মোদি ম্যাজিক শেষ! বারাণসীতে কেন এত কম ভোট পেলেন মোদি?
Varanasi Narendra Modi Vote: নরেন্দ্র মোদির ভোটের হার ৬৩.৬% থেকে কমে হয়েছে ৫৪.২%।
নরেন্দ্র মোদি জিতেছেন ঠিকই বারাণসী থেকে কিন্তু কোথায় মোদি ম্যাজিক! তিনি খোদ ঈশ্বরের দূত। অথচ ঈশ্বরকে মানুষ ভোটই দিলেন না দু'হাত ভরে? ভারত জোটের প্রার্থী এবং কংগ্রেসের প্রধান অজয় রাইকে হারিয়ে বারাণসী লোকসভা আসনে এবারও মোদি জিতেছেন, তবে মাত্র ১.৫ লক্ষ ভোটের ব্যবধানে। ২০১৪ সাল থেকে মোদি এই প্রথম এমন হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের মুখে পড়লেন। ২০১৯ সালে তিনি যখন এই আসনে জিতেছিলেন তখন তাঁর জয়ের ব্যবধান ছিল ৪.৮ লক্ষ ভোট। গত পাঁচ বছরে মোদি ম্যাজিক হাওয়া?
অজয় রাই ভোট গণনার দিন সকালে বেশ কয়েক ঘণ্টা মোদিকে পিছনে ফেলে দিয়েছিলেন। অজ রাই বলছেন, হারলেও এটি তাঁর 'নৈতিক জয়'। মোদিকে রেকর্ড ভোটে জিততে তো দেননিই, পাশাপাশি নিজের ভোটের সংখ্যাও বাড়িয়েছেন। মোদির কেবল ভোটের ব্যবধান কমেছে তাই নয়, প্রচুর কম মানুষ ভোটও দিয়েছেন তাঁকে। মোদি এবারের নির্বাচনে প্রায় ৬২ হাজার কম ভোট পেয়েছেন। ২০১৯ সালে ৬.৮ লক্ষ ভোট পেয়েছিলেন তিনি। এবার ৬.১ লক্ষ। অথচ গতবারের থেকে কিন্তু ভোট বেড়েছে বারাণসী কেন্দ্রে। প্রায়, ৭০ হাজার ভোট বারাণসী কেন্দ্রে বাড়লেও মোদির ভোট কমেছে। আগে এই কেন্দ্রে মোট ভোট ছিল ১০.৬ লক্ষ, এবার তা বেড়ে ১১.৩ লক্ষ। নরেন্দ্র মোদির ভোটের হার ৬৩.৬% থেকে কমে হয়েছে ৫৪.২%।
আরও পড়ুন- মোদিকে যোগ্য জবাব! মেইতেই-কুকি মিলে কীভাবে বিজেপিকে উপড়ে ফেলল মণিপুর?
নরেন্দ্র মোদি পেয়েছেন ৬,১২,৯৭০ টি ভোট। কংগ্রেসের অজয় রাই পেয়েছেন ৪,৬০,৪৫৭ টি ভোট। ২০১৪ সালে মোদি জয়ের মার্জিন ছিল ৩.৭ লক্ষ। ২০২৪ সালের গণনা শুরুর সময়ই মোদিকে বেশ পিছনে ফেলে দিয়েছিলেন অজয় রাই। অজয় রাইয়ের সংসদীয় নির্বাচনী ব্যবস্থাপনা দলের আহ্বায়ক সুরেন্দ্র নারায়ণ সিংহ অওধে বলেছেন, ২০১৪ সালে, বিজেপি বিরোধী ভোট চারজন প্রতিযোগীর মধ্যে ভাগ হয়ে গেছিল। ২০১৯ সালে সেই ভোট দু'জন প্রতিযোগীর মধ্যে ভাগ হয়েছিল। এবার বিজেপি বিরোধী ভোট ইন্ডিয়া জোটের প্রার্থীর কাছে গিয়েছে, এটিই জয়ের মার্জিন কমার কারণ।
তবে ২০১৯ সালের তুলনায় মোট ভোটের সংখ্যা তো বারাণসীতে বেড়েছে। তা সত্ত্বেও কেন মোদির ভোট সংখ্যা কমল? মোদি বিরোধী হাওয়া যে ইন্ডিয়া জোট সারা ভারতে তুলে দিতে পেরেছে তা এই নির্বাচনের ফলাফলেই স্পষ্ট হয়ে গেছে। বিজেপির গড় উত্তরপ্রদেশেই শোচনীয় অবস্থা হয়েছে দলের। সমাজবাদী পার্টি আর কংগ্রেসের জোট এখানে বিজেপির জেতা আসন কেড়ে নিয়েছে। সেই হাওয়াতেই মোদির ভোট কমেছে বারাণসীতেও। গেরুয়া শামিয়ানার তলে তলে ক্রমেই বিজেপিকে ক্ষমতা থেকে সরানোর চোরাস্রোত এবার ইন্ডিয়া জোট বইয়ে দিতে পেরেছে। বিজেপির কাশি অঞ্চল ইউনিটের সভাপতি দিলীপ সিং প্যাটেল অবশ্য বলছেন, বৈঠক করে বারাণসী আসনে ২০২৪ সালের লোকসভা ফলের খারাপ ভালো দিক সব পর্যালোচনা করা হবে।
অজয় রাই ২০১৪ আর ২০১৯ সালে এই আসনে তৃতীয় হয়েছিলেন। তিনি বলছেন, বিজেপি ক্রমেই সংখ্যাগরিষ্ঠ হতে হতে ক্ষমতার অহংকার অন্ধ হয়ে গেছিল। বিজেপি কাশিতে সব শক্তি দিয়ে ঝাঁপালেও শেষরক্ষা হয়নি। এই জয় ঠিক নিরঙ্কুশ নয়, বরং মোদির গলার কাঁটা। প্রাথমিকভাবে ফলাফল বিজেপিকে চমকে দিয়েছিল। গণনার প্রথম তিনটি রাউন্ডে অজয় রাই এগিয়ে ছিলেন। তবে পরে মোদি এগিয়ে এলে শেষ রাউন্ড পর্যন্ত তিনিই এগিয়ে থাকেন। কিন্তু এই এগনোর মধ্যে দর্প নেই, বরং ভয় আছে।
ভারতের নির্বাচন কমিশন জানাচ্ছে, মোদি এবার জিতেছেন ১,৫২,৫১৩ ভোটের ব্যবধানে। মোদি পেয়েছেন ৬,১২,৯৭০ ভোট, অজয় রাই ৪,৬০,৪৫৭ ভোট আর বিএসপির এথার জামাল লারি ৩৩,৭৬৬ ভোট পেয়ে তৃতীয় হয়েছেন।
আরও পড়ুন- মোদিই প্রধানমন্ত্রী হবেন? নাকি, শেষ মুহূর্তে মোক্ষম চাল দেবেন নীতীশ-নাইডু?
পূর্ব উত্তরপ্রদেশ থেকে মোদির বিরুদ্ধে নির্বাচনী লড়াইয়ে মোট ছয়জন প্রার্থী ছিলেন। রাই এবং লারি ছাড়াও আপনা দলের (কামেরাওয়াদি) গগন প্রকাশ যাদব এবং যুগ থুলাসি পার্টির কোলিসেটি শিব কুমার এবং দু'জন নির্দল, দীনেশ কুমার যাদব এবং সঞ্জয় কুমার তিওয়ারি লড়েছিলেন।
২০১৯ সালে নরেন্দ্র মোদি সমাজবাদী পার্টির শালিনী যাদবকে হারান। মোট ৬৩.৬ শতাংশ ভোট পান। শালিনী যাদব গত বছরই বিজেপিতে যোগ দেন। ২০১৪ সালে, মোদি মোট ভোটের ৫৬.৩৭ শতাংশ পান এবং তাঁর জয়ের ব্যবধান ছিল ৩.৭২ লক্ষ। তিনি আম আদমি পার্টির (এএপি) অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে হারিয়েছিলেন। অজয় রাই তৃতীয় হয়েছিলেন।
২০১৪ সালে মোদির বিরুদ্ধে ১৯ জন নির্দল সহ মোট ৪১ জন প্রার্থী লড়েন। ২০১৯ সালে, এই সংখ্যা কমে হয় ২৬, যাতে ৮ জন ছিলেন নির্দল। ২০২৪ সালে, ৪১ জন প্রার্থী বারাণসীর জন্য মনোনয়ন জমা দিলেও শেষ পর্যন্ত তা কমে হয় ৬, দুই নির্দল সহ। ১৯৯১ সাল থেকে, বিজেপি প্রতিবার আসনটি জিতেছে। একমাত্র ২০০৪ সালে কংগ্রেসের রাজেশ মিশ্রা বিজেপির শঙ্কর প্রসাদ জয়সওয়ালকে ৫৭,৪৩৬ ভোটে হারান।