বিমান টুকরো টুকরো হয়ে ৬৮ জনের মৃত্যু! কেন বারবার দুর্ঘটনার মাশুল গুনছেন নেপালের আম জনতা?

Nepal Plane Crash: নেপালে এমন দুর্ঘটনা অবশ্য এই প্রথম নয়। বিমান দুর্ঘটনার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে পার্বত্য এই ছোট্ট দেশের।

সদ্য তৈরি হয়েছিল নেপালের পোখরা বিমানবন্দর। সেই বন্দরে অবতরণ করতে গিয়েই আছড়ে পড়েছে বিমান। রবিবার মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনায় ৬৮ জনের প্রাণ হারিয়েছে। নেপালের ওই বিমানে ৬৮ জন যাত্রী ও চার ক্রু সদস্যসহ ৭২ জন ছিলেন। এখনও পর্যন্ত সমস্ত মৃতদেহও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। নেপালের নবনির্মিত পোখরা বিমানবন্দরে অবতরণের সময় বিমানটি বিধ্বস্ত হয় বলে জানা গেছে। নেপালে বিমান দুর্ঘটনার পরিমাণ এবং হতাহতের পরিসংখ্যান দুই-ই মানুষের আতঙ্ক ও উদ্বেগ বৃদ্ধির জন্য যথেষ্ট। এভিয়েশন সেফটি ডেটাবেস বলছে, গত ৩০ বছরে নেপালে অন্তত ২৭টি মারাত্মক বিমান দুর্ঘটনা ঘটেছে।

বিমানটিতে পাঁচজন ভারতীয় যাত্রী ছিলেন, সকলেই উত্তর প্রদেশের গাজিপুরের বাসিন্দা। তাদের মধ্যে সোনু জয়সওয়াল নামে একজন দুর্ঘটনার ঠিক কিছুক্ষণ আগে একটি ফেসবুক লাইভও করেছিলেন। প্রাণে বাঁচেননি তিনিও। রবিবারের বিমান দুর্ঘটনায় ৬৮ জন মারা গিয়েছেন। রাজধানী কাঠমাণ্ডু থেকে রওনা হয়েছিল টুইন ইঞ্জিনের ATR 72 বিমানটি। সকাল ১১টা নাগাদ পোখারায় অবতরণ করতে গিয়ে তা ভেঙে পড়ে। বিমানটির পরিচালনার দায়িত্বে ছিল ইয়েতি এয়ারলাইনস। ইয়েতি এয়ারলাইন্সের মুখপাত্র সুদর্শন বারতৌলা সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, পোখারার আবহাওয়া একেবারেই ভালো ছিল এবং বিমানের ইঞ্জিনও ভালো অবস্থায় ছিল। তাহলে বিমানটির কী এমন হলো তা তারাও বুঝতে পারছেন না। বিমানের ব্ল্যাক বক্সের সন্ধানে এখন হন্যে হয়ে তল্লাশি চলছে।

বিমানটিতে থাকা বিদেশি নাগরিকদের মধ্যে পাঁচজন ভারতীয়, চারজন রাশিয়ান, দু'জন কোরিয়ান, একজন অস্ট্রেলিয়ান, একজন ফরাসি, একজন আর্জেন্টিনার এবং একজন ইসরায়েলি নাগরিক ছিলেন। মৃতদেহগুলি এখনও শনাক্ত করা যায়নি এবং দুর্ঘটনাস্থল থেকে এখনও চারটি মৃতদেহ উদ্ধার করা যায়নি।

ভেঙে পড়া ইয়েতি এয়ারলাইন্সের বিমানের ধ্বংসাবশেষ থেকে উদ্ধার করা একটি মোবাইলে ফ্লাইটের চূড়ান্ত মুহূর্তগুলি ধরা পড়েছে। প্লেনের ভিতরে বসে থাকা যাত্রীরা বিমানের জানলা দিয়ে মোবাইলে নীচের শহরের ভিডিও রেকর্ড করছিলেন। হঠাৎ বিস্ফোরণ হয় এবং ভিডিওটিও স্তব্ধ হয়ে যায়। শেষ কয়েক সেকেন্ড জানালার বাইরে ভয়ঙ্কর আগুন এবং বিরক্ত যাত্রীদের কান্নার শব্দই ভেসে আসে। বাইরে থেকে তোলা আরেকটি ভিডিওতে বিমানের অবতরণের মুহূর্ত ধরা পড়েছে। তাতে দেখা গেছে, বিমানটি হঠাৎ বাম দিকে কাত হয়ে উল্টে যায় এবং তারপরেই বিস্ফোরণের আওয়াজ।

নেপালে এমন দুর্ঘটনা অবশ্য এই প্রথম নয়। বিমান দুর্ঘটনার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে পার্বত্য এই ছোট্ট দেশের। প্রতি দুর্ঘটনাতেই মৃত্যুর সংখ্যাও আঁতকে ওঠার মতোই। ২০২২ সালের মে মাসেই, নেপালের বিমান সংস্থা তারা এয়ারের একটি বিমান দুর্ঘটনার মুখে পড়ে। বিমানে থাকা ২২ জনের সবাই ওই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান।

প্রতিটি বিমান দুর্ঘটনার পেছনেই বেশ কিছু কারণ রয়েছে। নিরাপত্তা এবং কর্মীদের অপর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ বরাবরই প্রশ্নের মুখে পড়েছে নেপালের এয়ারলাইন। অপ্রত্যাশিত আবহাওয়া, কর্মীদের প্রশিক্ষণের অভাব, কঠিন পাহাড়ি ভূখণ্ড, নতুন বিমান ও পরিকাঠামোতে বিনিয়োগের অভাব এবং বিমানের রক্ষণাবেক্ষণের গাফিলতির শিকার হয়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। ২০১৩ সালে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন নেপালকে ফ্লাইট সেফটির কালো তালিকায় রাখে। এর ফলে হিমালয়ের এই দেশ থেকে ইউরোপের আকাশসীমায় সমস্ত বিমানের উপরই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল।

More Articles