত গোটা দেশে। দেশের গণতন্ত্রের প্রতি আমাদের আস্থা, একতা-সম্প্রীতি ও মৈত্রীর উপর আমাদের অদম্য বিশ্বাস ও সাহসই দেশকে এই মহান দেশকে রক্ষা করতে পারে।
মনমোহন জানান, গত দশ বছরে পঞ্জাবকে অপদস্থ করার একটাও সুযোগ হাতছাড়া করেনি বিজেপি সরকার। বিতর্কিত কৃষিআইনের বিরোধিতা করতে পথে নেমে শহিদ হয়েছেন সাড়ে সাতশো কৃষক। যাঁরা বেশিরভাগই পঞ্জাবের বাসিন্দারা। দিনের পর দিন দিল্লি সীমান্তে দাঁড়িয়ে তাঁদের লাঠিপেটা করা হয়েছে, গায়ে ছোড়া হয়েছে রাবার বুলেট। না এখানেই হেনস্থার শেষ নয়। মোদি বারবার মৌখিক ভাবে হেনস্থা করেছেন তাঁদের। আন্দোলনজীবী, পরজীবী বলে আক্রমণ করেছেন তিনি পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে। কী তাঁদের অপরাধ? তাঁরা শুধু কৃষকবিরোধী এই আইন প্রত্যাহার করে নেওয়ার দাবি তুলেছিলেন। অথচ একবারও এইসব আইন প্রণয়নের আগে কোনও কৃষকনেতা, কৃষক সংগঠন বা কৃষক প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলা হয়নি।
২০২২ সালের মধ্যে কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মোদি। এদিকে তাঁর কৃষকবিরোধী আইনের জেরে গত দশ বছরে তাঁদের আয় শুধু কমেইছে। একজন কৃষকের দৈনিক আয় ২৭ টাকা। যেখানে তাঁদের গড় ঋণই প্রায় ২৭ হাজার টাকা। এদিকে চাষাবাদে সার, তেল, শস্য- সব কিছু সামলে যে খরচ হয়, তাতে কৃষকদের জীবননির্বাহ করাই কঠিন হয়ে পড়েছে। মনমোহন জানিয়েছেন, কংগ্রেস-ইউপিএ জমানায় প্রায় ৩.৭৩ কোটি কৃষকের প্রায় ৭২,০০০ কোটি টাকা ঋণমকুব করা হয়েছিল। অথচ বিজেপি সরকারের আমলে কৃষকদের উপরে শুধু চাপই বেড়েছে।
“In the past ten years, the BJP government has left no stone unturned in castigating Punjab, Punjabis and Punjabiyat.
— Congress (@INCIndia) May 30, 2024
750 farmers, mostly belonging to Punjab, were martyred while incessantly waiting at Delhi borders, for months together. As if the lathis and the rubber bullets… pic.twitter.com/xJZQrsT3f8
গত দশ বছরে ভারতের অর্থনীতি ভয়ঙ্কর অস্থির অবস্থায় পৌঁছেছে বলে জানান প্রবীণ এই অর্থনীতিবিদ। নোট বাতিলের মতো সিদ্ধান্ত ভারতের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছে। তার উপর জিএসটি নীতি থেকে শুরু করে কোভিডের সময় সরকারের অব্যবস্থা ভারতের অর্থনীতিতে অন্তঃসারশূন্য করে দিয়েছে। গত একশো বছরের মধ্যে দেশের বেকারত্ব ও মুদ্রাস্ফিতি আকাশ ছুঁয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী। মনমোহন জানান, ইউপিএ জমানায় বহু চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও সরকার মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়াতে সক্ষম হয়েছিল কংগ্রেস সরকার। বিজেপি শাসনে তা তলানিতে ঠেকেছে। মানুষের আয় ঠেকেছে তলানিতে।
আরও পড়ুন: কাঁটা উপড়ে ফেলতে দক্ষ মোদি! ক্ষমতায় আসতে কাকে কাকে পথ থেকে সরিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি?
একই সঙ্গে অগ্নিবীর প্রকল্পের মতো অবিবেচক সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেন মনমোহন সিং। একের পর এক দুর্নীতি আগামী ভবিষ্যতকে অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছে। এখনও তিরিশ লক্ষ সরকারি পদ শূন্য। অথচ দেশ জুড়ে বেকারদের ভিড়। বছরের পর বছর ধরে নিয়োগের জন্য অপেক্ষা করছেন তাঁরা। অথচ তাতে টনক নড়ছে না সরকারের। মোদি জমানার একের পর এক অব্যবস্থার কথা তুলে ধরেছেন প্রবীণ এই রাজনীতিবিদ। ভারতবর্ষের এ যাবৎকালের সবচেয়ে কুকথা বলা প্রধানমন্ত্রী হিসেবেও মোদির নাম উঠে এসেছে সাম্প্রতিক কালে। একের পর এক জনসভা থেকে মুসলিমদের আক্রমণ করেছেন তিনি। সাম্প্রদায়িক অশান্তি খুঁচিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন।
ভোটের আগে ইলেক্টোরাল বন্ড দুর্নীতি সামনে আসতেই তড়িঘড়ি সিএএ আইন কার্যকর করে দেন অমিত শাহের দফতর। তার বিরুদ্ধে রাগে ফেটে পড়ে দেশ। আর সেই রাগ নিয়েও মুসলিমদের আক্রমণ করে গিয়েছেন মোদি-শাহেরা। নিজেকে ভগবানের জায়গায় উঠিয়ে এনে হিন্দুভোটের ফায়দা তুলতে চেয়েছেন মোদি? যে 'অচ্ছে দিন' বা 'বিকশিত ভারতে'র স্বপ্ন মোদিরা দেখিয়েছেন, তার এক শতাংশও কি পূরণ হয়েছে দেশে। মোদি বলছেন, তার আমলে গরিবি দেশ থেকে বিদায় নিয়েছে। অথচ সেই মোদিই ভোটের আগে ঘোষণা করেছেন রেশন প্রকল্পের। আসলে মিথ্যার পর মিথ্যা বলে ভোটবাক্স ভরাতে চেয়েছেন মোদি। আর এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি থেকে দেশকে বাঁচাতে সহ-নাগরিকদেরকেই বার্তা দিতে চেয়েছেন প্রবীণ এই রাজনীতিক। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংকে কোনওদিনই তেমন কথা বলতে দেখেননি কেউ। আর মোদি মানেই শুধু কথা আর কথা। পাশাপাশি কুকথাও বটে। মনমোহনের ডাক কি শুনবে পঞ্জাব? পঞ্জাব পেরিয়ে তা কি পৌঁছবে গোটা দেশের নাগরিকদের কাছে? সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে কি কংগ্রেসকে আদৌ জেতাবে দেশ? উত্তর মিলবে আগামী ৪ জুন।