তুলতুলে চিকেন, জিভে জল আনা স্বাদ, মাত্র ১০ টাকায়! এমন বিরিয়ানির ঠেক কোথায়, জানেন?
10 Rupees Biryani in Habra : কিন্তু কত আর দাম? সেই সংখ্যাটি শুনে চমকে উঠবে সবাই। মাত্র ১০ টাকায় সুস্বাদু চিকেন বিরিয়ানি!
লাল শালুতে ঢাকা বিশাল হাঁড়ি। তার ভেতর যত্ন করে রান্না হচ্ছে ভাত আর মাংস। সঙ্গে নানাবিধ মশলা, ডিম, আলু। হাঁড়ির ঢাকনা খোলার পর স্রেফ পাতে পড়ার অপেক্ষা। কেবল বাঙালি নয়, গোটা ভারতীয়দের কাছে বিরিয়ানি স্বর্গের আরেক নাম। চিকেন, মাটন হোক বা কলকাতার নিজস্ব আলু বিরিয়ানি, এই খাবারটি পাতে পড়লে আর কোনও দিকে খেয়াল থাকে না। নামী দামি রেস্তোরাঁ তো বটেই, রাস্তার ধারের ছোট ছোট গুমটিগুলোও সেই পসরা সাজিয়ে বসে।
হাবড়ার হিজলপুকুরের বটতলায় এরকমই একটি দোকানের বাইরে লম্বা লাইন। আট থেকে আশি, সবাই উৎসুক হয়ে অপেক্ষা করছে। ‘দামে কম, মানে ভালো’ বিরিয়ানি বলে কথা! কিন্তু কত আর দাম? সেই সংখ্যাটি শুনে চমকে উঠবে সবাই। মাত্র ১০ টাকায় সুস্বাদু চিকেন বিরিয়ানি! এ যে না চাইতেই আকাশের চাঁদ হাতে চলে এল! ১০ টাকার এমন বিরিয়ানি খেতেই সকাল-সন্ধে ভিড় জমছে উত্তর ২৪ পরগণার হাবড়ার হিজলপুকুরের বটতলার বিরিয়ানি সেন্টারে। সৌজন্যে, এলাকার বিরিয়ানির ‘ম্যাজিশিয়ান’ বাবু কর।
আরও পড়ুন : মুঘল নয়, খোদ সংস্কৃতে উল্লেখ রয়েছে বিরিয়ানির! জিভে জল আনা এই পদ আসলে কতটা প্রাচীন?
বাবু পেশায় একজন রাঁধুনি। বিরিয়ানিই তৈরি করেন তিনি, সেখানেই তিনি বিশারদ। এলাকাতেই একটি দোকানে বিরিয়ানি রাঁধেন তিনি। তারও আগে ২০১৩ সালে গোয়ায় গিয়েছিলেন রান্নার কাজ করতে। বছর পাঁচেক আগে সল্টলেকের একটি রেস্তোরাঁয় ফের কাজ শুরু করেন। কিন্তু করোনা মহামারী আর লকডাউন সব শেষ করে দেয়। তখনই মাথায় আসে নিজের দোকান দেওয়ার কথা। রান্নাটা তাঁর পেশা এবং নেশাও। তাই সেটার হাত ধরেই ভাগ্য ফেরানোর যাত্রা শুরু।
হিজলপুকুরেই স্ত্রী আর ছেলেকে নিয়ে থাকেন বাবু। দোকানের সামনেই স্কুল। মূলত বাচ্চাদের কথা ভেবেই শুরু করেন টিফিন বিরিয়ানি। মাত্র ১০ টাকায় চিকেন বিরিয়ানি দিতে শুরু করেন তিনি। একটু একটু করে ভাইরাল হয়ে যান বাবু কর ও তাঁর দোকান। বিরিয়ানির পরিমাণ একটু কম থাকে, মাংসের পিসও সামান্যই ছোট। তাতে কী হয়েছে? দাম কম নিলেও স্বাদের দিক থেকে এতটুকুও কমতি নেই এখানে। বাচ্চাদের কথা ভেবে শুরু করলেও এখন আট থেকে আশি সবাই এই দোকানের ফ্যান।
আরও পড়ুন : বিরিয়ানির হাঁড়িতে লাল শালু বাঁধা থাকে কেন জানেন ?
এছাড়াও অন্যান্য দামের বিরিয়ানিও আছে। ৫০ টাকায় হাফ প্লেট চিকেন বিরিয়ানি, ফুল প্লেট ৭০ টাকায়। মাত্র ৮০ টাকায় মাটন বিরিয়ানি। এছাড়াও ৩০ টাকায় আলু বিরিয়ানিও পাওয়া যায়। যত দিন যাচ্ছে, ভিড় আরও বাড়ছে বাবু করের দোকানে। দাম কম হলেও, স্বাদ যেন বজায় থাকে, সেটাই লক্ষ্য তাঁর। এখনও অবধি সেই লক্ষ্যে যে তিনি সফল, তা তো বোঝাই যাচ্ছে। খদ্দেররাও অত্যন্ত খুশি। বাবুর হাতে জাদু আছে, সবসময় মুখে হাসি নিয়ে মানুষদের খাওয়াচ্ছে – এটাই এখন সবার কথা। বাবু করের অবশ্য এসব শোনার সময় নেই। মন দিয়ে বিরিয়ানি তৈরি করছেন তিনি। হাজার হোক, মানুষের মুখে হাসি আর পেটে শান্তি – এটাই তো বড় কথা!
তাহলে? কলকাতার কাছেই হাবড়ার এই জায়গায় সময় নিয়ে একবার চলে যাওয়াই যায়। বাবু করের বিরিয়ানির দোকান এমনিতেই এখন বিখ্যাত। ১০ টাকায় ভরপেট খাবার, স্বাদেও অসাধারণ! এমন সুযোগ কি পাওয়া যাবে আর!