নুন দিয়ে দেহ শুকনোর পর কী এমন মাখানো হতো দেহে? অবশেষে ফাঁস মমি তৈরির রহস্য
Mummification Process: নুন দিয়ে শরীর শুকনোর পরে মৃতদেহগুলিকে নীচে নিয়ে যাওয়া হতো। সেখানে মন্ত্র এবং স্তোত্র উচ্চারণ করতে করতে মৃতদের আবৃত করা হতো।
মানুষ মরে যাওয়ার পরেও কীভাবে তার মৃতদেহকে টাটকা রাখা যায়? কীভাবে দাহ না করে, মাটি চাপা না দিয়ে স্রেফ কাপড়ে মুড়ে মুড়ে দীর্ঘকাল ধরে সংরক্ষিত করা যায়? মিশর আজও এই একটি প্রশ্নেই রহস্যের সেরা আধার। মমি কেন তৈরি করা হতো, কীভাবেই বা তৈরি হতো, প্রাচীন মিশরীয়রা মৃত্যুর পর মৃতদেহের সংরক্ষণকে কি পরবর্তী জীবনে যাওয়ার পথ মনে করত? গবেষকরা এখন এই রহস্য সমাধানের চেষ্টায় আরও নিবিড় মনযোগ করেছেন। হাজার হাজার বছর ধরে মমি করে রাখার আসল রসায়নের পাঠোদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছেন। গবেষকরা বিভিন্ন জার সংগ্রহ করেছেন এই পদ্ধতিকে বিশদে জানতে। সম্প্রতি নেচার জার্নালে এই প্রক্রিয়ার বিশদ বিবরণ প্রকাশিত হয়েছে।
প্রায় ২,৫০০ বছরের পুরনো মৃৎপাত্রের ভাণ্ডার সহ একটি কর্মশালা খুঁজে পেয়েছেন গবেষকরা। মাইক্রোবিয়াল সায়েন্স তখন কোথায়! সেই কোন কালেই মানুষের টিস্যু সংরক্ষণ এবং পচা দুর্গন্ধ রোধ করার জন্য প্রয়োগ করা হতো নানান উপাদান। ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ববিদ জোয়ান ফ্লেচার জানাচ্ছেন, প্রাচীন মিশরীয়রা খুব ভালোভাবেই জানতেন মৃতদের সংরক্ষণ করতে কী কী জিনিস সাহায্য করতে পারে। মৃতদেহ সংরক্ষণ প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত উপাদানগুলি বিশ্বের নানা দূরবর্তী অঞ্চল থেকে আনা হয়েছিল। কিছু কিছু উপাদান দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকেও আমদানি করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন- মমিতে লুকিয়ে অবিশ্বাস্য রহস্য! মিশরের এই সম্রাটকে নিয়ে যে প্রশ্নের উত্তর আজও মেলেনি
২০১৬ সালে প্রয়াত মিশরীয় বিজ্ঞানী রমজান হুসেন উনাসের পুরনো পিরামিড এবং জোসারের ধাপ পিরামিডের ধ্বংসাবশেষে এই কর্মশালাটি আবিষ্কার করেন। সেই কর্মশালায় নানা ধরনের পাত্র, জার এবং বাটি আকৃতির পাত্রে সেইসব উপাদানের নাম এবং তাদের ব্যবহারের নির্দেশাবলী লেখা ছিল। প্রত্নতত্ত্ববিদ ফিলিপ স্টকহ্যামার জানাচ্ছেন, বেশিরভাগ পদার্থের উৎপত্তি মিশরের বাইরের অঞ্চলে। অনেক উপাদানই পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল থেকে এসেছিল, যার মধ্যে রয়েছে সিডার তেল, জুনিপার এবং সাইপ্রেস তেল এবং আলকাতরা, বিটুমেন, জলপাই তেল।
তবে প্রত্নতাত্ত্বিকরা অবাক হয়ে গিয়েছিলেন আরেকটি বিষয়ে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বন থেকে আনা নানান পদার্থের উপস্থিতি তাঁদের অবাক করে। যার মধ্যে রয়েছে ডামার গাছের আঠা, যা শুধুমাত্র গ্রীষ্মমন্ডলীয় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতেই জন্মে এবং এলিমি গাছের রজন যা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া বা গ্রীষ্মমন্ডলীয় আফ্রিকা থেকেই নিয়ে আসা হয়েছে। এর থেকেই বোঝা যায়, এই রজনগুলি বিশাল দূরত্ব পাড়ি দিয়েই আনা হয়েছিল এবং মিশরের মমি তৈরির পদ্ধতি প্রাথমিক বিশ্বায়ন এবং বিশ্ব বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ ধাপ ছিল। এই রজনগুলি কীভাবে সাহায্য করতো দেহকে পচন থেকে বাঁচাতে?
আরও পড়ুন- কীভাবে তৈরি হত কন্ডোম? তাজ্জব করবে ৩০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ প্রাচীন কন্ডোমের এই ইতিহাস
নুন দিয়ে শরীর শুকনোর পরে মৃতদেহগুলিকে নীচে নিয়ে যাওয়া হতো। অর্থাৎ নুন মাখানো পর্যন্ত কাজটা মাটির উপরেই হতো। মিশরবিদরা বলছেন, নীচে মন্ত্র এবং স্তোত্র উচ্চারণ করতে করতে মৃতদের আবৃত করা হতো এবং সারা শরীরে রজন মাখানো হতো। গবেষকরা ‘antiu’ এর অর্থও বের করতে পেরেছেন। অনেক মিশরীয় গ্রন্থে এই শব্দটির দেখা মেলে। গবেষণায় দেখা গেছে, এটি আসলে সিডার তেল, জুনিপার এবং সাইপ্রেস তেল ও প্রাণিজ চর্বির মিশ্রণ। এলিমি রজন, পিস্তার রজন, জুনিপার বা সাইপ্রেসের উপজাত দ্রব্য এবং মোমের মতো উপাদান সহ তিনটি মিশ্রণ মাথাকে শুষ্ক করার জন্য ব্যবহৃত হতো। ত্বক নরম করার জন্য বা শরীর পরিষ্কার করার জন্য বাকি উপাদানগুলি ব্যবহৃত হতো। এত কাল আগেও, প্রাকৃতিক উপাদানের এমন ব্যবহার করে মৃতদেহকে হাজার হাজার বছর রেখে দেওয়ার পদ্ধতি কিন্তু এখানেই শেষ নয়। আরও বিপুল রহস্যময় প্রক্রিয়া আছে যা উদ্ধারে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বিজ্ঞানী-গবেষকরা।