'পুরুষ রোজ রাত কো...' বিধানসভায় যৌনশিক্ষা নিয়ে বলতে গিয়ে কেন বিপাকে নীতীশ?
Nitish Kumar on Sex Education : স্বামী যে প্রতি রাতে যৌনসঙ্গম করবেই, স্ত্রীর অনিচ্ছা বা ইচ্ছাতেও তাই বা কী করে বলতে পারেন একজন মুখ্যমন্ত্রী!
"পুরুষ যে হ্যায়, ওহ রোজ রাত কো সাদিয়া জো হ্যায়, উসকে সাথ করতা হ্যায় না? তো উসিমে অউর পয়দা হো যাতা হ্যায়।" জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ঠিক এভাবেই কথা বলেছেন নীতীশ কুমার, তাও আবার বিধানসভায়। নারীদের শিক্ষার, বিশেষত যৌনশিক্ষার গুরুত্ব নিয়ে নাকি কথা বলছিলেন নীতীশ। কিন্তু বক্তব্য যা পেশ করলেন তার যা অর্থ দাঁড়াল তা মোটেও সুখকর নয়। নিজের বলা কথার জন্য নিজেকেই ক্ষমাও চাইতে হলো তাঁকে। নীতীশের দাবি তিনি জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে মহিলাদের গুরুত্ব নিয়েই কথা বলতে গেছিলেন। কিন্তু যেভাবে তিনি বিষয়টি পেশ করলেন তা ঈষৎ একপেশে এবং অবমাননাকর। "লড়কি পড় লেতি হ্যায়, কে হামকো মালুম থা ওহ করেগা, ঠিক হ্যায়। লেকিন অন্তিমমে ভিতর মাত ঘুসাও। উসকো বাহার কর দো," নীতীশ বলছেন জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্য এই বিষয়টি মেয়েদের জানা দরকার। তবেই সন্তানের প্রসব দেওয়া নিয়ন্ত্রণে আসবে। শুধু কি মেয়েদের জানলেই চলবে? নাকি মেয়েদেরই শুধু জানা উচিত! আদৌ কি এভাবে গর্ভধারণ ঠেকানো সম্ভব?
নিজের এই বক্তব্যের পর ব্যাপক বিতর্ক শুরু হয় বিবিধ মহলে। তার জেরে ক্ষমা চেয়ে নেন নীতীশ। "আমি যদি কাউকে আঘাত দিয়ে থাকি তবে আমি ক্ষমাপ্রার্থী। কাউকে আঘাত করার উদ্দেশ্যে ছিল না। আমি সবসময়ই বলেছি যে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য শিক্ষা প্রয়োজন। আমি নারীর ক্ষমতায়ন এবং নারী উন্নয়নের পক্ষেও কথা বলি," বলছেন নীতীশ কুমার। নীতীশ ঘনিষ্ঠরা বলছেন, মন্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে। নীতীশ কী বলতে চেয়েছেন তা নীতীশই জানেন, তবে যেভাবে বলেছেন তা খানিক একপাক্ষিক। যৌনশিক্ষা মহিলাদের থাকলে তবেই পুরুষদের ঠেকানো যাবে এমন ধারণা খুবই নড়বড়ে। নীতীশ বলেছেন, “হামকো মালুম থা ওহ করেগা, ঠিক হ্যায়।" স্বামী যে প্রতি রাতে যৌনসঙ্গম করবেই, স্ত্রীর অনিচ্ছা বা ইচ্ছাতেও তাই বা কী করে বলতে পারেন একজন মুখ্যমন্ত্রী! যৌনতার চরম মুহূর্তে লিঙ্গ সরিয়ে নেওয়া সন্তান জন্ম আটকানোর এক পন্থা হতে পারে, কিন্তু তার আগের যে যৌনতার ধারা তা কি মহিলারা চাইছেন নিয়মিত?
#WATCH | Bihar CM Nitish Kumar uses derogatory language to explain the role of education and the role of women in population control pic.twitter.com/4Dx3Ode1sl
— ANI (@ANI) November 7, 2023
আরও পড়ুন- অপছন্দের পুরুষের সঙ্গে সঙ্গম! অবাঞ্ছিত যৌনতা এড়াতে ব্যাঙ কী করে জানেন?
পুরুষদের নিয়ন্ত্রণের কথাও কেন বলছেন না নীতীশ? যৌনশিক্ষা আবশ্যক বলে মনে করেন বহু শুভবুদ্ধি সম্পন্নরাই। ছেলে এবং মেয়ে দুই লিঙ্গেরই এবং এর ব্যাতীত অন্য সমস্ত লিঙ্গের মানুষেরই যৌনশিক্ষা প্রয়োজন। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ তো বটেই, নিজের যৌন অধিকার নিশ্চিত করাও এর অন্যতম লক্ষ্য। পুরুষ 'করবেই' এই ধারণা অত্যন্ত পিতৃতান্ত্রিক। স্ত্রী এই 'করবেই' বিষয়টিকে যেহেতু মেনে নিতে 'বাধ্য' তাই নিজের নিরাপত্তার জন্য সে শেষ মুহূর্তে লিঙ্গ সরিয়ে নিতে বলবে- এ কোনও সমাধান নয়। নীতীশ বলতে চেয়েছেন, শিক্ষিত মহিলারা যৌন মিলনের সময় স্বামীকে আটকাতে পারেন বলেই জন্মের সংখ্যা কমছে। আগে প্রজনন হার ছিল ৪.৩, কিন্তু এখন তা ২.৯-এ পৌঁছেছে। এই হারকে ২ শতাংশ করতে চান নীতীশ।
যেভাবে নীতীশ এই বক্তব্য পেশ করেছেন তার বিরোধিতায় বিজেপি নীতীশকে 'অশ্লীল এবং পুরুষতান্ত্রিক' বলে মাঠে নেমে পড়ে তাঁর পদত্যাগ দাবি করেছে। বিহারের বিধানসভায় এই ধরনের ভাষা বললে বিহারের মহিলাদের কী দুর্দশা হবে তা নিয়ে চিন্তিত বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র শেহজাদ পুনাওয়ালা। রাজ্যের উপ মুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদব নীতীশকে সামলাতে তাঁর বক্তব্যের কিঞ্চিৎ স্পষ্ট ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। তেজস্বী বলছেন, যৌনশিক্ষা নিয়েই কথা বলতে চেয়েছেন নীতীশ। মানুষ এই বিষয়টা শুনলেই কেমন দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়ে, কিন্তু এইসব স্কুলেই পড়ানো হয়, বিজ্ঞানে জীববিজ্ঞানে। পড়ুয়ারা তা শেখে। নীতীশ এই শিক্ষার ব্যবহারিক প্রয়োগের কথা বলেছেন, কীভাবে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা যায় তা বলেছেন। এর ভুল ব্যাখ্যা করা উচিত নয়, যৌনশিক্ষা হিসাবেই বিষয়টিকে ভাবা দরকার বলে মনে করছেন তেজস্বী। অন্যদিকে, ন্যাশনাল কমিশন অফ উইমেনের চেয়ারপার্সন রেখা শর্মা বলছেন, নীতীশ যেভাবে কথা বলেছেন তা সি গ্রেড মুভির সংলাপের মতো। সবচেয়ে খারাপ বিষয় হচ্ছে, নীতীশের পিছনে বসে থাকা পুরুষরা হাসছিলেন, অঙ্গভঙ্গিগুলি কুৎসিত রসিকতার মতো। বিহার বিধানসভার স্পিকারের উচিত তাঁর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা।
On behalf of every woman in this country, as the Chairperson of the National Commission for Women, I demand an immediate and unequivocal apology from the Chief Minister of Bihar, Nitish Kumar. His crass remarks in the Vidhan Sabha are an affront to the dignity and respect that… https://t.co/xNom7jqnzq
— Rekha Sharma (@sharmarekha) November 7, 2023
নীতীশ কুমার যা বলেছেন তা নিয়ে কী বলছেন চিকিৎসকরা? যৌনতার চরম মুহূর্তে, বীর্যপাতের আগে যোনি থেকে লিঙ্গ বের করে নেওয়ার পদ্ধতিকে বলে 'পুল আউট পদ্ধতি'। যোনিতে শুক্রাণু প্রবেশ করতে না দিয়ে, ডিম্বাণু অবধি শুক্রাণু পৌঁছাতে না দিয়ে গর্ভধারণ রোধ করাই এর লক্ষ্য। তবে তা মোটেও নির্ভরযোগ্য গর্ভনিরোধ পদ্ধতি নয়। পুল-আউট পদ্ধতি হচ্ছে এমন একটি পদ্ধতি অনেকেই গর্ভধারণ রোধ করতে ব্যবহার করে, কিন্তু তা মোটেও সবসময় কাজ করে না৷ পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি বছর, এই পদ্ধতিটি ব্যবহার করেও ৫ জনের মধ্যে ১ জন মহিলা গর্ভবতী হয়ে পড়েন। বিজ্ঞান বলছে, কোনও পুরুষের লিঙ্গ যখন প্রথম উত্থিত হতে শুরু করে তখন থেকেই শুক্রাণু নির্গত হতে পারে। তাই অন্তিম মুহূর্তে নিজেকে সরিয়ে নিলেই গর্ভাবস্থা রোধ করা যাবে তা ঠিক না।