ফুসফুসের ৪০% বিকল! একাই ৪৫টি যন্ত্র বাজিয়ে দেশের 'ওয়ান ম্যান ব্যান্ড' এই ব্যক্তি

One Man Band: যে মানুষ সঙ্গীত অন্ত প্রাণ, তাঁর জীবনে তখন অনিশ্চয়তা, মৃত্যুর চিন্তা।

একাই একশো! নাহ একটু ভুল হলো, একাই ৪৫। অবসাদে ডুবেছিলেন দীর্ঘকাল। ফুসফুস প্রায় অক্ষম হতে বসার মুখে। তবু, তিনি একাই হয়ে উঠলেন ৪৫ জন শিল্পীর সমান। তিনি মুম্বইয়ের গ্ল্যাডসন পিটার। যদিও, এই নামে ক'জনই বা চেনে তাঁকে? 'ওয়ান ম্যান ব্যান্ড' নামেই মায়ানগরীতে বেশি পরিচিত তিনি। বিষণ্ণতা, অবসাদ এবং ফুসফুসের সমস্যা কাটিয়ে উঠে আজ, পিটার একই সময়ে একই সঙ্গে ১৪ টি যন্ত্র বাজাতে পারেন, গাইতেও পারেন। একাই ৪৫ টির মতো যন্ত্র বাজাতে পারেন এই শিল্পী!

কোনওদিনই কোনও মিউজিক্যাল গ্রুপ বা ব্যান্ডের সদস্য হতে চাননি তিনি। গ্ল্যাডসন পিটার হয়ে উঠতে চেয়েছিলেন নিজেই এক আস্ত ব্যান্ড! তিনিই নিজেকে 'ওয়ান ম্যান ব্যান্ড' বলে ডাকা শুরু করেন। মুম্বইয়ের বহু জায়গায় একইসঙ্গে ১৪টি যন্ত্র নিয়ে বাজিয়ে, গেয়ে হাজার হাজার মানুষকে মুগ্ধ করেন পিটার। তবে মুম্বই তাঁর ভিটেমাটি নয়।

তিরুনেলভেলিতে জন্ম গ্ল্যাডসন পিটারের। গান বাজনার প্রতি গ্ল্যাডসনের যে আগ্রহ রয়েছে, তা তিন বছর বয়সেই টের পাওয়া গিয়েছিল। সেই কচি বয়সেই খেলনা কীবোর্ড নিয়ে খেলতে খেলতে বাজাতে ভালোবাসতেন পিটার। সময় যত এগোয়, সঙ্গীতের প্রতি তাঁর ভালোবাসা, বিশেষ করে তালের প্রতি তাঁর আগ্রহ ধীরে ধীরে প্রস্ফুটিত হয়। যদিও সঙ্গীতের কোনও আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ তাঁর কোনও দিনই ছিল না। প্রতিভাবান পিটার পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি গির্জার গায়কদের দলের সঙ্গে জড়িত ছিলেন সবসময়ই।

আরও পড়ুন- কেন চটলেন ইন্দিরা গান্ধী! কেন ভারতে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল কিশোরের গান?

“আমার বাবাই ছিলেন আমার প্রথম এবং একমাত্র শিক্ষক। তিনিই আমাকে শিখিয়েছিলেন কীভাবে গিটার এবং কীবোর্ড বাজাতে হয়, তখন আমি ছোট ছিলাম। আমার কৌতূহল, আগ্রহ এবং ঈশ্বর প্রদত্ত প্রতিভাই আমাকে সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে গড়ে তুলেছে,” ফার্স্টপোস্টের একটি সাক্ষাত্কারে বলেছিলেন পিটার। তবে কম বয়সেই তাঁর এই চর্চায় বাধা হয়ে দাঁড়ায় শরীর। পিটার, পিটারের পরিবার কেউই ভাবতে পারেনি এত কম বয়সে এমন রোগের কবলে পড়বেন তিনি। বয়স যখন কুড়ির কোঠায়, প্লুরাল ইফিউশন ধরা পড়ে পিটারের শরীরে। তাঁর ফুসফুসে দু'টি ছিদ্র তৈরি হয়। ফুসফুসের কার্যকারিতার ৪০ শতাংশ নষ্ট হয়ে যায়।

প্রায় এক বছরেরও বেশি সময় ধরে পিটার তখন শয্যাশায়ী! যে মানুষ সঙ্গীত অন্ত প্রাণ, তাঁর জীবনে তখন অনিশ্চয়তা, মৃত্যুর চিন্তা। আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন অনেকবারই। অবসাদের মেঘ এসে জমেছিল তাঁর পছন্দের সমস্ত বাদ্যযন্ত্রের উপর। তবে, সেই যে আগ্রহ আর কৌতূহল তাঁকে যন্ত্রশিল্পী করে তুলেছিল, সেই প্রাণশক্তিই এ যাত্রায় বাঁচিয়ে দিল পিটারকে। পিটার হতাশা আর অবসাদ কাটিয়ে উঠলেন ধীরে ধীরে। নিজের সঙ্গীতশিল্পী হওয়ার আকাঙ্ক্ষার গাছে ফের সার দিলেন, জল দিলেন। 'ওয়ান ম্যান ব্যান্ড' হয়ে ওঠার ভাবনাও জন্ম নেয় তখনই। পিটারের দাবি, এ আসলে এমন এক দক্ষতা যা বিশ্বজুড়ে মাত্র কয়েকজনেই রয়েছে।

"আমি তিন বছরের ব্যবধানে ২,০০০ টিরও বেশি শো করেছি এবং শুধুমাত্র ভারতেই নয়, চিন এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহির মতো অন্যান্য দেশেও ব্যাপকভাবে শো করেছি,” বলেছেন গ্ল্যাডসন৷ একাই তিনি ৪৫ টির মতো বাদ্যযন্ত্র বাজাতে পারেন। “একজন ব্যান্ডের ধারণা নতুন নয়, এর দীর্ঘ ইতিহাস আছে। আপনি যদি কোল্ডপ্লে-র বিখ্যাত মিউজিক ভিডিওটি দেখে থাকেন, আ স্কাই ফুল অব স্টারস আপনি এই বিষয়টি বুঝতে পারবেন," বলছেন পিটার।

এখন অবশ্য অন্যদেরও সঙ্গীত শেখাচ্ছেন গ্ল্যাডসন পিটার। বেস ড্রাম, স্নেয়ার ড্রাম, হিট-হ্যাট সিম্বল, অ্যাকোস্টিক গিটার, পিয়ানিকা/মেলোডিকা, হারমোনিকা, কাজু, স্লাইড হুইসেল, ট্যাম্বোরিন এবং ঘুংরু একসঙ্গে নিয়ে বাজান তিনি। তবে ড্রাম এবং ইউকুলেলেই তাঁর প্রিয় যন্ত্র। পিঠে এই ব্যান্ড নিয়ে ঘোরেন তিনি। পুরো বিষয়টার ওজন ২৫ কেজিরও বেশি।

More Articles