নারী-পুরুষের মিলনে জন্মাননি! খোদ ঈশ্বর প্রেরিত দূত মোদি! প্রধানমন্ত্রীর কথা বিশ্বাস করেন?
Modi Messenger of God: মোদি বলছেন, নারী-পুরুষের মিলনে, মানে শুক্রাণু ডিম্বাণুর যে জটিল খেলায় যুগে যুগে মানুষ এই ধরাধামে জন্মেছে, তাঁর জন্ম সেভাবে হয়নি!
দলের নেতা সম্বিত পাত্র সম্প্রতি বলেছেন, জগন্নাথদেব খোদ মোদির ভক্ত! তা নিয়ে বেশ খানিক খিল্লি-খেউড় হওয়ার পরে সম্বিত বলেছেন, নেহাতই মুখ ফসকে বলে ফেলেছেন ও কথা। কিন্তু নরেন্দ্র মোদি নিজেই এই ভক্ত-ভগবানের দ্বন্দ্ব ঘুচিয়ে দিয়েছেন। ২২ মে উত্তরপ্রদেশে ভারতীয় জনতা পার্টির প্রচারে গিয়ে নিজেকে কোন আসনে তিনি রাখেন, দেশের মানুষকেই বা কী ভাবেন তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন। মোদি বলে দেন, “যারা ভোট দেবে তারা আমার ভালো ভালো কাজের পুণ্যের ভাগ পাবে।" এখানেই শেষ নয়। মোদি বলছেন, নারী-পুরুষের মিলনে, মানে শুক্রাণু ডিম্বাণুর যে জটিল খেলায় যুগে যুগে মানুষ এই ধরাধামে জন্মেছে, তাঁর জন্ম সেভাবে হয়নি!
শিশুকালে অনেক সন্তানকেই বাবা-মা মজা করে বলে থাকে, “তোকে ঠাকুর এসে রেখে গেছিল" বা "আকাশের এক পরী এসে তোকে দিয়ে গেছিল"। বড় হতে হতে বাচ্চারা বইপত্র, ভিডিও, গল্পগাছা শুনতে শুনতে মজাটা ধরেই ফেলে। মোদি সেই মজাকেই বাস্তব করে দিয়েছেন। তাঁর সন্তানসম প্রজাদের তিনি বোঝাতে চাইছেন তাঁকে সত্যিই এসে কেউ রেখে গেছিল। কেউ মানে অপ্সরা, পরী-টরী না। খোদ ভগবান! নিউজ ১৮-এর একটি সাক্ষাত্কারে গঙ্গার বক্ষে মোদি গত ১৪ মে বারাণসী লোকসভা কেন্দ্র থেকে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আগে, এমন সব কথা বলেছেন, যা হজম করা বেশ কষ্টসাধ্য! মোদি বলছেন, তিনি "জৈবিকভাবে জন্মগ্রহণ করেননি"। মোদি বলছেন, “যতদিন মা বেঁচে ছিল, আমার মনে হতো সত্যিই বায়োলজিক্যালি আমাকে জন্ম দেওয়া হয়েছে। মায়ের মৃত্যুর পর, এই সমস্ত অভিজ্ঞতা একজোট করে আমি দেখেছি এবং আমি নিশ্চিত হয়েছি, আমি ভুল হতে পারি, আলোচক, বামপন্থীরা তো আমাকে শেষ করে দেবে, আমার চুল ছিঁড়ে নেবে… তবু আমি বলব, আমি নিশ্চিত ঈশ্বরই আমাকে পাঠিয়েছেন। এই শক্তি জৈবিক কোনও উৎস থেকে আসেনি, এই শক্তি ঈশ্বর আমাকে দিয়েছেন, তিনিই আমাকে হৃদয়ও দিয়েছেন, অনুপ্রেরণাও দিয়েছেন। তিনিই আমাকে সংগ্রাম করার শক্তি দিয়েছেন। আমি একটি যন্ত্র মাত্র। সেই কারণেই আমি যখনই কিছুর চেষ্টা করি তখন আমার মনে হয় ঈশ্বর চাইছেন এটা আমি করি।"
আরও পড়ুন- আপনার-আমার টাকায় ‘মোদি কি গ্যারান্টি’ বিজ্ঞাপন! ভোটের প্রচারে কত কোটি খরচ জানেন?
এই লম্বা ভাববচনটি মোদি কীসের প্রেক্ষিতে বললেন? যে সাংবাদিক এই সাক্ষাৎকার নিচ্ছিলেন তিনি প্রশ্ন করেছিলেন, "আপ থকতে কিঁউ নহি?" এই একই সাংবাদিক পাঁচ বছর আগেও এই একই প্রশ্নই করেছিলেন। মোদি এর আগেও নিজের 'ঐশ্বরিক' রূপ বহুবার দাবি করেছেন কিন্তু এবার ৪০০-পারের লক্ষ্যে তিনি প্রায় সেক্রেড গেমসের নওয়াজউদ্দিনের মতোই বিশ্বাস করে বসেছেন, "কভি কভি লগতা হ্যায় আপুন খুদ হি ভগওয়ান হ্যায়!”
কংগ্রেসের সাংসদ জয়রাম রমেশ মোদির এমন দাবিকে "অভূতপূর্ব মাত্রার বিভ্রম ও অহংকার' বলছেন। বলছেন, এটি আসলে মোদির আসন্ন পরাজয়ের চিহ্ন। কিন্তু একজন প্রধানমন্ত্রী এমনিতেই যথেষ্ট ক্ষমতার অধিকারী। খামোখা নিজেকে ভগবানের রূপ হিসেবে কেনই বা তুলে ধরতে হচ্ছে তাঁকে?
অযোধ্যায় রাম মন্দিরের প্রাণপ্রতিষ্ঠার পর থেকেই এই ভূমিকা যেন বেশি করে দেখা যাচ্ছে। রামলালার প্রাণ প্রতিষ্ঠায় মোদি পুরোহিতের ভূমিকা নিয়েছিলেন। তাতে শঙ্করাচার্যদের কেউ কেউ খাপ্পা হলেও থেকে তাতে মোদি পাত্তাও দেননি। কর্ণাটক বিধানসভা নির্বাচনে মোদি বলেছিলেন, ভোটারদের বজরংবলীর নামে বোতাম টিপতে হবে। কংগ্রেস ২০২৩ সালের মে মাসে বিজেপিকে ব্যাপকভাবে হারিয়েছিল।
আরও পড়ুন- মোদির হাতেই ভারতের রাশ নাকি ক্ষমতায় এবার অন্য কেউ! কী বলছে প্রশান্ত কিশোরের অঙ্কের খাতা?
কিন্তু ভগবানের নামে ভোট চাওয়া এক জিনিস আর নিজেকে ঈশ্বর বলা অন্য জিনিস। মোদি জানেন, ভগবানের নামে ভোট টানা সহজ। যে মানুষদের ভোট তিনি চাইছেন নিজেকে ঈশ্বর বলে, তাঁদের কাছে এমনিতেই তাঁর গ্রহণযোগ্যতা আছে। সেটুকু নিশ্চিত হওয়া কাম্য শুধু। এবার বিবিধ আচরণে মোদি প্রমাণ করেছেন তিনি যে ৪০০ পারের কথা বলেছেন, তার ধারেকাছে যেতে কতটা মরিয়া তিনি। নাহলে এই চন্দ্রযানের দেশে, এই ২০২৪ সালে এসে কাউকে নিজেকে ঈশ্বরের প্রেরিত দূত বলতে হয়! মোদির ধামাধারীরাও ক্ষমতাকে প্রশ্ন করতে ভয় পান, তাই তাঁর দেশের হাফদেবতা প্রধানমন্ত্রীকে মাথায় তুলে রাখতেই তারা ব্যস্ত। গণতন্ত্র বা প্রজাতন্ত্রের মৃত্যু না ঘটলে একজন প্রধানমন্ত্রী এই কথা কখনই বলতে পারেন না। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে নতুন সংসদ ভবনে তাঁর প্রথম বক্তৃতায়, মোদি প্রায় একই ধরনের বিবৃতি দিয়েছিলেন যে ঈশ্বর তাঁকে মহিলা সংরক্ষণ বিল বাস্তবায়নের জন্য বেছে নিয়েছেন। “অটল বিহারী বাজপেয়ীর শাসনামলে, মহিলা সংরক্ষণ বিল বেশ কয়েকবার পেশ করা হয়েছিল কিন্তু বিলটি পাস করার জন্য যথেষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল না। স্বপ্নটা অসম্পূর্ণ থেকে যায়। সেই কাজটি সম্পূর্ণ করার জন্য সম্ভবত ঈশ্বর আমাকেই বেছে নিয়েছিলেন," বলেছিলেন 'ঈশ্বরের দূত' মোদি। ঈশ্বর যখন নির্বাচনী লড়াইয়ের শেষ তাস হয়ে ওঠে তখন ধারণা করে নেওয়াই যায়, এই সাম্রাজ্য পতনের পদধ্বনি শুনছে। কোনও ঈশ্বরনামেই তার রক্ষা সম্ভব নয়।
দ্রাবিড় মুনেত্র কাজগম নেতা এ রাজা বলেছেন, অনেকেই এখন বুঝতে পেরেছেন যে পেরিয়ার কেন বলেছিলেন "ঈশ্বর নেই"। পেরিয়ার বলেছিলেন, "কোনও দেবতা নেই, দেবতা নেই এবং কোনও দেবতা নেই। যে ঈশ্বরের উদ্ভাবন করে সে মূর্খ, যে ঈশ্বরের পূজা করে সে বর্বর।"