৯ ডিগ্রি কোণে হেলানো মন্দির! রহস্যময় এই শিবমন্দির কেন চলে যায় জলের তলে?
Ratneshwar Mahadev Mandir: পিসার হেলানো টাওয়ারটি ৪ ডিগ্রি কাত হয়ে রয়েছে, আর রত্নেশ্বর মহাদেব মন্দিরের হেলে রয়েছে ৯ ডিগ্রি!
হেলানো মিনার বলতেই পিসার সেই হেলানো টাওয়ারের কথা মনে আসে। আসাটাই স্বাভাবিক, ইতিহাস বই থেকে শুরু করে সাধারণ জ্ঞানের চর্চা- সবেতেই উল্লিখিত হয়েছে এই টাওয়ারের কথা। তবে ভারতের প্রাচীন শহরে রয়েছে এমন এক মন্দির যা নির্দিষ্ট একটি কোণে হেলে পড়েছে। মন্দিরটি এতটিই হেলে রয়েছে যে মনে হতেই পারে যে কোনও মুহূর্তে তা ভেঙে পড়ে যাবে জলের মধ্যে। কাশী ভারতের 'পবিত্র নগরী'। হাজার হাজার প্রাচীন মন্দিরের সন্ধান মেলে দেশের এই প্রাচীনতম শহরে। এই সব প্রাচীন মন্দিরের অন্যতম হচ্ছে, রত্নেশ্বর মহাদেব মন্দির। গঙ্গা নদীর তীরে সিন্ধিয়া ঘাটে নির্মিত হয়েছিল এই মন্দির যা বর্তমানে পরিত্যক্ত। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়, মন্দিরটি প্রায় ৯ ডিগ্রি কোণে হেলে রয়েছে। আর এই শিব মন্দিরের গর্ভগৃহের নীচের অংশটি বছরের বেশিরভাগ সময়ই থাকে জলের নিচে থাকে। আর বর্ষায় গঙ্গার জল বাড়লে মন্দিরের চূড়াটিও চলে যায় জলের তলে।
এই রত্নেশ্বর মহাদেব মন্দিরের ধারেই রয়েছে বিখ্যাত মণিকর্ণিকা ঘাট, চব্বিশ ঘণ্টাই যেখানে চিতা জ্বলে। তবে এই শিব মন্দিরটি এভাবে হেলে পড়ল কেন? নাকি এমন বাঁকা ভাবেই গড়ে তোলা হয়েছিল এই মন্দির? শিব মন্দিরের এই হেলে পড়া বিষয়ে বিভিন্ন কিংবদন্তি রয়েছে। আগে নাকি মন্দিরটি সোজাই দাঁড়িয়েছিল। প্রচলিত বিশ্বাস অনুসারে, মন্দিরের ঘাটটি ওজন সহ্য করতে না পেরে পিছন দিকে হেলে পড়ে। ১৮৬০ সালের আগে মন্দিরটি সোজা হয়েই দাঁড়িয়েছিল বলে মনে করা হয়। কেন আস্ত একটা মন্দির এভাবে হেলে পড়ল তার সঠিক কারণ এখনও জানা যায়নি। এই স্থাপত্যের এমন বিচিত্র ঘটনার সঙ্গে আরও কয়েকটি গল্প জুড়ে রয়েছে।
আরও পড়ুন- ভারতের এই মন্দিরে পূজিত হয় মোটরবাইক! ‘বুলেট বাবা’-র নেপথ্যে রয়েছে গা ছমছমে যে ঘটনা
অনেকে বিশ্বাস করেন, রাজপুত রাজা মান সিংয়ের ভৃত্য তাঁর মা রত্নাবাইয়ের জন্য একটি মন্দির তৈরি করেছিলেন। মায়ের প্রতি অশেষ ঋণ শোধ করতে এই মন্দিরের নির্মাণ। কিন্তু ছেলের এই আচরণে অত্যন্ত কষ্ট পেয়েছিলেন মা। মায়ের ভালোবাসা কখনই কি ঋণের সমান হতে পারে? ছেলে হয়ে নিজের মায়ের এই ভালোবাসাকে ভুল বোঝায় মায়ের যন্ত্রণা ও অভিশাপের ফলেই নাকি মন্দিরটি পিছনের দিকে ঝুঁকে পড়তে থাকে। অনেকে আবার বলেন, মন্দিরটি রত্নাবাই নিজেই তৈরি করেছিলেন এবং যেহেতু তিনি নিজের নামে মন্দিরের নামকরণ করেন, তাই তা দেবতার অভিশাপকে ডেকে আনে।
মন্দিরের গঠনশৈলী অত্যন্ত চমৎকার! বিচিত্র সজ্জিত স্তম্ভ দিয়ে গড়া এই মন্দিরের শিখর বা চূড়া নির্মাণ করা হয়েছে নগর শিখর ঘরানায়। আসসি ঘাট থেকে আদি কেশব ঘাট পর্যন্ত নৌকায় ভ্রমণ করলে একজন পর্যটককে প্রতিটি ঘাটের সঙ্গে সম্পর্কিত ইতিহাসকে কিছুটা হলেও ছুঁতে পারবেন। কথিত আছে, রত্নেশ্বর মহাদেব মন্দিরটি ইতালির বিখ্যাত টাওয়ার অফ পিসা বা ১১৭৩ সালে নির্মিত টোরে পেন্ডেন্টে ডি পিসার চেয়েও বেশি হেলানো। এই ইতালিয় স্মৃতিস্তম্ভও হেলে পড়ে পাথরের ভারে একপাশের মাটি বসে যাওয়ার কারণে। মজার বিষয় হলো, পিসার হেলানো টাওয়ারটি ৪ ডিগ্রি কাত হয়ে রয়েছে, আর রত্নেশ্বর মহাদেব মন্দিরের হেলে রয়েছে ৯ ডিগ্রি! তবুও, বারাণসীর এই হেলানো মন্দিরটি ভারতের নানা অজানা কাহিনির মতোই রয়ে গেছে আড়ালে!