পৃথিবীজুড়ে ফিরছে এই সংক্রামক রোগ, আক্রান্ত ভারতও! কতটা ক্ষতিকর, প্রতিকার কী?

১৯৫৮ সালে প্রথম এই ভাইরাসের খোঁজ পাওয়া যায়। সেসময় বাঁদরদের মধ্যে পক্সে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা অনেক বেড়ে যাওয়ায় একটি গবেষণা শুরু করা হয়।

একের পর এক রোগের হানা। করোনা-আবহে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে নতুন করে দেখা দিয়েছে বহু পুরনো রোগ। দুর্বল রোগ-প্রতিরোধক্ষমতা এর জন্য বহুলাংশে দায়ী। এবার এই তালিকায় নতুন নাম মাঙ্কি পক্স। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) রিপোর্ট অনুযায়ী বিশ্বজুড়ে ১১টি দেশে প্রায় ৮০ জনেরও বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে মাঙ্কি পক্সে। আরও বেশি মানুষ আক্রান্ত হতে পারে বলেও ধারণা আন্তর্জাতিক এই সংস্থার।

ইতালি, সুইডেন, স্পেন, পর্তুগাল, আমেরিকা, কানাডা এবং ইংল্যান্ডে আগেই মাঙ্কি পক্সে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা সামনে এসেছিল। এবার নেদারল্যান্ডও ঢুকে পড়েছে আক্রান্ত দেশগুলির মধ্যে। সর্বশেষ আপডেট থেকে জানা গেছে যে, সেই দেশে একজন ব্যক্তির দেহে এই ভাইরাস ধরা পড়েছে। চলুন জেনে নেওয়া যাক এই রোগের সংক্রমণ, লক্ষণ, চিকিৎসার ব্যাপারে।

মাঙ্কি পক্স কী?
হু-র মতে মাঙ্কি পক্স হল একপ্রকারের সংক্রামক রোগ এবং এর জন্য দায়ী ভাইরাস-আক্রান্ত প্রাণীর দেহ থেকে মানুষের দেহে সংক্রমণ ঘটা। কম রান্না করা মাংস বা সংক্রামিত প্রাণীর থেকে তৈরি খাবার খেলে একজন ব্যক্তি এই রোগে আক্রান্ত হন। মানুষ থেকে অন্য একজনের শরীরে এই ভাইরাস সীমিত ক্ষেত্রেই সংক্রামিত হয়। মূলত সংক্রামিত ব্যক্তির দেহজ তরল, ত্বক, বিছানা এবং জামাকাপড় ব্যবহার করলে এই ভাইরাস অন্যদের শরীরেরও ছড়িয়ে পড়ে। স্মল পক্সের সঙ্গে এর মিল থাকলেও ততখানি ভয়ের নয়‌। মধ্য এবং পশ্চিম আফ্রিকার দেশে সাধারণত এই রোগের সংক্রমণ দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়া শহরাঞ্চলে বা ট্রপিক্যাল বনভূমির পার্শ্ববতী এলাকাতেও এই ভাইরাসের সংক্রমণ লক্ষ করা যায়।

আরও পড়ুন: পৃথিবীর জলভাগ ভরে যাবে অ্যাসিডে, ২৬০০০ বছরে প্রথম এই চরম সর্বনাশের মুখোমুখি পৃথিবী

মাঙ্কি পক্সের ইতিহাস
১৯৫৮ সালে প্রথম এই ভাইরাসের খোঁজ পাওয়া যায়। সেসময় বাঁদরদের মধ্যে পক্সে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা অনেক বেড়ে যাওয়ায় একটি গবেষণা শুরু করা হয়। তার থেকেই নাম হয় 'মাঙ্কি ভাইরাস'। মানুষের শরীরে প্রথম এই ভাইরাসের সংক্রমণ লক্ষ করা যায় ১৯৭০ সালে আফ্রিকার কঙ্গো দেশে। পরবর্তী সময়ে আফ্রিকার বহু দেশেও ছড়িয়ে পড়ে এই ভাইরাস। আফ্রিকার বাইরে আমেরিকা, ইজরায়েল, সিঙ্গাপুরেও মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। ২০১৮ সালে ইংল্যান্ডে প্রথম এই ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির খোঁজ পাওয়া যায়। চিকিৎসকদের মতে তারপর থেকে বেশ কিছু সংক্রমণের খবর এসেছে।

মাঙ্কি পক্সের লক্ষণ
শরীরে এই ভাইরাস প্রবেশের পর ৬ থেকে ১৩ দিন অবধি তা দেহে থাকে। তবে অনেকসময় দুই থেকে চার সপ্তাহ পর্যন্ত মানবদেহে বাঁচতে পারে এই ভাইরাস।প্রথমদিকে এই ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি গা-হাতপায়ে ব্যাথা, গলা ব্যথা, মাথা ব্যথা, গলা ফুলে যাওয়া এবং ক্লান্তি অনুভব করেন। সঙ্গে গায়ে-মুখে ফুসকুড়ি দেখা যায়। এমনকী, পায়ের পাতা, হাতের তালু, মুখের ভেতর এবং কর্নিয়াতেও ফুসকুড়ি উঠতে পারে। এগুলো শুকিয়ে খসে পড়ার আগে সময়ের সঙ্গে বদলে যায় এর রূপ।

বয়স্ক এবং মাঝবয়সিদের তুলনায় বাচ্চারা এই ভাইরাসে বেশি আক্রান্ত হয়। এমনকী, মায়ের শরীর থেকে ভ্রূণ বা সদ্যোজাতদের শরীরেও ছড়িয়ে পড়তে পারে এই সংক্রমণ।

সংক্রমণ ধরা পড়লে কী করবেন?
শরীরে মাঙ্কি ভাইরাসের কোনও লক্ষণ দেখা দিলে একেবারেই অবহেলা করবেন না। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। সম্ভব হলে নিজেকে অন্যদের থেকে আলাদা রাখুন এবং ভুলেও অন্যের সংস্পর্শে আসবেন না। বারবার করে স্যানিটাইজার ব্যবহার করে হাত পরিষ্কার রাখুন। সঙ্গে ডাক্তারের পরামর্শমতো খাবার ও ওষুধ খান।

চিকিৎসা
সংক্রমণের বেশ কিছুদিন পর নিজে থেকেই লক্ষণগুলি কমে যেতে থাকে কোনও চিকিৎসা ছাড়াই। তবে অনেক সময় ফুসকুড়িগুলো শোকাতে চিকিৎসার সাহায্য নিতে হয়। তবে হু-এর মতে গুরুতর সংক্রমণের ক্ষেত্রে ভ্যাকসিনিয়া ইমিউন গ্লোবিউলিন ব্যবহার করা যেতে পারে।

ভ্যাকসিন
এক্ষেত্রে স্মল পক্সের জন্য ব্যবহৃত ট্যাকোভিরিম্যাট ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। এছাড়া স্মল পক্সের জন্য বাজারে যে ভ্যাকসিন রয়েছে, তাও সাময়িকভাবে সংক্রমণ রুখতে সম্ভব। তাই যাঁদের স্মল পক্সের ভ্যাকসিন দেওয়া আছে, তাঁদের সংক্রামিত হওয়ার সম্ভাবনা কম।

মৃত্যুর সম্ভাবনা
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-র মতে, মধ্য আফ্রিকায় সমীক্ষা করে দেখা গেছে যে, যেখানে মানুষের স্বাস্থ্য পরিষেবা উন্নত নয়, সেখানে এই রোগে ১০ জন সংক্রামিত ব্যক্তির মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে। বেশিরভাগ রোগী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন।

ইতিমধ্যেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মাঙ্কি পক্সের সংক্রমণ নিয়ে জরুরি বৈঠক করেছে। ভারতের বিমানবন্দরগুলিতে বিদেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের দেহে কোনও লক্ষণ রয়েছে কি না, তা পরীক্ষা করে দেখা শুরু হয়েছে।

 

More Articles