বাদ্যযন্ত্রের নামে নির্মম অত্যাচার! ক্যাট-পিয়ানো কি সত্যিই ছিল কোনওদিন?

Cat Piano: ধরে নিন একটা সাদা-কালো রিডওয়ালা পিয়ানো, যার সামনের দিকে রয়েছে একটি খাঁচা। আর সেই খাঁচায় থাকত সাত থেকে ন'টি বিড়াল এবং তারা প্রত্যেকেই জলজ্যান্ত।

সঙ্গীতের সঙ্গে সৌন্দর্য এবং শিল্পের যোগ রয়েছে বলেই মনে করা হয়। সেই সঙ্গীতের অনুসঙ্গেই মানুষ একের পর এক বাদ্যযন্ত্র তৈরি করেছে। নানা শৈল্পিক আঙ্গিক, বিভিন্ন ধরনের শব্দ তৈরি করে গড়ে নিয়েছে সঙ্গীতের নিজস্ব মনোরম পরিবেশ। তা এই বাদ্যযন্ত্র তৈরিতে কতকিছুই তো ব্যবহার করা হয়। ফলের নির্যাস ভিতর থেকে বের করে নিয়ে তার আবরণ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে বাদ্যযন্ত্র। কখনও ব্যবহার করা হয়েছে উদ্ভিদের বিভিন্ন অংশ, কখনও আবার মাটিক কলসি বা হাঁড়ি। তবে জ্য়ান্ত প্রাণী দিয়ে বাদ্যযন্ত্র! এমন আশ্চর্য কথা শুনেছে কেউ কখনও? তবে এমনটাও নাকি হয়েছে ইতিহাসে।

প্রিয় পোষ্য হিসেবে বিড়ালের জনপ্রিয়তা বিশ্বব্যাপী। আর সেই বিড়ালকে দিয়েই বিভিন্ন সময় বিভিন্ন আশ্চর্য কাজ করে বসেছে মানুষ। একসময় জ্যান্ত বিড়ালকে আস্ত টেলিফোনে রূপান্তরীত করে বসেছিলেন দুই বিজ্ঞানী। এক অদ্ভুত অমানবিক দিক নিয়ে পৃথিবীর সামনে নিজেদের গবেষণা রেখেছিলেন তাঁরা। ঠিক তেমন নির্মমতার ধারা বজায় রেখেই নাকি এককালে তৈরি হয়েছি ক্যাট-পিয়ানোর। যাকে বলা হত ক্যাটজেনক্লাভিয়ার।

আরও পড়ুন: জ্যান্ত বিড়াল হল টেলিফোন, ইতিহাসের ভয়ঙ্করতম পরীক্ষার জন্য বিখ্যাত যে দুই বিজ্ঞানী

সে এক আশ্চর্য ব্যাপার। ধরে নিন একটা সাদা-কালো রিডওয়ালা পিয়ানো, যার সামনের দিকে রয়েছে একটি খাঁচা। আর সেই খাঁচায় থাকত সাত থেকে ন'টি বিড়াল এবং তারা প্রত্যেকেই জলজ্যান্ত। এবার তাঁদের লেজগুলি থাকত পিয়ানোর রিডের সঙ্গে বাঁধা। যার নীচে রয়েছে একটি করে পেরেক, এবং পেরেকের নিচে বিড়ালের লেজ। অর্থাৎ সেই পিয়ানোয় সুর তুলতে গেলে বিড়ালদের যে কী অবস্থা হত, তা আলাদা করে বলে দিতে হয় না। প্রতিটা রিডে চাপ পড়তেই ত্রাহী চিৎকার করে উঠত বিড়ালগুলি। আর সেই ত্রাহী চিৎকারের ধ্বনি তুলেই বেজে চলত পিয়ানো।

সত্যি কথা বলতে এই বাদ্যযন্ত্র ছিল কার্যত শিউড়ে ওঠার মতোই। ওই ন'টি বিড়ালের আনুমানিক পিচ খেয়াল রেখে খাঁচায় সাজানো হত তাদের। তবে শোনা যায়, এমন বাদ্যযন্ত্র নাকি সত্যি সত্যি কখনওই তৈরি হয়নি। শুধুমাত্র কল্পনাতেই ভাবা হয়েছিল ভয়ঙ্কর এই যন্ত্রের কথা। অবশ্য এ নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে। অনেকে মনে করেন ১৬৫০ খ্রিস্টাব্দে মোপি রাজার জন্য বানানো হয়েছিল এই বাদ্যযন্ত্র।

Music or Animal Abuse? A Brief History of the Cat Piano

তবে জানা যায়, বিড়ালের উপর এমন নির্যাতন নাকি কখনও করা হয়নি। যদিও এমনই নিপীড়নের চেষ্টা হয়েছে গাধার উপরে। তবে গাধার শব্দ দিয়ে বাদ্যযন্ত্র নির্মাণ করা তো আর সহজ কথা নয়। তাই সে পরীক্ষা বেশিদূর এগোয়নি! একটি সূত্রের দাবি, জোহান ক্রিশ্চিয়ান রেইল নামে এক জার্মান মনোবিদ নাকি অদ্ভূতুরে এই ক্যাটপিয়ানোর ভাবনাটি ভাবেন। তিনি মনে করতেন, কোনও মনোরোগীকে যদি জোর করে এমন কোনও যন্ত্র শোনানো হয়, তাহলে তারা মনোঃসংযোগ ফিরে পেতে বাধ্য। যদিও বাস্তবে এমন যন্ত্র কখনও তৈরি হয়নি। ভাগ্যিস হয়নি।

অ্যাথানাসিয়াস কির্চার নামে এক সাহিত্যিক ১৬৫০ সালে 'মুসুর্গিয়া ইউনিভার্সালিস' নামে একটি বই লেখেন। সেখানেই এমন একটি যন্ত্রের বর্ণনা করা হয়েছিল। তবে শুধু কির্চারই প্রথম নয়, ষোড়শ শতকের এক ঐতিহাসিক জুয়ান ক্যালভেট ডি এস্ট্রেলা তাঁর বইতে জানিয়েছেন, তিনি নাকি রাজা দ্বিতীয় ফিলিপের আমলে এমন যন্ত্র ছিল। ফিলিপ যখন ব্রাসেলে যান, সে সময়ে এমনই একটি ক্যাট-পিয়ানো দেখেছিলেন তিনি পদযাত্রায়।

আরও পড়ুন: গায়ের রং কালো, যে কারণে অশুভ মনে করা হয় এই ধরনের বিড়ালকে

পরবর্তীকালে এই ভাবনা থেকে তৈরি হয়েছিল ছোটদের খেলনাও। তবে সত্যিই এই নৃশংসতম যন্ত্র কোনওদিন ছিল কিনা সে নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে আজও। কিন্তু যে বা যাঁদের মাথা থেকে এই ভয়ঙ্করতম যন্ত্রের ভাবনা বেরিয়েছিল, তাঁদের মানসিকতা বা বিবেকের ব্যাপারেও ভাবতে হয় বইকি। যে সঙ্গীতের স্বর বা ধ্বনি মানুষকে আনন্দ দেয়, এক অন্যরকম স্বর্গীয় আনন্দের কাছাকাছি পৌঁছে দেয়, সেই সঙ্গীত বা বাদ্যযন্ত্র হিসেবে যে অপরিসীম নির্যাতনের ভাবনাকে মদত দেওয়া হয়েছিল, তা শিউড়ে ওঠার মতোই!

More Articles