যৌনতার খেলনা নয়, উন্মাদনার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হতো 'রেক্টাল ডাইলেটর'?
Rectal Dilator: রেক্টাল ডাইলেটরের প্যাকেটে বড় বড় করে উল্লেখ করা রইত, চিকিৎসকের তত্ত্বাবধান ছাড়া ৮ বছরের কম বয়সের কারও এসব ব্যবহার করা উচিত নয়।
জলে ডোবা মানুষদের বাঁচাতে, তাঁদের তুলে এনে বুকে সঠিক জায়গায় চাপ দিয়ে ফুসফুস সচল করা বা মুখে মুখ দিয়ে পাম্প করা খুব সাধারণ অভ্যাস। সাধারণত, খুব বেশি জল চলে না গেলে এই পদ্ধতিতে মানুষ সাড়া দেয়। তবে এই যদি আপনি ১৮ শতকে জন্মাতেন, মুখের বদলে বিষয়টা হয়ে যেত পায়ু! না অবশ্যই সেখানে মৌখিক কোনও পাম্পিং কাজ করত না, তবে চিকিৎসকরা পায়ুছিদ্র দিয়ে এক অদ্ভুত জিনিস প্রবেশ করিয়ে জলে ডোবা মানুষদের বাঁচাতেন। শুনতে ভয়াবহ এবং ততোধিক অস্বস্তির হলেও একথা সত্য যে, ১৮ শতকের চিকিত্সকরা জলে ডোবা মানুষদের মলদ্বার দিয়ে একটি পাইপ ঢুকিয়ে তাতে তামাকের ধোঁয়া প্রবেশ করিয়ে প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টা করতেন!
এবার আরও গভীর সত্যে আসা যাক! এই মলদ্বারে তামাকের ধোঁয়া ঢোকানোর কিন্তু কোনও উপযোগিতাই ছিল না। তা সত্ত্বেও চিকিৎসকদের কাছে এই অনুশীলনটি ছিল বেজায় জনপ্রিয়! সেই সময়ে বাজার ছেয়ে গিয়েছিল এনিমা কিট-এ। জিনিসটা খানিক এযুগের বিভিন্ন সেক্স টয়ের মতোই দেখতে। এই বিদঘুটে অভ্যাসটি ১৮০০ সালের কিছু পরেই শেষ হয়ে যায়। সকলেই বুঝতে পারেন, জলে ডোবার ক্ষেত্রের এই পদ্ধতিটি সত্যিই কাজ করে না, কারণ মলদ্বার কোনওভাবেই ফুসফুসের সঙ্গে যুক্ত নয়। তবে চিকিৎসকদের কাছে কিন্তু একেবারে ফেলনা হয়ে যায়নি রেক্টাল ডাইলেটার।
আরও পড়ুন- আজকের নয়, ইতিহাস রয়েছে ভাইব্রেটারেরও
১৮৯০-এর দশকে ডাঃ ইয়ং তৈরি করলেন আইডিয়াল রেকটাল ডাইলেটর। সেই সময় কিন্তু যৌনক্রীড়ার বস্তু হিসাবে বাজারে বিক্রি হয়নি এটি বরং চিকিৎসা সরঞ্জাম হিসাবেই তা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। ওই রেক্টাল ডায়ালেটারের নির্দেশাবলীতে সাফ লেখা ছিল ব্যবহারকারীরা নিজে নিজেই এই যন্ত্র ব্যবহার করতে পারবেন।
নির্দেশাবলীতে লেখা ছিল, প্রথম উষ্ণ জলে ডাইলেটরটিকে গরম করে নিন। তারপর ডাইলেটরের বাইরে ডঃ ইয়ংয়ের পাইলোমেন্ট লুব্রিকেটরটি লাগান। একান্তই সেই লুব্রিকেটর না থাকলে ভ্যাসলিনেও কাজ চলবে এবং তারপর মলত্যাগের প্রাচীন ভঙ্গিতে বসে আলতো করে এই ডাইলেটার দেহে প্রবেশ করান যতদূর পর্যন্ত তা যায়। "এক মিনিট ধরে রাখুন। মলদ্বারের পেশীগুলি বন্ধ হয়ে যাবে এবং ডাইলেটরটিকে ধরে রাখবে। বসুন বা শুয়ে থাকুন এবং সর্বোত্তম ফলাফল পেতে এটিকে আধ ঘণ্টা বা এক ঘণ্টা দেহেই থাকতে দিন। দশ মিনিটেই উপকার টের পাবেন। পরবর্তী বৃহত্তর আকারের ডাইলেটার ব্যবহারের আগে, আপনি প্রথম যে আকারটি ব্যবহার করছেন, সেটিকেই কয়েক মিনিটের জন্য ব্যবহার করা, ঢোকানো এবং বারবার বের করাই সবচেয়ে ভালো," লেখা হলো নির্দেশাবলীতে।
রেক্টাল ডাইলেটরের প্যাকেটে বড় বড় করে উল্লেখ করা রইত, চিকিৎসকের তত্ত্বাবধান ছাড়া ৮ বছরের কম বয়সের কারও এসব ব্যবহার করা উচিত নয়। ডাঃ ইয়ং জানিয়েছিলেন, মানুষ সবচেয়ে বড় আকারের ডাইলেটরটিকে দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়তেন। পাঁচ নম্বর ডাইলেটরটি ছিল দেড় ইঞ্চি পুরু! কিন্তু মানুষ এত কষ্ট করে মলদ্বারে কিছু প্রবেশ করাবেই বা কেন? কী উপযোগিতা এই রেক্টাল ডাইলেটরের?
আরও পড়ুন- “জি-স্পটটা কোন দিকে?” সঙ্গিনীকে যৌনসুখ দিতে যা খুঁজছেন, তা কি আদৌ আছে?
চিকিৎসকরা বলতেন, যে সব মানুষরা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ভুগছেন, এই রেক্টাল ডাইলেটর তাঁদের জন্য আশীর্বাদ! মলত্যাগ নিয়ন্ত্রণকারী পেশিগুলিকে শক্তিশালী করে এই ডাইলেটর। সেই সময় মানুষ যে এই বস্তুটি প্রবল ব্যবহার করেছিলেন এবং সন্তুষ্টও হয়েছিলেন তার প্রমাণ মেলে সেই সময় এই পণ্যটির দাম দেখেই। রেভারেন্ড কুক এবং এস এফ লাফবরোর বাট প্লাগের দাম ছিল ১০০ থেকে ১০,০০০ ডলারের মধ্যে!
তারপরে কোথা থেকে কী হইয়া গেল, বাজারে এই রেক্টাল ডাইলেটারের নিত্য নতুন গুণ ছড়িয়ে পড়তে লাগল! কেউ কেউ বলতে থাকলেন রেক্টাল ডাইলেটর ঘুম ভালো করে, কেউ বললেন এটি মুখের দুর্গন্ধযুক্ত নিঃশ্বাস দূর করে, ত্বকের কোমলতা ফেরায়, ব্রণ কমায়, রক্তশূন্যতা, আলস্য কমায়, অনিদ্রা, অ্যানোরেক্সিয়া, মাথাব্যথা, ডায়রিয়া, পেট ফাঁপা, ডায়রিয়া দেখুন, বদহজম, বিরক্তি সব নাকি কমিয়ে দিতে পারে এই বাট প্লাগ!
তবে এই দাবিগুলির কোনও সত্যতাই ছিল না। মার্কিন আদালতে ডাঃ ইয়ংয়ের এই রেকটাল ডাইলেটরের বিরুদ্ধে মামলা হলো। মার্কিন খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন রায় দেয়, এই সব দাবির ভিত্তি তো নেই-ই, উল্টে এই ডাইলেটর দীর্ঘকাল ব্যবহার করা হলে তা স্বাস্থ্যের পক্ষে বিপজ্জনক! এখানেই শেষ না, ডাঃ ইয়াং এক মেডিকেল জার্নালে দাবি করেছিলেন, এই বাট প্লাগ, পরে যা সেক্স টয় হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে তা নাকি পাগলামি নিরাময়েও কার্যকরী হবে! এসব জানার পরেই মার্কিন প্রশাসন সমস্ত রেক্টাল ডাইলেটর নষ্ট করে দেওয়ার নির্দেশ দেয়।