আজও বহাল আন্দোলনের ইতিহাস, জানেন কীভাবে এল ‘নন্দীগ্রাম’ নামটি?
Nandigram : আন্দোলনের নামে নামাঙ্কিত এই জায়গাটির পূর্বে নাম কী ছিল? কীভাবেই বা তৈরি হল এই জায়গা?
“তোমার নাম আমার নাম, নন্দীগ্রাম নন্দীগ্রাম” একসময় এই শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত ছিল কলেজপাড়া। আজও হয়তো আছে। পোস্টারের বয়ানের সেই অক্ষরগুলো প্রজন্মের হাত ঘুরেও বহাল। ‘নন্দীগ্রাম’, রাজ্য রাজনীতির ইতিহাস একটা বড় নাম। আগুন, রক্ত আর ইতিহাস, আজও ধ্বনিত হয় সেখানে। আজকের দিনটি ইতিহাসে নন্দীগ্রাম দিবস হিসেবে পরিচিত। জমি অধিগ্রহণকে কেন্দ্র করে ২০০৭ সালের ১৪ মার্চ এই নন্দীগ্রামেই পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধে গ্রামবাসীদের। গুলিতে মৃত্যু হয় ১৪ জন গ্রামবাসীর। সেই থেকেই আজকের দিনটি যেন রক্তাক্ত হয়ে আছে।
না সেটাই শুরু নয়, বহুদিন ধরে নন্দীগ্রামের মাটি ভিজে রয়েছে আন্দোলনের ঘামে। সময়টা ১৯০৩ সাল, দেশের স্বাধীনতা তখন অনেক দূর। বাংলাও অবিভক্ত। ঠিক এরকম সময়ে এখানে গজিয়ে উঠেছিল বেআইনি অর্থলগ্নি ব্যবসা। যার মাথা ছিল গোপাল রায় নামে এক ব্যক্তি। যদিও বেআইনি ব্যবসার বাড়বাড়ন্ত হয়েছিল আইনের রক্ষকের প্রশ্রয়েই। তৎকালীন দারোগা রায়মোহন ঘোষ মদত দিয়েছেন বলেই ইতিহাসে রয়েছে। যদিও ঘটনা হাতের বাইরে চলে যাওয়ায় বাধ্য হতে পুলিশ দিয়ে ঘেরাও করা হয়, যার ফল স্বরূপ সেই সময় নন্দীগ্রামের মাটিতে রীতিমতো যুদ্ধ পরিস্থিতি সংঘটিত হয়। গোটা ঘটনায় পুলিশ গোপাল রায় সহ প্রায় ৫০০ জনকে গ্রেফতার করে। আর দারোগাকে পুড়িয়ে মারার অপরাধে ফাঁসি হয় ৩ জনের। সেইদিক থেকে দেখতে গেলে আন্দোলনের আগুন নন্দীগ্রামের মানুষের শিরার-উপশিরায় বহু আগে থেকেই রয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
আরও পড়ুন - নন্দীগ্রামে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’, কেন মমতার মুখে ঘুরেফিরে সেই একই কথা
কিন্তু জানেন কি আন্দোলনের নামে নামাঙ্কিত এই জায়গাটির পূর্বে নাম কী ছিল? কীভাবেই বা তৈরি হল এই জায়গা? সেই রহস্য জানলেও রীতিমতো চমকে যেতে হয়। প্রাচীন নথি ঘাঁটলে জানা যায় এক অবাক করা তথ্য। নন্দীগ্রাম নামের পর্দা সরালে পাওয়া যায় অন্য নাম। একসময় ‘গুমগড়’ নামে পরিচিত ছিল এই ভূমি। খ্রীষ্টিয় ষোড়শ শতকের কথা। সমুদ্রের তলায় ছিল এই জায়গাটি। পরবর্তীতে সমুদ্রের স্রোতের চর ও চওড়া তট সৃষ্টি হয়। আরও পড়ে গড়ে ওঠে জনবসতি। ওড়িয়া ভাষায় রচিত ‘চৌধুরী চরিত’ থেকে জানা যায়, গুমগড়ের এক রাজা ছিলেন নন্দীগোপাল রায়চৌধুরী। তাঁরই নাম থেকে এই এলাকার নাম হয় নন্দীগ্রাম।
৩৪ বছরের বাম আমলের ইতি ঘটেছে ২০১১ সালের নির্বাচনে, কিন্তু শিরোনাম থেকে সরে যায়নি নন্দীগ্রাম। শেষ নির্বাচনেও পাখির চোখ ছিল এই এলাকা। ভাঙা গড়া, ওঠা পড়ার সাক্ষী আজও। আজও এখনকার ভোট গণনা রাতারাতি সব হিসেব ওলটপালট করে দিতে পারে। আজও চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে আসে এই ভূমি।

Whatsapp
