কংগ্রেসের সঙ্গে আসন ভাগ করবেন? ইন্ডিয়া জোটের অস্তিত্ব নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত মমতার
CM Mamata Banerjee : মমতা বলছেন, রাহুলের ন্যায় যাত্রা যে বাংলায় আসবে, ইন্ডিয়া জোটের শরিক দলের শাসনের রাজ্যে আসবে তা তো তাঁকে জানানোই হয়নি!
মোদিপন্থীরা বারেবারেই একটা প্রশ্ন তুলেছেন। সহজ প্রশ্ন, তা নিয়ে অনেকেই মজা করেন কিন্তু আসলে প্রশ্নের কোনও উত্তর নেই। বিজেপি প্রশ্ন করে, মোদি নেহি তো কৌন? সত্যিই তো দেশে যে দল, যে জোটই জিতুক না কেন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ দরকার। আস্ত দল তো প্রধানমন্ত্রী হতে পারে না। কিন্তু মোদির বিরোধিতায় যে পাল্টা কোনও মুখ নেই, তা ফের প্রমাণ করে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপির বিরুদ্ধে, গৈরিক শক্তির বিরুদ্ধে সমস্ত বিরোধী দলগুলি একত্রিত হয়ে 'ইন্ডিয়া' জোট গড়েছিল। সেই জোটে এমন বহু বহু বহু দল রয়েছে যারা নিজ নিজ রাজ্যে যুযুধান! রাজ্যে একে অন্যের মুখ দেখেন না, এদিকে লোকসভা ভোটে একই জোটের শরিক! এ কেমন? এই জোট কি আদৌ টিকবে? প্রশ্ন উঠেছিল তখনই। জোট যে টিকবে না তা ক্রমেই স্পষ্ট করে দিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা। জানিয়েছেন, বাংলায় কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের কোনও সম্পর্ক নেই।
তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট জানিয়েছেন রাজ্যে তৃণমূল একলা চলো নীতিতেই আস্থা রাখবে। সিপিএম-কংগ্রেসের মতো বিরোধীর সঙ্গে কোনও আসন ভাগাভাগি নেই তাদের। কিন্তু রাহুল তো তেমন বললেন না! রাহুল গান্ধি এখন ন্যায় যাত্রায় বেরিয়েছেন। বাংলাতেও আসবে সেই যাত্রা। অসমে রাহুল গতকালই বলেছিলেন, কংগ্রেস ও তৃণমূলের মধ্যে আসান বোঝাপড়ার প্রক্রিয়া চলছে। মমতা বলছেন, এসব মিথ্যা! ‘‘আমার কারও সঙ্গে কোনও কথা হয়নি। আমার প্রস্তাব প্রথম দিনেই প্রত্যাখ্যান করেছে!”
আরও পড়ুন- তৃণমূলের সঙ্গে বাংলায় জোট? সিপিএমের চরম সিদ্ধান্তে বিপাকে ‘ইন্ডিয়া’
হিসেবমতো ইন্ডিয়া জোটেরই অংশ তৃণমূল ও কংগ্রেস। লোকসভা ভোটে বাংলায় কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে তৃণমূল লড়বে, বা সিপিএম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের সঙ্গে আসন সমঝোতা করবে এই দৃশ্য ভাবাও যায় না। তাহলে ইন্ডিয়া জোট তৈরি হলো কীসের ভিত্তিতে? বিরোধিতার জন্যই বিরোধিতা? প্রকৃত ময়দানে আসলে সকলেই সকলের শত্রুপক্ষ? রাহুল বলছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর ও কংগ্রেসের সম্পর্ক ভালো। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভুল বোঝাবুঝি হয় কিন্তু তাতে আসনের ভাগ বাঁটোয়ারায় সমস্যা হবে না। এদিকে মমতা বলছেন, রাহুলের ন্যায় যাত্রা যে বাংলায় আসবে, ইন্ডিয়া জোটের শরিক দলের শাসনের রাজ্যে আসবে তা তো তাঁকে জানানোই হয়নি!
মমতা স্পষ্ট করে দিলেন ইন্ডিয়া জোটের শরিক হিসেবে তৃণমূল ওই ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রায় অংশ নেবে না। কংগ্রেস কি একা হাঁটবে? না কি সিপিএম জুড়ে যাবে? মানে সিপিএম কংগ্রেসের সঙ্গে আছে জোটে, তৃণমূলের সঙ্গে নেই? জটিল অঙ্ক!
মমতা বলছেন, তিনি চেয়েছিলেন কংগ্রেস ৩০০ টি আসনে লড়ুক। বাকি যা যা আসন তাতে আঞ্চলিক দলগুলিই লড়ুক। যে রাজ্যে যে দলের দাপট বেশি তারাই সেই রাজ্যে মুখ হয়ে লড়ুক। তাই এই রাজ্যে তৃণমূল একাই লড়বে। পশ্চিমবঙ্গে ইন্ডিয়ার শরিক দন্য দলের সঙ্গে কোনও জোট বা আসন সমঝোতা হচ্ছে না। রাজ্যের ৪২টি লোকসভা আসনেই প্রার্থী দেবে তৃণমূল।
আরও পড়ুন- অধীর-সেলিম না ধুপগুড়ি — কে ‘ভেঙে’ দিল ইন্ডিয়া জোট?
কংগ্রেসের এই ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রায় সমস্ত রাজ্যেই ইন্ডিয়া জোটের শরিকদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। কিন্তু আমন্ত্রণ জানানো আর দলেরই সঙ্গী দলের সঙ্গে আলোচনা করা অন্য বিষয়। মমতা বলছেন, কোনও আলোচনা হয়নি। কংগ্রেস কি শরিক মনে করে তৃণমূলকে? সিপিএম মনে করে? সিপিএম যদি রাজ্যে তৃণমূলের সঙ্গে জোট করত তাহলে কোনওভাবেই মানুষের বিশ্বাস অর্জন করতে পারত না। বামেরা বরাবর বলে এসেছে যারা তৃণমূল তাহাই বিজেপি। তাহলে ইন্ডিয়া জোটে একত্রে মোদি বিরোধিতার নামে কাজের কাজ কী হচ্ছে? সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলছেন, তৃণমূল ন্যায় যাত্রায় থাকলে বাম প্রতিনিধি থাকবেন। অর্থাৎ তৃণমূলের সঙ্গে মুখ দেখাদেখি নেই। তাহলে ইন্ডিয়া জোট?
মোদি নেহি তো কৌন? মল্লিকার্জুন খাড়্গে? ইন্ডিয়া জোটে তামাম প্রবীণ রাজনীতিবিদ রয়েছেন। নীতিশ কুমারের মতো মুখ এই সিদ্ধান্ত মেনে নেবেন? তাহলে দেখা যাচ্ছে, যত দল, তত মত! যত মত তত পথ! কোনও পথই অন্যের সঙ্গে মিশতে রাজি নয়। না তো প্রধানমন্ত্রী মুখ, না তো আসন ভাগাভাগি- কোনওক্ষেত্রেই যেখানে ইন্ডিয়া জোট একমত হতে পারছে না সেখানে নির্বাচন অবধি জোট টিকবে তো?