আগেও আরজি করে চিকিৎসক-মৃত্যু! এর মধ্যেই কেন ভাঙাভাঙি ‘অভিশপ্ত’ সেই জরুরি বিভাগে?

R G Kar Hospital Incident: এই প্রথম নয়, এর আগেও আরজি কর মেডিক্য়াল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে ঘটেছে এমনই ভয়াবহ পড়ুয়ামৃত্যু।

আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের ঘটনায় উত্তাল গোটা রাজ্য। সেই আন্দোলনের ঢেউ ছড়িয়ে পড়েছে দেশ জুড়েও। শুক্রবার আরজি কর কলেজের জরুরি বিভাগের চতুর্থ তলায় সেমিনার রুম থেকে উদ্ধার হয় এক স্নাতকোত্তর দ্বিতীয় বর্ষের ট্রেনি চিকিৎসকের ক্ষতবিক্ষত দেহ। ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে বলে ধরা পড়েছে ময়না তদন্তে। সেই ঘটনায় মঙ্গলবারই সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট।

এই প্রথম নয়, এর আগেও আরজি কর মেডিক্য়াল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে ঘটেছে এমনই ভয়াবহ পড়ুয়ামৃত্যু। করোনাকালীন সময়ে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের ওই জরুরি বিভাগেই ঘটেছিল আরও একটি দুর্ঘটনা। সেটা ২০২০ সাল। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ৬ তলা থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মঘাতী হয়েছিলেন এক জুনিয়র ডাক্তার।

স্নাতকোত্তর দ্বিতীয় বর্ষেরই পড়ুয়া ছিলেন পৌলমী সাহা নামে সেই ট্রেনি চিকিৎসকও। সিক নিওনেটাল কেয়ার ইউনিটের ট্রেনি ছিলেন তিনি। পুলিশ জানায়, ঘটনার দিন ফিভার ক্লিনিকে তাঁর শিফট শুরুর আগেই জরুরি বিভাগের ৬ তলা থেকে ঝাঁপ দেন ওই চিকিৎসক। সেসময় দাবি করা হয়েছিল, ডিপ্রেশনে ভুগছিলেন ওই চিকিৎসক। সেই ঘটনায় বেশ হইচই পড়ে গিয়েছিল হাসপাতালে।

আরও পড়ুন: ইস্তফার পরেও কেন অন্যত্র নিয়োগ? আরজি কর কাণ্ডে প্রাক্তন অধ্যক্ষকে ছুটিতে পাঠানোর নির্দেশ হাইকোর্টের

গত শুক্রবার ফের স্নাতকোত্তর দ্বিতীয় বর্ষের আর এক ছাত্রীকে নির্মম ভাবে ধর্ষণের পরে খুনের ঘটনায় উস্কে উঠেছে সেই স্মৃতি। সেই ঘটনার জের ছড়িয়েছে গোটা রাজ্য ছাড়িয়ে দেশেও। বুধবার ওই ঘটনার প্রতিবাদে রাজ্য জুড়ে কর্মবিরতির ডাক দিয়েছে জয়েন্ট ফোরাম অব ডক্টরস। কেবলমাত্র সরকারি পরিষেবা নয়, বেসরকারি চেম্বারও বন্ধ রাখার ডাক দেওয়া হয়েছে। বুধবার ভোর ৪টে থেকে বিকাল ৪টে পর্যন্ত কর্মবিরতির ডাক দেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার ওই মামলার তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে তুলে দিয়েছে হাইকোর্ট। এরই মধ্যে অভিযোগ উঠেছে, আরজি কর হাসপাতালের যে সেমিনার রুমে ওই ভয়ানক ঘটনা ঘটেছে, তার পাশেই হাসপাতালের একটি অংশ ভেঙে সংস্কারের চেষ্টা চলছে। অনেকেরই দাবি, প্রমাণ লোপাট করতেই হঠাৎ করে ভাঙাভাঙি শুরু হয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই এ নিয়ে ক্ষুব্ধ ওঠে চিকিৎসকদের একাংশ। কলেজ কর্তৃপক্ষের তরফে সাফাই দেওয়া হয়েছে, সেখানে একটি শৌচাগার তৈরি করা হবে।

হাসপাতালের একটি সূত্রে খবর, যে ঘরটি ভাঙা হচ্ছে, সেটি খুব একটা ব্যবহার হত না। কিন্তু, হঠাৎ ‘সংস্কারের’ কারণ কী? জানা যাচ্ছে, সন্দীপের নির্দেশেই ওই ঘর ভাঙার কাজ শুরু হয়েছিল। প্রত্যক্ষদর্শীদের কয়েক জন এবং কর্তৃপক্ষের একাংশ জানাচ্ছেন, আরজি করের ‘চেস্ট মেডিসিন’ বিভাগের সেমিনার হলের সামনে একটি ঘর ছিল। সেটাই ভাঙার কাজ শুরু হয় সোমবার। ওই কাজ চলছিল পুলিশের উপস্থিতিতে। যদিও সোমবারই ওই ঘর ভাঙার কাজ থমকে যায় জাতীয় মহিলা কমিশনের হস্তক্ষেপে। কারণ, আরজি কর কাণ্ডের প্রেক্ষিতে সোমবার হাসপাতালে গিয়েছিলেন কমিশনের কয়েক জন প্রতিনিধি। তাঁরা ঘটনাস্থলে গিয়ে দেওয়াল ভাঙা হচ্ছে দেখে সেই কাজ বন্ধের নির্দেশ দেন।

আরও পড়ুন: আরজি কর কাণ্ডে হাইকোর্টের প্রশ্নে বিদ্ধ রাজ্য, নির্দেশ এখনই সিবিআই তদন্তেরও

স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, এত বড় ঘটনার পর ওই সেমিনার রুমের পাশের অংশ ভাঙার কাজ কীভাবে শুরু হল। এত তাড়াহুড়োই বা কীসের। সেক্ষেত্রে তদন্তকারীরাও বা কেন বাধা দিলেন না। পরে অবশ্য ওই ঘর ভাঙা এবং সংস্কারের কাজ আপাতত বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম। ওই হাসপাতালের অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে নিয়েও প্রবল বিতর্ক তৈরি হয়েছে। ইতিমধ্যেই ইস্তফা দিয়েছেন তিনি। এদিন সন্দীপ ঘোষকে ছুটিতে পাঠানোর নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। বুধবারের মধ্যে সিবিআইকে সমস্ত নথি হস্তান্তর করারও নির্দেশ দিয়েছে আদালত। আপাতত হাইকোর্টের নজরদারিতেই চলবে তদন্ত। তিন সপ্তাহ পরে এই মামলার ফের তদন্ত বলে জানিয়ে দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট।

More Articles