চেঁচিয়ে কথা বলা অভ্যাস? হু হু করে ভারতীয়দের দেহে বাড়ছে এই ক্যান্সার...

Head and Neck Cancer: সারা বিশ্বের প্রেক্ষিতে দেখতে গেলে, প্রায় ৫৭.৫% মাথা এবং ঘাড়ের ক্যান্সার এশিয়াতেই ঘটে।

ক্যান্সার শুধু শরীরকে খেয়ে নেয় না। ক্যান্সার শেষ করে দেয় মানসিক সুস্থতা, ক্যান্সারে আক্রান্ত ব্যক্তি শুধু না সমস্ত পরিবারের বিপন্নতা ক্রমেই প্রকট হতে থাকে। দেহের যে কোনও অংশেই ক্যান্সারের প্রকোপ বাড়তে বাড়তে ছেয়ে পড়তে পারে সারা শরীর জুড়ে। বিভিন্ন ক্যান্সারের মধ্যে মাথা ও ঘাড়ের ক্যান্সার বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে জড়িতদের কাছে এক বিপুল চ্যালেঞ্জ। বিশ্বব্যাপী লক্ষ লক্ষ মানুষ এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন। মাথা এবং ঘাড়ের ক্যান্সারের আক্রান্তদের সংখ্যা সারা বিশ্বেই বেশ বেশি হলেও, বিশেষ করে এশিয়ায় এই রোগের প্রকোপ ভয়াবহ। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, ঘাড় ও মাথার ক্যান্সারে আক্রান্তদের একটি বড় অংশের বাস আমাদের দেশ ভারতে।

সারা বিশ্বের প্রেক্ষিতে দেখতে গেলে, প্রায় ৫৭.৫% মাথা এবং ঘাড়ের ক্যান্সার এশিয়াতেই ঘটে। এই সাড়ে সাতান্ন শতাংশের মধ্যে আবার ৩০% রোগী রয়েছেন শুধু ভারতেই। উন্নত দেশগুলিতে যেখানে আক্রান্তের হার ৪০%, সেই তুলনায় ভারতে রোগীদের আক্রান্ত হওয়ার হার ৬০ থেকে ৮০% পর্যন্ত।

বিশ্বব্যাপী এই রোগের বিরুদ্ধে লড়াই ও সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা মাথায় রেখেই ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব হেড অ্যান্ড নেক অনকোলজিক সোসাইটিস (IFHNOS) প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ৫১টি দেশ জুড়ে ৫৫টি সমিতি এবং ইউনিয়ন ফর ইন্টারন্যাশনাল ক্যান্সার কন্ট্রোলের (UICC) সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে IFHNOS মাথা ও ঘাড়ের ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই সম্মিলিত প্রচেষ্টাতেই ২৭ জুলাইকে বিশ্ব মাথা এবং ঘাড়ের ক্যান্সার দিবস হিসাবে পালন করা হয়।

আরও পড়ুন- কোনও দিনও আবিষ্কার হবে না ক্যান্সারের চিকিৎসা! ভয়াবহ যে তথ্য কাঁপিয়ে দিল বিশ্বকে

মাথা এবং ঘাড়ের ক্যান্সের প্রাথমিক লক্ষণগুলি কী কী?

মাথা ও ঘাড়ের ক্যান্সারের মোকাবিলা সম্ভব তা প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে। রোগটিকে প্রাথমিক পর্যায়েই শনাক্ত করার জন্য লক্ষণ ও উপসর্গগুলি বোঝা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মাথা ও ঘাড়ের ক্যান্সারের একদম প্রাথমিক লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে ক্রমাগত গলা কর্কশ হতে থাকা বা কণ্ঠস্বর পরিবর্তন। গিলতে অসুবিধা, ঘাড়ে কোনও মাংসপিণ্ড বা মুখের মধ্যে আলসারও হতে পারে, যা কিছুতেই সারানো সম্ভব হয় না বা কমে যায় না। যদি এই লক্ষণগুলির মধ্যে যে কোনও একটি তিন সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে চলতে থাকলে, চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা দরকার।

এই ক্যান্সারের চিকিত্সা কী?

শনাক্ত করা হয়ে গেলে মাথা এবং ঘাড়ের ক্যান্সারের চিকিত্সা ক্যান্সারের ধরন, পর্যায় এবং অবস্থান সহ বিভিন্ন কারণের উপর নির্ভর করে। চিকিত্সার বলতে মূলত, অস্ত্রোপচার, রেডিয়েশন থেরাপি, কেমোথেরাপি, টার্গেটেড থেরাপি এবং ইমিউনোথেরাপি। কথা বলা, গিলতে পারার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলি স্বাভাবিকভাবে করতে হলে এই ক্যান্সার নির্মূল করাই প্রাথমিক লক্ষ্য। প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে আর চিকিত্সা সঠিক হলে উল্লেখযোগ্য বদল আসে রোগীর জীবনযাত্রায়।

আরও পড়ুন- পানীয় জল থেকেই ক্যান্সার! রোজ এভাবেই মিশছে ক্ষতিকর চিরস্থায়ী রাসায়নিক

চিকিৎসা তো নাহয় একেবারে শেষ অস্ত্র। এই ক্যান্সার ঠেকাতে সচেতন হওয়া কি সম্ভব না? মাথা এবং ঘাড়ের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে জীবনে কিছু বদল দরকার। মাথা এবং ঘাড়ের ক্যান্সারের উল্লেখযোগ্য কারণের মধ্যে রয়েছে তামাক ব্যবহার, অত্যধিক অ্যালকোহল সেবন এবং হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাস (এইচপিভি) সংক্রমণের মতো ঝুঁকি। তামাক ছেড়ে দেওয়া, মদ্যপান কমানো এবং এইচপিভি টিকা মাথা ও ঘাড়ের ক্যান্সার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করতে পারে।

মদ বা অন্য নেশা ছাড়াও যথোপযুক্ত মৌখিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাও দরকার, যেমন নিয়মিত দাঁতের চেক-আপ, ভয়েস হাইজিন অনুশীলন যেমন ঘন ঘন গলা পরিষ্কার করা বন্ধ করা, দীর্ঘ সময় ধরে মাত্রাতিরিক্ত ডেসিবেল/ বা হাই পিচে কথা বলা বন্ধ করা, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া এবং অত্যধিক রোদে না থাকা। মাথা এবং ঘাড়ের অঞ্চলে কিছু ত্বকের ক্যান্সার ঘটে সূর্যালোকের কারণে।

 

More Articles