কেউ বলে বোহেমিয়ান, কেউ বলে মদ্যপ! আড়ালে আছেন অন্য এক শক্তি
Shakti Chattopadhyay: যদিও নিজের কমফর্ট জোন ছেড়ে কোনও দিন বেরোননি, কিন্তু তাঁর কবিতা আমাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় তাঁর নেশাগ্রস্ত গোলোকধাঁধার জগতে।
হেমন্তকাল এলেই আমার অনেককিছুর সঙ্গে শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কথাও মনে পড়ে, শিরোনামে সামান্য পাল্টে লেখা তাঁর অমোঘ লাইনটির জন্য, প্রসঙ্গত শক্তির জন্মও হেমন্তকালে। শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা নিয়ে কোনদিন লিখব ভাবিনি। এই লেখাটি ঠিক কবিতা নিয়ে লেখাও নয়, শক্তির একটি কবিতার বইকে পড়তে পড়তে তাঁর সময়ের প্রেক্ষিতে আরেকবার তাঁকে বুঝে নেওয়া। অবশ্য শক্তির কবিতার বই আমি খুব বেশি পড়িনি। যে কয়েকটি পড়েছি, তার ভিত্তিতেই ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করছি। গত শতকের এবং এই শতকেরও জনপ্রিয় আধুনিক রোম্যান্টিক কবি শক্তি ছিলেন এক বিস্ময়। আমি যখন কলেজে ফার্স্ট ইয়ারে, তখন আমার এক বন্ধুর হাতে একটি কবিতার বই দেখি, নাম ‘ধর্মে আছো জিরাফেও আছো’। এরকম অদ্ভুত কবিতার বইয়ের নাম তার আগে শুনিনি, গদ্যের বইয়ের নামও শুনেছি কি? না বোধহয়। বইটি প্রায় কেড়েই নিয়ে আসি তার কাছ থেকে, নামের কারণে। বলে রাখা ভালো, বন্ধুকে আর ফেরত দিইনি বইটি, কবিতার কারণে।
আরও পরে শুনলাম ‘ধর্মে আছো জিরাফেও আছো’ বাক্যবন্ধটি নাকি আসলে একটি প্রবাদ।
তার উৎস হলো এই: জয়পুরের মহারাজ একবার জাহাজে করে আফ্রিকা থেকে একটি জিরাফ আনান তাঁর চিড়িয়াখানার জন্য। এইরকম অদ্ভুতদর্শন বিশাল আকৃতির জীবের কথা জয়পুর কেন, আশপাশের কেউ কখনও শোনেনি, দেখা তো দূরের কথা। জয়পুর এবং আশপাশ থেকে দলে দলে মানুষ সেই চিড়িয়াখানায় ভিড় জমাত জিরাফ দেখতে। প্রতিবেশী দেশীয় রাজারা সম্ভবত ঈর্ষান্বিত হয়েই কিছু ধর্মীয় গোঁড়া হিন্দু পণ্ডিত ও মুসলমান মৌলবীদের মাধ্যমে রটিয়ে দিল যে, এইরকম অদ্ভুত দর্শন জন্তুর উল্লেখ হিন্দু বা মুসলমান, কোনও ধর্মগ্রন্থে কোথাও নেই। তাই এই জন্তুটি ঈশ্বরের সৃষ্টি নয়, এটা নিশ্চয় শয়তানের সৃষ্টি। একে দেখাও পাপ। জিরাফ দেখলে তাকে নরকে বা দোজখে যেতে হবে। এই ফতোয়াতে দর্শনার্থীর সংখ্যা প্রথম চোটে অনেকটা কমে গেলেও আস্তে আস্তে আবার দু'-একজন করে আসতে লাগল। মানুষের কৌতূহলের জোর ধর্মীয় ফতোয়ার জোরের থেকেও শক্তিশালী। তখন জয়পুরের মহারাজ একটু চালাকি করে রাতের দিকেও অনেকক্ষণ চিড়িয়াখানা খোলা রাখার ব্যবস্থা করলেন। ক্রমশ দেখা গেল, যেসব পণ্ডিত বা মোল্লা দিনের বেলায় জিরাফ-বিরোধী ফতোয়ার কথা মন্দিরে-মসজিদে ভক্তদের বোঝায়, তারাই আবার রাতের বেলা চুপিচুপি সপরিবার জিরাফ দেখতে চিড়িয়াখানায় যায়। এসব ভণ্ড ধর্মীয় মৌলবাদীদেরই জয়পুরের লোকরা বলত, এই ব্যাটারা দিনের বেলায় ধর্মে আছে, রাতের বেলায় জিরাফে। বলা বাহুল্য, ফতোয়াও উঠে গেল।
আরও পড়ুন: কেউ মদ্যপান করে উন্মত্ত, কেউ গৃহস্থের সামনে অপ্রকাশ্য! কালীতন্ত্রে কালীর নানা রূপ
বইটি প্রকাশ হয় ১৯৬৫ সালে। ৭৪ পাতার বইটিতে মোট ৮৬টি কবিতা আছে, না কি ৮৫টি? এই বইয়ের যে কবিতাটি আমাকে সবচেয়ে টেনেছিল, সেটি হলো:
আমি স্বেচ্ছাচারী
তীরে কি প্রচণ্ড কলরব
‘জলে ভেসে যায় কার শব
কোথা ছিলো বাড়ি?’
রাতের কল্লোল শুধু বলে যায়– ‘আমি স্বেচ্ছাচারী’।
সমুদ্র কি জীবিত ও মৃতে
এভাবে সম্পূর্ণ অতর্কিতে
সমাদরণীয়?
কে জানে গরল কিনা প্রকৃত পানীয়
অমৃতই বিষ!
মেধার ভিতর শ্রান্তি বাড়ে অহর্নিশ।
তীরে কী প্রচণ্ড কলরব
‘জলে ভেসে যায় কার শব
কোথা ছিলো বাড়ি?
রাতের কল্লোল শুধু বলে যায়– ‘আমি স্বেচ্ছাচারী’। [ধর্মে আছো জিরাফেও আছো/ শক্তি চট্টোপাধ্যায়] এই বইটি প্রকাশের আগে পর্যন্ত শক্তির জীবনের বাঁকবদলগুলো দেখে নেওয়া দরকার। শক্তির জন্ম ২৫ নভেম্বর, ১৯৩৩। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার জয়নগরে, বেঁচে থাকলে তাঁর বয়স হতো ৮৯। ১৯৪৮ সালে শক্তি কলকাতার বাগবাজারে আসেন এবং মহারাজা কাশিমবাজার পলিটেকনিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে ভর্তি হন। ১৬ বছর বয়সে স্কুলেরই কোনও শিক্ষকের দায়িত্বে মার্কসবাদে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। ১৯৫১ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করে শক্তি সিটি কলেজে বাণিজ্য বিভাগে ভর্তি হন, এই বছরই তিনি কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিআই) সদস্য হন। ১৯৫৩ সালে প্রি-ইউনিভার্সিটি পরীক্ষা পাশ করে তিনি বাংলা সাহিত্যে অনার্স নিয়ে প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন। ১৯৫৬ সালে বেকার শক্তি তাঁর মা ও ভাইয়ের সঙ্গে উল্টোডাঙায় একটি বস্তিতে চলে যান। সেসময়ে তিনি সম্পূর্ণরূপে তাঁর ভাইয়ের স্বল্প আয়ের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন, এই বছরই তাঁর কবিতা ('যম') বুদ্ধদেব বসু সম্পাদিত ‘কবিতা’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়, একই সঙ্গে তিনি ‘কৃত্তিবাস’ পত্রিকায় লিখতে শুরু করেন এবং ওই গোষ্ঠীর একজন হয়ে পড়েন। দারিদ্রের কারণে শক্তি পড়াশোনা বন্ধ করে দেন, ত্যাগ করেন প্রেসিডেন্সি কলেজ।
একটি ছেলে ১৬ বছর বয়সে মার্কসবাদে আগ্রহী হয়ে উঠছে, আর ১৮ বছর বয়সে সে কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হচ্ছে এবং ২৩ বছর বয়সে অর্থাভাবে সে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে কবিতা লেখা শুরু করছে ও ১৯৫৮ সালে, ২৫ বছর বয়সে, কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ ত্যাগ করছে।
১৯৫৭ সালে শক্তি চাঁইবাসা চলে যান বন্ধু সমীর রায়চৌধুরীর কাছে। সমীর তখন চাকুরিসূত্রে ওখানে থাকতেন। বেকার শক্তি সমীরের ওখানে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত থেকে যান। এই সময়টা তাঁর লেখার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা পর্ব হয়েছিল, অনেক পরে আমি তা জানতে পারি। শক্তির প্রথম বই ‘হে প্রেম হে নৈঃশব্দ্য‘ ১৯৬১ সালের মার্চে প্রকাশ হয়। ওই বইয়ের মনোযোগী পাঠকমাত্রেই চিনবেন প্রকৃতিপ্রেমিক, রোম্যান্টিক কবি শক্তিকে।
মার্চে এই বই প্রকাশ হওয়ার ৮ মাসের মাথায় শক্তি হাংরি আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন, যা তাঁর রোম্যান্টিক প্রেমিক চরিত্রের সঙ্গে বেমানান। হতে পারে, শক্তি রোম্যান্টিকতার অসাড়তা বুঝে হাংরিদের দর্শনে আস্থা রাখেন। ১৯৬১ সালের নভেম্বরে মলয় রায়চৌধুরী হাংরি আন্দোলনের একটি ইশতেহার বা বুলেটিন প্রকাশ করেন এবং যে চারজন কবিকে হাংরি আন্দোলনের জনক মনে করা হয়, তাঁদের মধ্যে শক্তি চট্টোপাধ্যায় অন্যতম। অন্য তিনজন হলেন সমীর রায়চৌধুরী, দেবী রায় ও মলয় রায়চৌধুরী। শক্তি প্রায় ৫০টি হাংরি বুলেটিন প্রকাশ করেছিলেন। ১৯৬২ সালে বিনয় মজুমদারের কাব্যগ্রন্থের আলোচনায় শক্তি রাষ্ট্র করলেন যে, বিট বা এ্যাংরি নয়, এদেশে যদি কিছু চালাতে হয়, তো সেটা হবে হাংরি, ক্ষুধার্ত প্রজন্মের আন্দোলন। ১৯৬১ থেকে ১৯৬৩ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত হাংরি সাহিত্য আন্দোলনে শক্তির ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ, প্রায় প্রতিটি বুলেটিনে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হতো। কিন্তু ১৯৬৩-র শেষে শক্তি হাংরিদের সঙ্গ ত্যাগ করেন মতান্তরের কারণে এবং ফিরে যান তাঁর পুরনো গোষ্ঠী, ‘কৃত্তিবাস’ পত্রিকায়।
১৯৬৫ সালে শক্তির দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘ধর্মে আছো জিরাফেও আছো’ প্রকাশিত হয়। এই বইটি পড়লে বোঝা যায়, শক্তি ফিরে গেছেন তাঁর ছন্দের স্বাচ্ছন্দ্যে, আশ্রয় নিয়েছেন প্রাকৃতিক, রোম্যান্টিক ও প্রেমিক ভাবমূর্তিতে। হাংরি সাহিত্যদর্শন তাঁর হজম হচ্ছিল না। নতুন কিছু করার ঝোঁকে তিনি হাংরিদের দর্শনে বিশ্বাসী হয়েছিলেন সাময়িকভাবে, পরে বুঝেছিলেন এটা তাঁর জায়গা নয়।
এই বইটিতেই শক্তির ‘অবনী বাড়ি আছো’ কবিতাটি আছে। কবিতাটি পাঁচ মাত্রার মাত্রাবৃত্ত ছন্দে লেখা।
দুয়ার এঁটে/ ঘুমিয়ে আছে/ পাড়া ৫+৫+২
কেবল শুনি/ রাতের কড়া/ নাড়া ৫+৫+২
‘অবনী বাড়ি/ আছো?’ ৫+২
শক্তি এই কবিতাটি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পারফর্মারের মতো পাঠ করে এটিকে জনপ্রিয় করে তোলেন। শুনেছি, মদ্যপান করে কফি হাউজের টেবিলের উপর দাঁড়িয়ে কবিতাটি পাঠ করতেন, জনপ্রিয় করে তোলার জন্য, বোহেমিয়ান ও মদ্যপ কবি হিসেবে শক্তি তাঁর পাবলিক ইমেজ তৈরি করেছিলেন। এই বইটি নিয়েই কথা বলছি, কারণ তাঁর দ্বিতীয় বইটিতেই শক্তি কবি হিসেবে তাঁর গন্তব্য স্থির করে ফেলেছিলেন। এই বইটিতেই নিজের কবিজীবনের মানচিত্র এঁকে ফেলেছিলেন, বুঝেছিলেন, আমজনতার কাছে কবিখ্যাতি পেতে গেলে ছন্দই সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম। কবি হিসেবে যে জনপ্রিয়তা শক্তি পেয়েছেন, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল আর জীবনানন্দর পর আর কেউ পেয়েছেন কি? মনে হয়, না।
১৯৬১-র নভেম্বর থেকে ১৯৬৩-র ডিসেম্বর– এই হাংরি পর্ব শক্তির কাছে এক তিক্ত অভিজ্ঞতা। নতুনত্বর ঝোঁকে হাংরিদের সঙ্গে জুটে পড়ে কিছুদিন পর তিনি এই সাহিত্য-দর্শনের সঙ্গে নিজের খেই হারিয়ে ফেলেন। তাঁর ক্লাসিক্যাল রাবীন্দ্রিক কবিচরিত্রই তাঁকে ওই পথ থেকে ফিরিয়ে আনে। তাই তিনি আলোচ্য বইটির উৎসর্গপত্রে লিখেছেন, ‘আধুনিক কবিতার দুর্বোধ্য পাঠকের হাতে’, আধুনিক বাংলা কবিতার যে উত্তরাধুনিক যাত্রাপথ হাংরি আন্দোলনের কবিরা তৈরি করছিলেন, শক্তি তা বুঝতে পারেননি বা বুঝতে চাননি। আধুনিক কবিতার যুগ যে দ্রুত শেষ হয়ে আসছে, তা বুঝেও বাস্তবকে প্রত্যাখ্যান করে তিনি পাঠককেই দুর্বোধ্য বলছেন, বোধহয় সেই সময় যে পাঠক আধুনিক কবিতাকে ত্যাগ করে হাংরিদের কবিতার পাঠক হয়ে উঠছে, তাকেই বলেছেন।
পরবর্তীকালে যখন উনি সমসময়ের সঙ্গেও খেই হারিয়ে ফেলেছেন, তখন, ১৯৮৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ‘দেশ’ পত্রিকায় এক সাক্ষাৎকারে, তিনি তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক খ্যাতির ছন্দের বারান্দা থেকে নিচের রাস্তায় জড়ো হওয়া কবিদের দিকে প্রশ্ন তুলেছেন, ‘এতো কবি কেন’? উনি বুঝতেই পারেননি, নিজেকে জনপ্রিয় করে তোলার যে খেলা উনি খেলেছিলেন, সেই খেলাতেই শত শত কবি উঠে এসেছেন, এখন কথা হলো, সবাই শক্তির নিয়মে খেলবেন কেন? তাঁদেরও নিজস্ব নিয়ম আছে খেলার।
শক্তি প্রশ্ন তুলেছিলেন, ‘আজকাল বেশির ভাগ তরুণ কবি ছন্দ জানে না।' এই মন্তব্য নিয়েও অনেক বিতর্ক হয়েছিল। লিটল ম্যাগাজিন ‘পুনর্বসু’-র [বসন্ত, ১৩৯৪] সংখ্যায় শক্তির এই মন্তব্যের বিরুদ্ধে অনেকে প্রতিবাদ করেন, প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়, কালীকৃষ্ণ গুহ, রণজিৎ দাশ, তুষার চৌধুরী ও পার্থপ্রতিম কাঞ্জিলাল। পার্থপ্রতিম তাঁর প্রবন্ধে শক্তির কবিতার উদ্ধৃতি দিয়ে দেখান যে, শক্তিরও ছন্দ ভুল হয়েছে।
এতসবের পরেও শক্তি এক বিস্ময়কর কবিপ্রতিভা। যদিও নিজের কমফর্ট জোন ছেড়ে কোনও দিন বেরোননি, কিন্তু তাঁর কবিতা আমাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় তাঁর নেশাগ্রস্ত গোলোকধাঁধার জগতে। দু'টি কবিতার কথা বলতে হয়, ১) ‘তুমি আছো– ভিতের উপর আছে দেয়াল’ [ঈশ্বর থাকেন জলে], যতিচিহ্নহীন এই দীর্ঘ কবিতাটি পড়ে আমার মনে হয়েছে, এরকম এনগেজিং ক্যাওটিক কবিতা খুব কমই পড়েছি। দ্বিতীয় কবিতাটি হলো, 'ভয় আমার পিছু নিয়েছে’ [সুন্দর রহস্যময়], ৯ পৃষ্ঠার এই দীর্ঘ কবিতাটি আদ্যোপান্ত নগরবন্দি এক হা-ক্লান্ত কবির প্রকৃতির কাছে ফিরে যাওয়ার আর্তি, সে বলছে, যে, একমাত্র প্রকৃতিই আমাকে এই ভয় থেকে মুক্তি দিতে পারে, যে ভয়ের জন্ম দিয়েছে এই সভ্যতা। সম্প্রতি ক্লাইমেট চেঞ্জ নিয়ে গ্রেটা থুনবার্গ-হুজুগে মেতে ওঠা বাঙালিকে বলব সময় পেলে ১৯৮০ সালে লেখা শক্তির এই কবিতাটি পড়তে।
শক্তির ‘চতুর্দশপদী কবিতাবলী’-র কবিতাগুলোর মধ্যেও আছে শ্লেষ, সুররিয়াল উড়ান, আত্মধ্বংসের কথা। এই বইতে আমার অন্যতম প্রিয় সনেটটি সম্পূর্ণ উদ্ধৃত করে লেখাটি শেষ করতে চাই।
৩৩
চূড়ান্ত সঙ্গম করে কুকুরেরা। সমসাময়িক
নগরে, বৃষ্টির দিনে, নরনারী পুত্রার্থে ধেয়ায়
দোতলার লাল মেজে হাঁটুতে বিস্তৃত করে বল
অভ্যাসবশত মদ্যপান হয় রতিক্রিয়া-শেষে।
এ-বছর শীতকালে কলকাতায় মৌসুমী- শিল্পের
প্রদর্শনী হয়েছিলো, ডালিয়ার-চন্দ্রমল্লিকার
আখাম্বা গতর কেড়ে নিয়েছিলো আদি পুরস্কার
কুচকাওয়াজ-অন্তে গাইলো পুলিশেও
রবীন্দ্রসঙ্গীত!
তবু ন্যূনতম কিছু কবিতাও লেখা হতে থাকে
‘প্রতিপ্রাপকতা’ নাম্নী শব্দ নিয়ে করে না তোলপাড়
এইসব লেখকেরা। এইসব লেখকেরা, হায়
বেশ্যার নিকটে গিয়ে বলিল না, সম্ভ্রম উঠাও
দেখি হে তদবির-ভরা দেহখানি– কিংবা কম্যুনিস্ট
পার্টিতে যোগ দিলে পাবে পুরুষানুক্রম যজমানি!