প্রতি বছর আক্রান্ত ৫০ হাজার ভারতীয় শিশু, ছোটদের ক্যানসার নিয়ে সতর্ক হন আজই

Childhood Cancer Awareness : কেবল প্রাপ্তবয়স্কদেরই ক্যানসার হয়, এমনটা নয়। ছোট ছোট শিশুরাও এই মারণ রোগে আক্রান্ত হয়।

ক্যানসার, এই শব্দটা শুনলে এক অদ্ভুত আতঙ্ক পেয়ে বসে আমাদের। প্রায় প্রত্যেকের জীবনেই চেনাজানা মানুষ রয়েছেন, যারা এই মারণ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁদের কষ্ট অনেকেই চোখের সামনে দেখেছেন। ২০২২-র শেষের দিকে গোটা বাংলা কেঁদে উঠল ঐন্দ্রিলা শর্মার মৃত্যুতে। কতই বা বয়স তাঁর! কিন্তু ক্যানসার এসে তাঁর যুদ্ধটা কথিম করে দিল। ক্যানসার, বায়োপ্সি, কেমোথেরাপি – শব্দগুলি এখন দুশ্চিন্তার আরেক নাম। সবারই একটাই প্রার্থনা, নিজের পরিবারে যেন কারও এই মারণ রোগ না হয়।

কিন্তু ক্যানসার এমনই এক রোগ, যখন আসে নিঃশব্দে বাসা বাঁধে শরীরে। আগেভাগে ধরা পড়লে আধুনিক চিকিৎসার মাধ্যমে সারিয়ে তোলা সম্ভব। এখনও ক্যানসার নিয়ে বিভিন্ন মহলে গবেষণা হচ্ছে। তবে কেবল প্রাপ্তবয়স্কদেরই ক্যানসার হয়, এমনটা নয়। ছোট ছোট শিশুরাও এই মারণ রোগে আক্রান্ত হয়। তাদের যন্ত্রণায় কাতর হয়ে আসা মুখ সত্যিই কষ্ট দেয়। সাম্প্রতিক সমীক্ষা বলছে, প্রতি বছর তিন থেকে চার লক্ষ শিশু কোনও না কোনও মারণ ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছে। একা ভারতেই সেই সংখ্যাটি ৫০,০০০-র ওপর! কেউ কেউ দীর্ঘ চিকিৎসার পর সুস্থ হয়, কেউ আবার অকালেই নিভে যায়।

ছোটদের কেন ক্যানসার হয়?

ক্যানসার – এই রোগটির সঙ্গে মানবদেহের একটি বিশেষ জিন জড়িত। নাম – অঙ্কজিন (Oncogene)। এই বিশেষ জিনটি সক্রিয় হয়ে গেলে ক্যানসারের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। ম্যালিগনেন্ট টিউমার কোষগুলিতে এই জিনের দ্রুত মিউটেশন ঘটে। পরিবেশ, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, ধূমপান, মদ্যপান সহ বিভিন্ন বাহ্যিক কারণ ক্যানসারকে ত্বরান্বিত করে।

কিন্তু এসব তো প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে। ছোট্ট শিশুদের ক্ষেত্রে তো এই ব্যাপারগুলি আসে না। তাহলে কেন কেবল ভারত নয়, গোটা বিশ্বেই এত বেশি সংখ্যক শিশু ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছে? এখনও সঠিকভাবে এর উত্তর পাননি গবেষকরা। এক্ষেত্রে জেনেটিক কারণ ছাড়াও পরিবেশেরও একটা প্রভাব থাকতে পারে বলে মনে করছেন তাঁরা। শিশুদের ক্ষেত্রে যে ক্যানসারগুলি দেখা যায়, তার ধরনধারণও প্রাপ্তবয়স্কদের থেকে আলাদা। কেমোথেরাপির মতো যন্ত্রণাদায়ক নিরাময় প্রক্রিয়ার মধ্যেও যেতে হয় তাদের।

শিশুদের ক্ষেত্রে কোন কোন ক্যানসার বেশি দেখা যায়?

পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট, বিশ্বের বহু শিশু এই মারণ রোগের আক্রমণে মারা যায়। এই অবস্থায় কী করে সন্তানদের রক্ষা করবেন? তার আগে জেনে নেওয়া যাক, শিশুদের ক্ষেত্রে কোন কোন ক্যানসার বেশি দেখা যায়। তাদের উপসর্গগুলি জেনে নেওয়াও অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি জিনিস। কারণ, যত তাড়াতাড়ি ক্যানসার ধরা পড়বে, তত দ্রুত তার চিকিৎসা শুরু হবে। আর তত তাড়াতাড়ি ওই শিশুটি সুস্থ হয়ে উঠবে।

লিউকেমিয়া

রক্তের ক্যানসারও বলা যায়। এর ফলে শরীরে হঠাৎ করে শ্বেত রক্তকণিকা বেড়ে যায়। অস্থিমজ্জাও মারাত্মকভাবে ক্ষতির মুখে পড়ে। শিশুদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি এই ক্যানসারই দেখা যায়। যদি হঠাৎ করে আপনার সন্তানের খিঁচুনি শুরু হয়, অল্পতেই দুর্বল হয়ে পড়ে, ইনফেকশন দৈনন্দিন ঘটনা হয়ে পড়ে – তাহলে তড়িঘড়ি ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়াই বাঞ্ছনীয়। এগুলোই লিউকেমিয়ার প্রাথমিক রোগ লক্ষণ।

নিউরোব্লাস্টোমা

এই বিশেষ প্রজাতির ক্যানসার সাধারণত শিশুদের স্নায়ুতন্ত্রে আঘাত করে। অ্যাড্রিনালিন গ্ল্যান্ডে এই ম্যালিগনেন্ট কোষগুলি তৈরি হয়, তারপর ছড়িয়ে পড়ে। হঠাৎ করে বাচ্চার চোখের নিচে কালি, ওজন হ্রাস, পেটে ব্যথা হলে তৎক্ষণাৎ প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করিয়ে নিন।

মস্তিস্ক ও কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের টিউমার বা ক্যানসার

ব্রেন টিউমার – এই নামটি অনেকেই শুনেছেন। কেবল মস্তিস্ক নয়, শিশুর কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রেও এই টিউমার গজিয়ে উঠতে পারে। ম্যালিগনেন্ট হলেই বিপদ! বারবার প্রবল মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব, দৃষ্টিশক্তি হঠাৎ ঝাপসা হয়ে যাওয়া, কাঁপুনি, হাঁটাচলার ভারসাম্য রাখতে সমস্যা ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিলে ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। শিশুদের মধ্যে এই বিশেষ রোগটি বেশ ভালো পরিমাণেই দেখা যায়।

উইলমস টিউমার

কিডনি ক্যানসারের আরেক নাম এই উইলমস টিউমার। সাধারণত ৩-৪ বছর বয়সি বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এই রোগটি দেখা যায়। তলপেটে ব্যথার সঙ্গে মুত্রে ক্রমাগত রক্ত মিশে যাওয়া, এই ক্যানসারের অন্যতম প্রধান লক্ষণ।

লিম্ফোমা

মানুষের লসিকাগ্রন্থি বা লিম্ফ্যাটিক গ্ল্যান্ডে এই ক্যানসার দেখা যায়। এই লসিকাগ্রন্থির কাজই হল শরীরের যাবতীয় ইনফেকশনের সঙ্গে লড়াই করা। ওই জায়গায় ক্যানসার হলে এই লড়াইটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। হঠাৎ করে ওজন কমে যাওয়া, গলা, বগলে অত্যাধিক ঘাম, খিঁচুনি সহ বিভিন্ন লক্ষণ দেখা যায়।

এছাড়াও জ্বর, খিদে কমে যাওয়া, হাড়ে ব্যথা, রক্তপাত, হঠাৎ করে শুষ্ক ত্বক ইত্যাদি বেশকিছু রোগ লক্ষণও দেখা যায়। সামান্য রক্তপরীক্ষা করলে, কিংব বায়োপ্সি করলে ক্যানসার ধরা পড়ে যাবে। যদি একদম প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়ে, তাহলে সুস্থ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে অনেকটা বেশি।

More Articles