চুম্বকের নাম সন্দেশখালি, নন স্ট্রাইকার দুর্নীতি : প্রথম সভায় যা বোঝালেন মোদি

Narendra Modi on Sandeshkhali : মোদি বলছেন মুখ্যমন্ত্রীর লজ্জা হওয়া উচিত, প্রশ্ন তুলছেন, 'কিছু ভোটের' জন্য সন্দেশখালির মা-বোনেদের সঙ্গে এমন করতে পারল সরকার?

শেখ শাহজাহান গ্রেফতার হওয়ার ঠিক একদিন পরেই রাজ্যে এসেছেন নরেন্দ্র মোদি। সন্দেশখালি নিয়ে প্রায় দু'মাস ধরে চলা উত্তেজনায় বিরোধী হিসেবে সবচেয়ে আগ্রাসী ছিল বিজেপির ভূমিকাই। সন্দেশখালিতে তৃণমূলই আসলে শেখ শাহজাহানকে আশ্রয় জুগিয়ে এসেছে বলে অভিযোগ করেছিল বিজেপি। বাংলায় এসে সন্দেশখালি দিয়েই তাই নিজের নির্বাচনী কর্মকাণ্ডের সংক্ষিপ্ত ভূমিকা করে গেলেন মোদি। বুঝিয়ে গেলেন এবারের লোকসভা নির্বাচনে সন্দেশখালিই হতে চলেছে বড় এক অস্ত্র। শুক্রবার আরামবাগে ছিল মোদির সভা। সেখানে সন্দেশখালি ইস্যু নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর সরকারকে তীব্র আক্রমণ করেন প্রধানমন্ত্রী৷ আক্রমণকে জোরদার করতে টেনে আনেন রাজা রামমোহনকেও!

প্রধানমন্ত্রী শেখ শাহাজাহানের নাম না করেই যা বলেছেন, তাতে ইঙ্গিত স্পষ্ট যে তৃণমূলের এই স্থানীয় নেতাকে যে পুলিশ দু' মাস ধরে গ্রেফতার করতে পারেনি, তাতে মদত ছিল তৃণমূলেরই। তৃণমূলেরই কেউ না কেউ শাহজাহানকে সাহায্য করেছেন, আশ্রয় দিয়েছেন৷ আরামবাগের জনসভায় বক্তব্য শুরুই করেছেন মোদি সন্দেশখালি দিয়ে৷ প্রধানমন্ত্রী বলছেন, “এখানে কাছেই, খানাকুলে মহান সমাজসংস্কারক রাজা রামমোহন রায়ের জন্ম হয়েছিল। রামমোহনই নারীশক্তিকে নতুন সামর্থ জোগান। খানাকুলকে আমার প্রণাম। রাজা রামমোহন রায়ের প্রেরণা ভারতের নারী শক্তির উন্নয়নের ভিত্তি।" তারপরেই স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে মোদি বলতে থাকেন, "মা মাটি মানুষের ঢোল যারা পেটায়, তারা তৃণমূল সন্দেশখালির বোনেদের সঙ্গে যা করেছে তা দেখে গোটা দেশে আক্রোশ তৈরি হয়েছে৷ রাজা রামমোহন রায়ের আত্মা যেখানেই থাকুক না কেন, সন্দেশখালির এই ঘটনা দেখে তা কাঁদছে৷"

আরও পড়ুন- চার বছরে ৪০টিরও বেশি মামলা! অবাক করবে শেখ শাহজাহানের ‘অপরাধে’র ফিরিস্তি

সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, "তৃণমূলের নেতারা সন্দেশখালিতে মা-বোনেদের সঙ্গে অসভ্যতার সব সীমা পার করে দিয়েছে৷ নির্যাতিত মহিলারা যখন মমতা দিদির কাছে সাহায্য চাইলেন তখন মুখ্যমন্ত্রী, রাজ্য সরকার অভিযুক্ত তৃণমূল নেতাকে বাঁচাতে উঠে পড়ে লেগেছিল৷ বিজেপির চাপে পড়ে মূল অভিযুক্তকে গতকাল গ্রেফতার করতে বাধ্য হয়েছে পুলিশ৷ তৃণমূলের রাজত্বে তৃণমূলের এই অপরাধী নেতা দু' মাস ধরে পালিয়ে বেড়ালেন৷ কেউ তো তাকে সাহায্য করেছেন৷ এই তৃণমূলকে আপনারা ক্ষমা করবেন? প্রত্যেক চোটের জবাব ভোট দিয়ে দিতে হবে৷"

মোদি বলছেন মুখ্যমন্ত্রীর লজ্জা হওয়া উচিত, প্রশ্ন তুলছেন, 'কিছু ভোটের' জন্য সন্দেশখালির মা-বোনেদের সঙ্গে এমন করতে পারল সরকার? 'কিছু ভোট' দিয়ে আখেরে তিনি কী বোঝাতে চাইছেন তাও অত্যন্ত স্পষ্টই। সন্দেশখালি ইস্যুতে কেন কংগ্রেস সহ ইন্ডিয়া জোটের বাকি শরিকরা চুপ, সেই প্রশ্নও তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী৷ মোদি বলছেন, বিজেপি বিরোধী জোটের এই নেতারা সন্দেশখালি কাণ্ড দেখেও গান্ধিজির তিন বাঁদরের মতো চোখ, কান, মুখ বন্ধ করে বসে রয়েছেন৷ বাম এবং কংগ্রেস মিলে কি এখানকার সরকার, মুখ্যমন্ত্রীর থেকে জবাব চাওয়ার সাহস দেখিয়েছেন? প্রশ্ন করেছেন মোদি। মোদি কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি অর্থাৎ মল্লিকার্জুন খাড়গের দিকে আঙুল তোলেন অভিযোগের। বলেন, "সন্দেশখালি ইস্যুতে কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি বলেছেন, বাংলায় তো এসব চলতেই থাকে? এটা বাংলার, বাংলার পরম্পরা, সংস্কৃতি, মহাপুরুষদের অপমান নয়?’

সন্দেশখালির মা-বোন যে নির্বাচনী তুরুপের তাস তা নরেন্দ্র মোদির বক্তব্যে সাফ। তৃণমূলের জমানার দুর্নীতি নিয়েও কথা বলেছেন মোদি। বলেছেন ফ্ল্যাট থেকে কোটি কোটি টাকা উদ্ধার বলিউডের সিনেমাকেও হার মানায়। তবে, দুর্নীতি ইস্যু এখন সামান্য পশ্চাতে। প্রাক নির্বাচনী প্রথম সফরেই সন্দেশখালিকে সবার আগে রেখেছেন মোদি। শাহজাহান গ্রেফতার হওয়াতে সন্দেশখালি শান্ত হবে কিনা তার চেয়েও বড় প্রশ্ন এখন 'সন্দেশখালির মা-বোন'-দের কোন দল সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করতে চলেছে নিজেদের দিকে ভোট টানতে? মহিলা ভোট গুরুত্বপূর্ণ, মহিলাদের সত্যিকারের মর্যাদাও কি গুরুত্বপূর্ণ ততটাই, রাজনীতির এই খাওয়াখাওয়িতে?

More Articles