বন্ধ অস্ত্রোপচার, রোগী ভর্তি! আরজি করের প্রতিবাদে দেশজুড়ে বিপদে পড়বেন রোগীরা?

RG Kar Rape Incident: চিকিৎসকরা অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট শুরু করার পর দিল্লির এইমস-এ দৈনিক অস্ত্রোপচারের সংখ্যা ৮০ শতাংশ কমেছে

নো সেফটি, নো ডিউটি। আগে বাঁচব, তারপর বাঁচাব। কলকাতার আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও হত্যার পরে এই বয়ান সামনে রেখেই লড়ছেন চিকিৎসকরা। যেখানে খোদ ডাক্তারদেরই জীবনের মূল্য নেই, নিরাপত্তা নেই, সেখানে কীভাবে ঠান্ডা মাথায় সরকারি হাসপাতালে লক্ষ লক্ষ রোগী সামলানো সম্ভব? গত শুক্রবার আরজি করের ভেতরে সেমিনার হল থেকে ওই তরুণীর ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধারের পর থেকে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়েছে বাংলা জুড়ে। বাংলা জুড়েই বিভিন্ন হাসপাতালেও খানিক অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। শুধু বাংলা নয়। এবার আরজি করের ধর্ষণ ও হত্যার প্রতিবাদে সারা দেশজুড়েই চিকিৎসকরা জরুরি বিভাগ ছাড়া কাজে যেতে অস্বীকার করছেন।

ফেডারেশন অফ রেসিডেন্ট ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন (FORDA) গতকাল হাসপাতালগুলিতে বিশেষ পরিষেবাগুলিতে দেশব্যাপী বিরতি ঘোষণা করেছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জেপি নাড্ডাকে লেখা একটি চিঠিতে, FORDA আরজি করের এই ঘটনাটিকে 'আবাসিক ডাক্তার সম্প্রদায়ের ইতিহাসে সম্ভবত সবচেয়ে বড় ন্যক্কারজনক ঘটনা' বলে উল্লেখ করেছে।

আরও পড়ুন- চোখ আটকে নীরজের রুপো জয়ে! মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগে যা করছিলেন আরজি করের তরুণী

যারা একজন কর্তব্যরত চিকিৎসকের জীবন রক্ষা করতে পারেনি, FORDA সংশ্লিষ্ট সেই সমস্ত কর্তৃপক্ষের পদত্যাগ দাবি করেছে। অ্যাসোসিয়েশনের তরফে আশ্বাস চাওয়া হয়েছে যে প্রতিবাদী ডাক্তারদের যাতে কোনওভাবেই মারধর করা না হয় এবং এই মামলায় দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়। চিকিৎসক সমিতি স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের জন্য নিরাপত্তা বিধিরও দাবি জানিয়েছে।

আরজি করে তরুণীর ধর্ষণ ও হত্যার মামলার বিচারের দাবিতে চিকিৎসকরা বিক্ষোভে যোগ দেওয়ার পর কলকাতার বেশিরভাগ হাসপাতালেই চিকিৎসা পরিষেবা ব্যাহত হয়েছে। বিক্ষোভের কারণে বেশ কিছু রোগী ও তাদের পরিবার বিপাকে পড়েছেন। শুধু কলকাতা নয়, আন্দোলনের আঁচ ছুঁয়েছে উত্তরপ্রদেশকেও।

উত্তরপ্রদেশের লখনউতে কিং জর্জ মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটিতে প্রতিবাদী চিকিত্সকরা মঙ্গলবার সকালে জড়ো হন। নিরাপত্তা না পেলে কাজ বন্ধ করার কথা জানিয়ে আউটডোর রোগীদের বিভাগে মিছিল করেন। রোগী ও তাদের পরিবারদের চিকিৎসার দাবিতে ওপিডির বন্ধ দরজা ধাক্কা দিতেও দেখা গেছে। উত্তরপ্রদেশের পাশাপাশি মুম্বইতেও বেশ কয়েকটি বিশিষ্ট হাসপাতালের চিকিত্সকরা এই বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে জেজে হাসপাতাল, সিয়ন হাসপাতাল, নায়ার হাসপাতাল এবং কিং এডওয়ার্ড মেমোরিয়াল হাসপাতাল।

আরও পড়ুন- সকালে ইস্তফা, বিকেলে নিয়োগ! আরজি করের সন্দীপ ঘোষকে বাঁচাতেই উদ্যোগী সরকার?

তথ্য বলছে, আরজি করের এই ঘটনার প্রতিবাদে চিকিৎসকরা অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট শুরু করার পর দিল্লির এইমস-এ দৈনিক অস্ত্রোপচারের সংখ্যা ৮০ শতাংশ কমেছে এবং রোগী ভর্তির সংখ্যাও ৩৫ শতাংশ কমেছে। ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (আইএমএ) স্বাস্থ্যমন্ত্রী নাড্ডাকে একটি চিঠি লিখে, হাসপাতালগুলিকে নিরাপদ অঞ্চল হিসাবে ঘোষণা করার দাবি জানিয়েছে। চিকিত্সকদের বিরুদ্ধে আক্রমণ এবং হিংসা রোধে কেন্দ্রীয় আইন প্রণয়নের দাবিও করেছে আইএমএ।

আইএমএ বলছে, ২৫টি রাজ্যে ডাক্তারদের উপর আক্রমণ প্রতিরোধ করার জন্য আইন রয়েছে, তবে সেগুলি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অকার্যকর। এর মূল কারণ বিষয়টিতে কোনও বিশেষ কেন্দ্রীয় আইনই নেই। তাই দেশ জুড়ে চিকিৎসকদের নিরাপত্তা যদি সরকার না দিতে পারে, তাহলে হাসপাতালের মতো জরুরি পরিষেবায় চরম অচলাবস্থা দেখা যাবে। বিশেষ করে সরকারি হাসপাতালগুলোয় যে মানুষরা আসেন, বহু দূর দূরান্ত থেকে সুস্থ হতে আসেন, তাঁদের ভোগান্তি চরমে উঠবে।

More Articles