রহস্যময় বিস্ফোরণের শব্দ, সঙ্গে সবুজ আলো! যোধপুরের সেই রহস্যের কিনারা হয়নি আজও

Jodhpur Sonic Boom: যোধপুরের সেই শব্দের উৎস আজ অবধি খুঁজে পাওয়া যায়নি।

২০১২ সাল। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে এক আজগুবি তথ্য ছড়িয়ে পড়েছিল। দক্ষিণ আমেরিকার প্রাচীন মায়া উপজাতির তৈরি করা একটি ক্যালেন্ডার ২০১২ সালের সঙ্গেই শেষ হয়েছিল। সেই ক্যালেন্ডারের হিসেবে ২০১৩ সাল থেকে কোনও তারিখ অথবা হিসেব ছিল না। সেই সূত্রেই বিভিন্ন তথ্য ছড়িয়ে পড়ে। তার মধ্যে সবথেকে পরিচিত তথ্য ছিল যে, ২০১২ সালে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। তার কারণ হিসেবে বলা হয়েছিল, মায়া উপজাতি আগে থেকেই এই ধ্বংসের দিনের কথা জানত। তাই তাদের তৈরি ক্যালেন্ডারের হিসেবে ইংরেজির ২০১২ সাল পৃথিবীর শেষ বছর হিসেবে চিহ্নিত করা রয়েছে। এই তথ্য ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে বহু মানুষ ভয় পেয়েছিল। বহু মানুষ তাদের জীবনের শেষ ইচ্ছা ভাবতে এবং পূরণ করতে শুরু করেছিল। বহু মানুষ যদিও এই তথ্যের সত্যতার প্রতি সন্দিহান ছিল। এই গুজবের ওপর ভিত্তি করে হলিউডে একটি সিনেমা তৈরি হয়েছিল। আশঙ্কা, অবিশ্বাস- সব মিলিয়ে মানুষ ২০১২ সালের শেষ হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিল। এমন সময় ভারতের যোধপুর শহরে একটি আশ্চর্য ঘটনা ঘটে যায়।

১৮ ডিসেম্বর, ২০১২। এই তারিখটা বহু যোধপুরবাসী আজও ভুলতে পারেনি। সকাল এগারোটা পঁচিশ নাগাদ এক বিকট শব্দে শহরের মানুষ চমকে উঠেছিল। বহু মানুষের কথায়, সেই শব্দ এতটাই তীব্র ছিল যে, শব্দের উৎসের কাছে থাকা কোনও মানুষ বধির হয়ে যেতে পারতো। শব্দটা শহরের বহু মানুষ শুনলেও তার উৎস কেউ দেখতে পায়নি। এই ঘটনাকে বলা হয় সনিক বুম।

সনিক বুম কী
সনিক বুমের অর্থ হলো, শব্দের থেকে দ্রুত গতিতে উড়ে যাওয়ার কারণে যে শব্দতরঙ্গ সৃষ্টি হয়। এক ধরনের শক ওয়েভ তৈরির ফলে কৃত্রিম বায়ুকণার একটি 'কোন' বা তরঙ্গ তৈরি হয়। সেই তরঙ্গ সর্বগামী হয় ও মাটির অভিমুখে যায়। ফলে সেই তরঙ্গের সমগ্র ব‍্যসজুড়ে সৃষ্টি হয় এই 'সনিক বুম'।

আরও পড়ুন: সম্পূর্ণ নতুন মানুষ প্রজাতির সন্ধান এনে দিল নোবেল! যে রহস্যর সমাধান করল বিজ্ঞান

যোধপুরের সনিক বুম রহস্য
শব্দ শোনার পরের হতচকিত ভাব কাটিয়ে উঠে মানুষ নিজেদের মতো শব্দের উৎস সম্পর্কে মতামত জানাতে শুরু করেছিল। কারও মতে ভারতীয় বায়ুসেনার কোনও উড়োজাহাজ থেকে এই শব্দের উৎপত্তি, অন্যদের কাছে নিকটবর্তী কোনও সেনাছাউনি অথবা কোনও তেল মজুত কেন্দ্রের বিস্ফোরণ এই শব্দের উৎস বলে মনে হয়েছিল। অনেকে বলেছিল যে, শব্দ শুনে মেঘের গর্জন মনে হলেও তা মেঘের গর্জনের তুলনায় অনেক বেশি তীব্র ছিল। শব্দের উৎস সংক্রান্ত মানুষের বিভিন্ন তথ্য থাকলেও তার প্রায় সবক'টাই খারিজ হয়ে গিয়েছিল। ভারতীয় বায়ুসেনার মুখপাত্র এক বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছিলেন, ভারতীয় বায়ুসেনার কোনও বিমান ২০১২ সালের ডিসেম্বর মাসের আঠারো তারিখ সকাল এগারোটা পঁচিশ নাগাদ যোধপুর শহরের ওপর দিয়ে শব্দের থেকে বেশি গতিবেগে উড়ে যায়নি। একই সঙ্গে বিবৃতিতে এই শব্দের সঙ্গে সেনাবাহিনীর কোনওরকম যোগাযোগ নাকচ করে দেওয়া হয়েছিল। সেনাবাহিনীর মুখপাত্র জানিয়েছিলেন যে, শহরের মতো সাধারণ মানুষের বসবাসের এলাকায় সেনা কোনওরকম পরীক্ষা চালায় না। শব্দের পর নিকটবর্তী সেনা ছাউনি অথবা অন্যান্য কোনও এলাকা থেকেই কোনও রকম বিস্ফোরণের খবর পাওয়া যায়নি।

রাজস্থানের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহরে এইরকম একটা শব্দের উৎস আজ অবধি খুঁজে পাওয়া যায়নি। যদিও বিভিন্ন মাধ্যমে এই ঘটনা একটা নাম পেয়েছিল। যোধপুর সনিক বুম। সনিক বুম, অথবা শব্দাঘাত কোনও জিনিস শব্দের থেকে দ্রুত বেগে চলাচল করলে তার থেকেই উৎপন্ন হয়। যদিও নামকরণের ক্ষেত্রে বিস্ফোরণ নয় বরং কোনও যানের কথা বলা হয় কিন্তু মানুষের পরিচিত যে ধরনের যান এই শব্দাঘাত সৃষ্টি করতে পারে যোধপুরের মতো শহরের ওপর, সেই সময় তার উপস্থিতির কথা নাকচ হয়ে গিয়েছিল। তাহলে যোধপুর সনিক বুমের উৎস কী ছিল?

পরবর্তীকালে এই সনিক বুম নিয়ে একটি অবাক করা তথ্য সামনে আসে। যোধপুরের মতোই আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে এবং ইংল্যান্ডেও একই ধরনের শব্দাঘাত শোনা গিয়েছিল। যদিও তা শোনা গিয়েছিল আলাদা আলাদা দিনে এবং আলাদা সময়ে কিন্তু সেই শব্দের সঙ্গে যোধপুরের শব্দের অনেক মিল ছিল। কোথাও কোথাও এই শব্দের সঙ্গে এক ধরনের সবুজ আলো দেখতে পাওয়ার কথা এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছিল। সেই সময়ে এক ভূতত্ত্ববিদ জানিয়েছিলেন, এইরকম শব্দাঘাত সাধারণ শব্দাঘাতের পর্যায়ে পড়ে না এবং এই ঘটনার আগে এই ধরনের তীব্র শব্দাঘাত সংক্রান্ত কোনও নথি সম্ভবত নেই। ভারত তথা পৃথিবীর কাছে আজ অবধি একটা ধাঁধা হয়ে থাকা রহস্যময় যোধপুর সনিক বুম বহুদিন যোধপুর শহরের বহু মানুষকে ভীত-সন্ত্রস্ত করে রেখেছিল।

পৃথিবীজুড়ে হওয়া এতগুলি সনিক বুম কি পরস্পরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট? এর বৈজ্ঞানিক ব‍্যাখ‍্যা কি লুকিয়ে রয়েছে গ্রহান্তরে? এই নিয়েও নানা তত্ত্ব উঠে এসেছে। ভিনগ্রহীদের আগমন নিয়ে এমনিতেই নানারকম আগ্রহ রয়েছে মানুষের। তবে এই ঘটনার কোনও প্রাকৃতিক ব‍্যাখ‍্যা থাকাই স্বাভাবিক। কোনও দিন হয়তো সেই রহস‍্যের সমাধান হবে।

তথ্য ঋণ: জি নিউজ, মিস্ট্রি অফ ইন্ডিয়া, নাসা

More Articles