কোনও বিগ্রহ নয় এখানে আরাধ্য হল বিড়াল! জানেন কোথায় রয়েছে এমন আজব মন্দির?
Cat Temple : বিড়ালদের জন্য, বিড়ালদের নিয়েই মন্দির, আপাতভাবে বিশ্বাস করতে অসুবিধা হলেও এই বিশ্বেই রয়েছে এর অস্তিত্ব, জানেন কোথায়?
‘মন্দির’ শব্দটা শুনলে প্রথমেই কী মনে আসে আপনার? চূড়া বিশিষ্ট একটা একটা কাঠামো, পূজার সামগ্রী আর অবশ্যই বিগ্রহ। বিগ্রহ বলতে সাধারণত পুরাণ অথবা ইতিহাসে পাতা থেকে উঠে আসা কোনও চরিত্র। তারপর পাথর, মাটি অথবা কাঠ দিয়ে তৈরি সেই মূর্তি। সেখানেই ভিড় জমে ভক্তদের। আক্ষরিক অর্থে পাথরের মূর্তিতে মোটেই প্রাণের স্পন্দন মেলে না তবে ভক্তির তাতে লেশমাত্র বিচ্যুতি ঘটে না। কিন্তু এমন যদি হতো যাঁকে দেবতা জ্ঞানে মনোবাঞ্ছা জানাচ্ছেন তাঁর মধ্যে সত্যি সত্যিই রয়েছে প্রাণ, তাহলে কেমন হতো? শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি, এই বিশ্বেই রয়েছে এমন একটি মন্দিরের অস্তিত্ব। তবে আসল অবাক করা বিষয়টি হল এই মন্দিরের আরাধ্য দেবতা কোনও পুরাণের চরিত্র নয়, এখানে আরাধ্য হল পরিচিত বিড়াল।
ভারতে গো-পূজার ‘রমরমা’ কতটা, সেটা নতুন করে আর বলার নিশ্চয়ই দরকার নেই। কিন্তু জাপানে এমন একটা মন্দির রয়েছে, যেখানে বিড়ালকে পুজো করা হয়। শুধু পুজো নয়, সেখানকার ‘পুরোহিত’ও নাকি একটি বিড়াল! মন্দিরটির নাম মিউ মিউ টেম্পল। নামের মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে বিড়ালের ডাকের অনুষঙ্গ। শুধু তাই নয়, মন্দিরের প্রতিটি দেওয়ালেও রয়েছে বিড়ালের নানা ভঙ্গিমার ছবি। চিত্রকরের তুলির ছোঁয়ায় নানা রঙে, নানা রূপে গোটা মন্দির জুড়ে ছড়িয়ে আছে প্রচুর প্রচুর বিড়াল। চিত্রকরের নাম তোরু কায়া। মন্দিরের স্থাপত্য থেকে শুরু করে শিল্পশৈলীর সবটুকুই তাঁর হাতে গড়া।
আরও পড়ুন - পায়ে হেঁটেই বিদেশ যাওয়া যায় এখান থেকে! জানেন ভারতের সর্বশেষ রেলস্টেশন কোনটি?
জাপানের কোয়োটো শহরে গেলে দেখতে পাওয়া যাবে এই মন্দির। যদিও খুব বেশি দিন বয়স নয় এই মন্দিরটির। ২০১৬ সালে নির্মাণ করা হয় এই মিউ পিউ টেম্পল। স্থানীয়রা অবশ্য এই বিড়াল মন্দিরকে ডাকেন নিয়া নিয়া জি নামে। প্রসঙ্গত, জাপানের মানুষ বিশ্বাস করেন বিড়ালই নাকি জীবনে সৌভাগ্য এনে দিতে পারে, তাই বিড়ালকে সেই সম্মান ফিরিয়ে দিতেই এই এত উদ্যোগ।
এই বেড়াল মন্দিরটি আরও বিখ্যাত তার প্রধান পুরোহিত এবং বাকি সেবায়েতদের জন্য। এত কিছুর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিকটি হল, এই মন্দিরের পুরোহিতও কোনও মানুষ নয়, সেও আস্ত একটা বিড়ালই। একটি স্ত্রী বিড়ালই প্রধান পৌরহিত্যের দায়িত্বে রয়েছেন। তার নাম কোয়ুকি। জাপানে খুবই জনপ্রিয় বিড়াল এই কোয়ুকি। তার মিশুকে স্বভাবের জন্য সকলেই তাকে পছন্দ করেন। এমনকী পর্যটকরা এলেও সে নিজে গিয়ে তাদের সঙ্গে আলাপ করে আসে।
এ যেন অবিকল কোনও মন্দিরের পুরোহিত, রুদ্রাক্ষের বদলে কেবল অন্য পাথরের মালা মাত্র। হ্যাঁ ঠিকই শুনেছেন প্রধান পুরোহিত হওয়ার জন্য কোয়ুকির গলাতেও ঝোলানো থাকে বেশ কিছু পাথরের মালা। এখানেই শেষ নয়, তাঁকে ঘিরে থাকে অন্যান্য সেবায়েতরাও। তারাও আদতে বিড়ালই। স্ত্রী পুরুষ মিশিয়ে সেবায়েত বিড়াল রয়েছে সেখানে।বর্তমানে জাপানের কোয়োটো শহরের অন্যতম পর্যটন আকর্ষণে পরিণত হয়েছে এই বেড়াল মন্দির। বিদেশ থেকেও পর্যটকেরা এই শহরে ছুটে আসেন এই বেড়াল মন্দির দেখতে। জাপান বেড়াতে গিয়ে মিউ পিউ টেম্পলকে বাদ দিয়ে ট্যুর প্ল্যান করেন না প্রায় কেউই। বিশ্বের ইতিহাসে এ ঘটনা বিরল। আজব এই মন্দিরকে ঘিরে তাই বিস্ময় তুঙ্গে।